বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন
বন্দিদশা থেকে যেভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রে আসলেন জিয়াউর রহমান
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর। অস্থির এক সময় পার করছিল বাংলাদেশ।
অভ্যুত্থান আর পাল্টা অভ্যুত্থানের আশংকায় দিন যাপন করছিলেন রাজনীতিবিদ এবং সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ঢাকা তখন গুঞ্জন আর গুজবের নগরী। সেনানিবাসের ভেতরে এক চাপা উত্তেজনা ভর করেছে সবার মাঝে। ৬ নভেম্বর সন্ধ্যার সময় ঢাকা সেনানিবাসে কিছু লিফলেট বিতরণ করা হয়। সে লিফলেট যারা পেয়েছিলেন তারা আঁচ করতে পারছিলেন যে রাতে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। ঢাকা সেনানিবাসে তখন মেজর হিসেবে কর্মরত ছিলেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, যিনি পরবর্তীতে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হয়েছিলেন। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ একটি লিফলেট তার হাতে পৗঁছায়। সে লিফলেটে সেনাবাহিনীর অফিসারদের হত্যার ইঙ্গিত ছিল পরিষ্কার।
ইব্রাহিম সে ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেছিলেন এভাবে, সে লিফলেটে লেখা ছিল, সৈনিক-সৈনিক ভাই-ভাই, অফিসারদের রক্ত চাই।
এ থেকে আমি বুঝলাম রাতে কিছু একটা হবেই হবে। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম প্রথমত নিজেকে বেঁচে থাকতে হবে, দ্বিতীয়ত: সেনাবাহিনীকে বাঁচাতে হবে। রাত ১২টা বাজতেই গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ঢাকা সেনানিবাস। ব্যারাক ছেড়ে সৈন্যরা দলে-দলে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে রাস্তায় নেমে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় সেনানিবাসের ভেতরে তখন ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। গুলির তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে কেউ কারো কথা শুনতে পাচ্ছিল না। আমি তখন সিদ্ধান্ত নিলাম এ তীব্র গোলাগুলির মধ্যেই আমাকে আমার ব্যাটালিয়নে পৌঁছতে হবে। চতুর্দিক থেকে গোলাগুলি হচ্ছিল। আমরা বুঝতে পারছিলাম না কোনদিক থেকে গুলি আসছে, বলছিলেন ইব্রাহিম।
এর আগে ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তখনকার সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বন্দি করে খালেদ মোশারফ সেনাপ্রধান হন। মূলত তার পর থেকেই পাল্টা আরেকটি অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা জোরদার হতে থাকে। ৭ নভেম্বর পাল্টা অভ্যুত্থানের প্রাণপুরুষ ছিলেন সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি পাওয়া কর্নেল মো. আবু তাহের। সাথে ছিল বামপন্থী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বা জাসদ। সে সময় কর্নেল তাহেরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন তার ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন, যিনি পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছিলেন।
১৯৭৫ সালের সে সময়টিতে আনোয়ার হোসেন ঢাকায় জাসদের গণবাহিনীর প্রধান ছিলেন। হোসেনের বর্ণনায় গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চিন্তা ছিল তাদের। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হোসেন জানিয়েছেন, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর থেকে ৬ নভেম্বর রাত পর্যন্ত অসংখ্য সভা হয়েছে। মূলত সেনাবাহিনীর সৈনিকদের সাথে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সেসব সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে সৈন্যরা একটি ১২ দফা দাবি প্রস্তুত করে। তাদের লক্ষ্য ছিল খালেদ মোশারফকে পদচ্যুত করা।
৭ নভেম্বরে পাল্টা অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা কীভাবে হয়েছিল? আনোয়ার হোসেন সে বর্ণনা দিয়েছিলেন বিবিসি বাংলার কাছে। হোসেনের বর্ণনায়, কর্নেল তাহের পরিকল্পনা করেছিলেন অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সৈন্যরা অস্ত্র হাতে রাস্তায় বেরিয়ে আসবে। তিনি সৈন্যদের বলেছিলেন প্রত্যেকে কয়েকটি অস্ত্র হাতে বেরিয়ে আসবে। আর বাইরে অপেক্ষমাণ আমাদের শ্রমিক ও ছাত্ররা সশস্ত্র হবে। এভাবেই সৈনিক জনতার অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেছিলেন কর্নেল তাহের। আমাদের লক্ষ্য ছিল অভ্যুত্থানের পর একটি বিপ্লবী কমান্ড কাউন্সিল হবে, রাজবন্দিদের মুক্ত করা হবে এবং দেশে একটা সাধারণ নির্বাচন দেওয়া হবে।
সে সশস্ত্র পাল্টা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। কর্নেল তাহেরের পরিকল্পনায় এবং জাসদের সম্পৃক্ততায় সে অভ্যুত্থান না হলে জিয়াউর রহমানের ভাগ্যে কী ঘটত সেটি বলা মুশকিল। জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার পেছনে জাসদ এবং বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার কিছু রাজনৈতিক পরিকল্পনা ছিল। তারা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে তাদের পাশে চেয়েছিলেন। জাসদ মনে করত তখনকার সেনাবাহিনীর পাশাপাশি অনেকের মাঝে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের একটি পরিচিত ছিল। সে জন্য কর্নেল তাহের এবং জাসদ ভেবেছিল জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে তাদের পাশে আনতে পারলে সেটি ইতিবাচক ফল দেবে।
জিয়াউর রহমানকে যখন বন্দি করা হয় তখন তিনি কর্নেল তাহেরকে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন যেন তাকে উদ্ধার করা হয়। কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে কর্নেল তাহের এবং জিয়াউর রহমান পরস্পরকে জানতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমান শীর্ষ সেনানায়ক ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর পক্ষে তিনি একটি স্বাধীনতার ঘোষণাও দিয়েছিলেন। সে কারণে তার পরিচিত বেশি ছিল। কর্নেল তাহের ভেবেছিলেন জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করা হলে তিনি আমাদের পাশে থাকবেন। বলছিলেন মি. হোসেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান মুক্ত হবার পর পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। যে জিয়াউর রহমানকে পাশে পাবার আশায় ছিলেন কর্নেল তাহের, সে জিয়াউর রহমান মুক্ত হয়ে ভিন্ন ইঙ্গিত দিলেন। দৃশ্যপটের সামনে চলে আসেন জিয়াউর রহমান এবং আড়ালে যেতে থাকেন কর্নেল তাহের। জিয়াউর রহমানের সে আচরণকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে মনে করে জাসদ।
৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থান কর্নেল তাহেরের নামে পরিচালিত হলেও তার কোনো বক্তব্য বা ভাষণ রেডিও-টিভিতে প্রচার হয়নি। সে কারণে জিয়াউর রহমান সাধারণ মানুষের কাছে আরো বেশি পরিচিত হয়ে ওঠেন। সেসব সৈন্য জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করতে যাচ্ছিল তাদের কাছে কর্নেল তাহেরের নির্দেশনা ছিল যে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে যেন ঢাকার এলিফেন্ট রোডে কর্নেল তাহেরের বাসায় নিয়ে আসা হয়। কিন্তু জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার পর তাকে সাথে না নিয়ে সৈন্যরা গুলি ছুড়তে-ছুড়তে এলিফেন্ট রোডে ফিরে আসে। জিয়াউর রহমানকে না দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন কর্নেল তাহের। তার মনে পাল্টা আশংকা তৈরি হয়।
আনোয়ার হোসেনের বর্ণনায়, সৈন্যরা যখন ট্রাকে করে শূন্যে গুলি ছুড়তে-ছুড়তে আমাদের বাসার সামনে এলো, তখন কর্নেল তাহের প্রশ্ন করলেন, হয়্যার ইজ জিয়া (জিয়া কোথায়)? সৈন্যরা তখন বলল- স্যার তিনি বলেছেন আপনাকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তখন তিনি বলেছিলেন, আওয়ার আপরাইজিং প্ল্যান ইজ লস্ট। আমাদের বিপ্লবের পরিকল্পনা হারিয়ে গেছে। কিন্তু ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে থাকা তখনকার মেজর সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম মনে করেন, পরিস্থিতির কারণে জিয়াউর রহমানের পক্ষে কর্নেল তাহেরের কাছে যাওয়া সম্ভব ছিল না। মুক্ত হবার পর জিয়াউর রহমান দ্বিতীয় ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি অফিসে গিয়ে অবস্থান নিলেন। ভোর ৬টার পর সেখানে উপস্থিত হন ইব্রাহিম। ইব্রাহিম বলেন, মানুষের কাছ থেকে শুনছিলাম যে জেনারেল জিয়াউর রহমানকে শহরে নিয়ে যাওয়া হবে, রেডিও স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হবে। উনি যেতে চাচ্ছেন না। একই সাথে সৈনিকরা চিল্লাচ্ছে- বাইরে যাওয়া যাবে না, বাইরে যাওয়া যাবে না। কর্নেল তাহেরের কাছে যাওয়া উচিত হবে কী-না সে বিষয়টি নিয়ে জিয়াউর রহমানের মনে বেশ দ্বিধা ছিল।
ইব্রাহিমের ভাষ্য অনুযায়ী উপস্থিত সেনা অফিসারদের পরামর্শ গ্রহণ করে জিয়াউর রহমান শেষ পর্যন্ত ক্যান্টনমেন্টের বাইরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অভ্যুত্থানের রাতে সেনাবাহিনীর বেশ কিছু অফিসারকে হত্যা করা হয়। এ পরিস্থিতির জন্য কর্নেল তাহেরর নেতৃত্বে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা এবং জাসদকে দায়ী করেন ইব্রাহীম। ৭ নভেম্বর প্রথম প্রহরে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করা হলেও বেলা ১১টার দিকে মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফকে তার দুই সহযোগী কর্নেল নাজমুল হুদা এবং লে. কর্নেল এ টি এম হায়দারসহ হত্যা করা হয়। খালেদ মোশারফ হত্যাকাণ্ডের বিবরণ একটি বইতে তুলে ধরেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন যিনি পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনার হয়েছিলেন। সে বইটির নাম বাংলাদেশ রক্তাক্ত অধ্যায় : ১৯৭৫-৮১।
সে বই থেকে কিছু অংশ তুলে ধরা হলো, ৭ নভেম্বর রাত ১২টার পর ঢাকা সেনানিবাস থেকে যখন সিপাহী বিপ্লবের সূচনা হয়, তখন খালেদ মোশারফ ও অন্যান্যরা বঙ্গভবনেই ছিলেন। এসব সংবাদ শুনে খালেদ মোশারফ কর্নেল হুদার মাধ্যমে ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক নওয়াজেশের সাথে যোগাযোগ করলে নওয়াজেশের ইউনিটে তাদের আসার জন্য বলে। কিন্তু সেটা পরে রটে যায় যে তারা আরিচা হয়ে উত্তরবঙ্গের দিকে একটি বেসামরিক গাড়িতে যাওয়ার পথে আসাদ গেটের নিকট তাদের গাড়ি বিকল হয়ে পড়লে তারা নিকটস্থ একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে কাপড় বদলিয়ে ১০ ইস্ট বেঙ্গলের দিকে হেঁটে অধিনায়কের অফিসে পৌঁছে। ভোরের দিকে জিয়াউর রহমান খালেদ মোশারফের অবস্থান জানার পর তার সাথে কথা বলেন এবং দুজনের মধ্যে কিছু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। পরে জিয়াউর রহমান নওয়াজেশকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলেন। এ কথা মরহুম নওয়াজেশ নিজেই আমাকে বলেছিলেন। নওয়াজেশ সকালে তাদের জন্য নাশতার বন্দোবস্ত করে এবং তার বর্ণনা মতে এ সময় খালেদ মোশারফ অত্যন্ত স্বাভাবিক ও শান্ত ছিলেন। তবে কর্নেল হুদা এবং হায়দার কিছুটা শঙ্কিত হয়ে উঠলে খালেদ মোশারফ তাদেরকে স্বাভাবিক সুরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বলেন। ইতিমধ্যে সেনানিবাস থেকে কিছু বিপ্লবী সৈনিক ১০ ইস্ট বেঙ্গলের লাইনে এসে সেখানকার সৈনিকদের বিপ্লবের স্বপক্ষে উত্তেজিত করতে থাকে এবং খালেদ মোশারফ ও তার সহযোগীদের হস্তান্তরের জন্য অধিনায়কের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। নওয়াজেশ উত্তেজিত সৈনিকদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এর কিছুক্ষণ পরে কিছু সংখ্যক সৈনিক অধিনায়কের অফিসের দরজা এক প্রকার ভেঙে তিনজনকেই বাইরে মাঠে নিয়ে এসে গুলি করে হত্যা করে।
মূলত ৩ নভেম্বর থেকেই সেনাবাহিনীতে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির তৈরি হয়েছিল। তখন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে মেজর হিসেবে কর্মরত ছিলেন মাহবুবুর রহমান যিনি পরবর্তীতে সেনাপ্রধান হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা। জিয়াউর রহমানের ভূমিকা নিয়ে জাসদ যে ব্যাখ্যাই তুলে ধরুক না কেন, তিনি যে সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছিলেন সেটি অস্বীকার করার উপায় নেই বলে মনে করে মাহবুবুর রহমান। ৭ নভেম্বরের কয়েকদিন পরে জিয়াউর রহমান সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি ঢাকা সেনানিবাসে সৈনিকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। অনুষ্ঠানস্থলে তিনি উপস্থিত হবার সাথে সাথে একদল সৈনিক ‘জিয়া ভাই-জিয়া ভাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। তখন জিয়াউর রহমান তাদের ধমক দিয়ে বলেন তাকে ‘ভাই’ হিসেবে সম্বোধন করা যাবে না। সেনাবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী তাকে ‘স্যার’ হিসেবে সম্বোধন করতে হবে।
জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, সে পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীতে কমান্ড প্রতিষ্ঠার জন্য জিয়াউর রহমানের এ ধরনের অবস্থান নেওয়া বেশ কঠিন এবং বিপজ্জনক ছিল। কারণ সৈনিকরা তখন বিশৃঙ্খল। কেউ কারো নির্দেশনা মানছে না। কে ঊর্ধ্বতন আর কে অধঃস্তন সে বিষয়টি কেউ আমলে নিচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি জিয়াউর রহমানের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল সামরিক বাহিনীতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা। মাহবুবুর রহমানের বর্ণনায়, জিয়াউর রহমান উল্কার মতো বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে ছুটে চলেছেন। সেখানে সৈনিকরা কেউ অস্ত্র জমা দেয় না। কেউ ক্যান্টনম্যান্টে আসে না। কেউ কাউকে মানে না। কিন্তু একেকটা জায়গায় গিয়ে তিনি কমান্ড প্রতিষ্ঠা করেছেন। জেনারেল জিয়া পরিস্থিতি যতই তার নিয়ন্ত্রণে আনতে থাকেন ততই দূরে সরে যান কর্নেল তাহের।
৭ নভেম্বরের পর দুই সপ্তাহের মধ্যেই জিয়াউর রহমান উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন। তখন থেকেই জিয়াউর রহমানের ইশারাতেই রাষ্ট্রক্ষমতা আবর্তিত হচ্ছিল। তখনই কর্নেল তাহেরের বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। যে কর্নেল তাহের জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেছিলেন, সে কর্নেল তাহেরকে কেন বিচারের আওতায় আনলেন জিয়াউর রহমান? এ নিয়ে নানা ব্যাখ্যা আছে। জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন তখনকার সেনাবাহিনীতে অফিসাররা চেয়েছিলেন কর্নেল তাহেরর বিচার হোক। সামরিক অফিসারদের এ দাবি জিয়াউর রহমানের পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না বলে মনে করেন তিনি। কর্নেল তাহেরকে বিচারের আওতায় না আনলে সেনাবাহিনীর অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যাবে বলে অনেক কর্মকর্তা মনে করতেন।
তা ছাড়া কর্নেল তাহেরর দিক থেকে আরেকটি অভ্যুত্থানের আশংকাও করছিলেন কেউ কেউ। সে প্রেক্ষাপটে গোপন সামরিক কারাগারে এক বিচারের মাধ্যমে ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেওয়া হয়। কিন্তু কর্নেল তাহেরের পরিবারের পক্ষ থেকে এক রিট আবেদনের পর ২০১১ সালে বাংলাদেশের হাইকোর্ট সে বিচারকে অবৈধ ঘোষণা করে। ৭ নভেম্বরকে বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল ভিন্ন-ভিন্ন নামে পালন করে। বিএনপির মতে এটি সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস আওয়ামী লীগ মনে করে এটি ‘মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস’। বাংলাদেশের ইতিহাসে আরো কিছু ঘটনার মতো ৭ নভেম্বরও একটি বড় রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয় হয়ে রয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন