বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় বাংলাদেশে
বজ্রপাতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যান বাংলাদেশে। প্রতিবছর বজ্রপাতে যত মানুষ মারা যান তার এক-চতুর্থাংশ মারা যান এ দেশে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বিশ্বে বজ্রপাতের পরিমাণ বেড়েছে। ২০০০ সালে যেখানে বছরের একটি নির্ধারিত সময়ে দুইবার বজ্রপাত রেকর্ড করা হয়েছে, সেখানে এখন ওই একই সময়ে তিনবার বজ্রপাত হচ্ছে।
২০১০ থেকে ২০১৫ সালে শুধুমাত্র এপ্রিল-মে মাসেই বাংলাদেশে বজ্রপাত বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। উপকূলীয় এলাকায় এর মাত্রা আরো কয়েক গুণ বেশি। বিশ্বে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয় বাংলাদেশে। সারা পৃথিবীতে যত মানুষ মারা যায় তার এক-চতুর্থাংশ মারা যায় এ দেশে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই শতাব্দীর শেষে পৃথিবীর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তখন বজ্রপাতের হার সাড়ে ১২ শতাংশ বাড়বে।
বাংলাদেশে প্রতি বছরের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত প্রতি বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ৪০ বার বজ্রপাত হয়। শুধু এপ্রিল মাসের হিসাবে দেখা যায়, দেশের ৩৫টি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে যেখানে ২০১০ সালে ৬৫৮টি বজ্রপাত রেকর্ড করা হয়েছে সেখানে ২০১৫ সালে ১২৯৫টি বজ্রপাত সংঘটিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, হিমালয়ের পাদদেশ থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত বলেই বাংলাদেশকে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের জলবায়ু বিভাগের উপ পরিচালক মো. আব্দুর রহমান বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণেই আবহাওয়ার এমন অস্বাভাবিক আচরণ। আর সারা বিশ্বের মানুষ জানে, ধনী দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশটি হচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বজ্রপাতের পরিমানের রেকর্ড থেকে জানা যায়, ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এপ্রিল মাসে বজ্রপাতের পরিমাণ আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে উপকূলে বজ্রপাত পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। ২০১০ সালে ঢাকায় এপ্রিলে বজ্রপাতের পরিমাণ ছিল ১৫ বার। ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ বারে। বগুড়ায় ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে বজ্রপাতের পরিমাণ ছিল ১৬ বার ২০১৫ সালে এর পরিমাণ ছিল ৫২ বার, শ্রীমঙ্গলে ২০১০ সালে ছিল ৬৪ বার আর ২০১৫ সালে বেড়ে ৮৯ বার। চট্টগ্রামে ২০১০ সালে বজ্রপাত হয় ৭ বার আর ২০১৫ সালে হয় ৩৯ বার, কক্সবাজারে এর পরিমাণ ১-১১ বার, হাতিয়ায় ৮-২৭ বার, কুতুবদিয়া -১৭ বার, মাইজদীকোর্ট ৭-২৬ বার, পটুয়াখালী ৭-৩১ বার, সন্দ্বীপ ১-৫১ বার, রাঙ্গামাটি ১৩-৪৮ বার, সীতাকুণ্ড ৮-২৪ বার। ফলে দেখা যাচ্ছে উপকূল অঞ্চলে ১০০ থেকে ২০০ ভাগ এমনিক কোথাও কোথাও তার চেয়েও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বজ্রপাতের পরিমাণ।
আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস জানান, ২০১৬-২০১৭ সালের তথ্য এখনো পাওয়া না গেলেও আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন, শুষ্ক মৌসুমে বজ্রপাতের পরিমান ২০১৫ সালের চাইতে বেড়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান ওয়াচ-এর ২০১০ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতির বিচারে শীর্ষ ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে প্রথমেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ।
পরিবেশবিদ আতিক রহমান বলেন, বজ্রপাত বাড়ছে। বাড়ছে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা। এ জন্য জলবায়ু পরিবর্তন একটা বড় কারণ। তবে কেন বাড়ছে এ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন। প্রয়োজন প্রতিকারের দিকে নজর দেওয়া।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সহকারী অধ্যাপক ও লরেন্স বার্কলে জাতীয় গবেষণাগারের ফ্যাকাল্টি বিজ্ঞানী ডেভিড রম্প বজ্রপাত নিয়ে গবেষণা করছেন। বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী ‘সায়েন্স’ এ প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে তিনি বলেছেন, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বজ্রপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি সম্পর্কযুক্ত। ২০০০ সালে যেখানে বছরের একটি নির্ধারিত সময়ে দুইবার বজ্রপাত রেকর্ড করা হয়েছে, সেখানে এখন ওই একই সময়ে তিনবার বজ্রপাত হচ্ছে। তাঁর হিসেবে, তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বজ্রপাতের হার বাড়ে ১২ শতাংশ। জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, অত্যধিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবহার, গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমন বৃদ্ধির কারণে গোটা বিশ্বেই বজ্রপাত বাড়ছে।
অধ্যাপক রম্প মনে করেন, সেই কারণে ভূ-ম্ললে নাইট্রোজেন অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে। এই গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ওজোন স্তর এবং মিথেনের মতো ক্ষতিকর গ্যাসও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তখন বজ্রপাতের হার কমতে পারে। তিনি আরো বলেন, একবিংশ শতাব্দীর শেষে পৃথিবীর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে বজ্রপাতের হার আরো বাড়তে পারে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন