বাঘ বেড়েছে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে
ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। এর বাংলাদেশ অংশে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি। ২০১৮ সালে বন বিভাগের সর্বশেষ শুমারিতে এই সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তিন বছর আগে ২০১৫ সালের বাঘশুমারিতে দেখা গেছে, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬টি। সে হিসাবে তিন বছরের ব্যবধানে বাঘ বেড়েছে আটটি। গত বছরের বাঘশুমারির প্রতিবেদনটি বুধবার (২২ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বন ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করার কথা রয়েছে।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০০৪ সালে বাঘের পায়ের ছাপের মাধ্যমে যে শুমারি করা হয়েছিল, তখন বাঘের সংখ্যা ছিল ৪০৪টি। ২০১৫ সালের শুমারিতে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ১০৬টিতে। ওই শুমারিটি করা হয়েছিল ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে। যদিও বাঘ বিশেষজ্ঞরা বরাবরই বলে আসছেন, বাঘশুমারির জন্য বাঘের পায়ের ছাপের মাধ্যমে শুমারি করা কোনো বৈজ্ঞানিক পথ নয়। ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমেই শুধু বাঘের সঠিক চিত্র পাওয়া যায়।
বন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৬ সালে USAID BAGH প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনা কার্যক্রম শুরু করা হয়।
১ ডিসেম্বর ২০১৬ থেকে ১৪ মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত সাতক্ষীরা রেঞ্জের ১২০৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় দুইটি সেশনে ২৫৩ গ্রিডে ক্যামেরা বসিয়ে জরিপ পরিচালনা করা হয়। পুনরায় ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ থেকে ২৪ এপ্রিল ২০১৮ পর্যন্ত খুলনা রেঞ্জের ১৬৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় একটি সেশনে ৯৬টি ক্যামেরা বসিয়ে জরিপ পরিচালনা করা হয়। একইভাবে ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ থেকে ১০ মে ২০১৮ পর্যন্ত শরণখোলা রেঞ্জের ২৮৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় দুইটি সেশনে ১৮৭ গ্রিডে ক্যামেরা বসিয়ে জরিপ করা হয়।
মোট চারটি ধাপে তিনটি ব্লকে ১ হাজার ৬৫৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ক্যামেরা বসিয়ে ২৪৯ দিন ধরে পরিচালিত ওই জরিপে ৬৩টি পূর্ণ বয়স্ক বাঘ, ৪টি জুভেনাইল বাঘ (১২-১৪ মাস বয়সী) এবং ৫টি বাঘের বাচ্চার (০-১২ মাস বয়সী) ২ হাজার ৪৬৬টি ছবি পাওয়া যায়। যেহেতু সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের বিচরণক্ষেত্র ৪ হাজার ৪৬৪ বর্গ কিলোমিটার সে ক্ষেত্রে বাঘ গবেষণা ও জরিপে সর্বাধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি SECR মডেলে তথ্য বিশ্লেষণ হয়। তাতে দেখা যায়, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি।
জানা যায়, বন অধিদপ্তরের সঙ্গে চলতি বাঘ শুমারিতে অংশ গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথসনিয়ান কনজারভেশন ইন্সটিটিউটের ওয়াইল্ড টিম। আর গবেষণায় তথ্য বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবারের বাঘ জরিপ কার্যক্রমে প্রাপ্ত তথ্য আরো নিশ্চিত হতে জরিপের একটি খসড়া Wildlife Institute of India -তে পাঠানো হয়। পরে বাংলাদেশের তৈরি বাঘ বিষয়ক প্রতিবেদন সঠিক বলে মতামত দেয় ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি।
বিবিসির এক খবরে বলা হয়, সুন্দরবনই হচ্ছে এশিয়ার মধ্যে বন্য প্রাণীর বৃহত্তম আবাসভূমি। বর্তমানে সুন্দরবনে ৩৭৫ প্রজাতির বন্য প্রাণী রয়েছে। বন বিভাগের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সুন্দরবন অঞ্চলে ৪৪টি বাঘ হত্যার ঘটনা ঘটে।
সম্প্রতি আরেকটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০৭০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বাঘের জন্য কোনো উপযুক্ত জায়গা থাকবে না। কেননা, বিশ্বের তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধিসহ চোরাশিকারি ও খাদ্যাভাবের কারণে সুন্দরবনে এই প্রাণীর আবাসস্থল এখন চরম হুমকির মুখে।
এদিকে বিশ্বব্যাপী আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস। এবারের জীববৈচিত্র্য দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘আমাদের জীববৈচিত্র্য, আমাদের খাদ্য; আমাদের স্বাস্থ্য’। খাদ্যব্যবস্থা, পুষ্টি, স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন