কলম থেকে কলাম..
পিছিয়ে পড়া দলিত সম্প্রদায়কে এগিয়ে নেয়ার এখনই সময়…
রোমানদের ছিল ক্রীতদাস, স্পার্টার্নদের ছিল সেবাদাস, ইংরেজদের ছিল ভূমিদাস, আমেরিকানদের ছিল নিগ্রো, জার্মানদের ইহুদি আর হিন্দুদের আছে অস্পৃশ্য দলিতরা। ভারতীয় উপমহাদেশে দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতি জাত-পাত তথা জন্ম পরিচয় ও পেশাভিত্তিক বৈষম্য এবং তাদের ব্যাপারে সামাজিক মনোভাব সম্পর্কে দলিত আন্দোলনের নেতা ড. আম্বেদকর উচ্চারণ করেছিলেন এই অমোঘ বাণী।
গ্রামের শেষ প্রান্তে ঠিকানা হয় পিছিয়ে থাকা দলিতদের। হাটের শেষ মাথায় বসার জায়গা হয় তাদের। পিছাতে পিছাতে তারা চলে গেছে শেষ প্রান্তে। সেখান থেকেই এগিয়ে আসার পথ সৃষ্টি করতে হবে। অন্যথায় সরকারের এসডিজি ও এমডিজির বাস্তবায়নের পরিকল্পনা থমকে যেতে পারে। কেননা সমাজের একটি বিরাট অংশ দলিত সম্প্রদায়কে উপেক্ষা করে জাতীয় উন্নয়ন আশা করা যায় না। তাই সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার এখনই সময়।
দলিত নারীর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি তাদের বাসস্থান ও পয়:নিস্কাশণ সুবিধার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। দলিত জনগোষ্ঠী সাধারণত নোংরা পরিবেশে বাস করতে বাধ্য হয় এবং চরম দারিদ্র্য যেহেতু তাদের নিত্যসঙ্গী, ফলে তারা নানারকম রোগ-শোকে; যেমন-ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, পেটের পিড়া ও ত্বকের অসুখে ভুগতে থাকে। উপরন্তু নারী হওয়ার কারণে পুরুষতান্ত্রিক চর্চাও তার দুর্বল স্বাস্থ্যের কারণ হিসেবে ক্রিয়াশীল। খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার হয়। তেমনি চিকিৎসা সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে নারী হওয়া একটি প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে, যদি কেউ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যায়ও, অস্পৃশ্যতার কারণে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার হয়।
যে জনগোষ্ঠী সাধারণত রাস্তাঘাট পরিস্কার ও অন্যদের টয়লেট পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখে, পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও পয়:নিস্কাশণ সুবিধার অভাবে তাদের কলোনিগুলো থাকে সবচেয়ে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি, বল্লী ও ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের কোন গ্রামে পানির লাইন নেই। এখানে খাবার পানির একমাত্র উৎস টিউবওয়েল। একটি থেকে প্রায় ৫-১০টি পরিবার পানি সংগ্রহ করে। ফলে তারা পানি সংকটে বেশি করে ভোগে। এই পানির অভাবে তাদের পয়:নিস্কাশণ ব্যবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে দলিত নারীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়। কারণ, পানি সংগ্রহের পুরো দায়িত্ব নারীর উপর।
সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি, বল্লী ও ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের ১৩টি পাড়ার ৭৩১টি পরিবার এখনো নিরাপদ সুপেয় পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও হাইজিন সমস্যায় আক্রান্ত। আগরদাড়ি ইউনিয়নের বাবুলিয়া ঋষিপাড়া, ইন্দ্রিরা গোলদারপাড়া, চুপড়িয়া ঋষিপাড়া, রামেরডাঙ্গা ভগবানীপাড়া ও কাশেমপুর হাজামপাড়ার নারী-শিশুরা সুপেয় পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও হাইজিন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অপরদিকে বল্লী ইউনিয়নের কাঁঠালতলা ঋষিপাড়া, মুকুন্দপুর কারিকরপাড়া ও রায়পুর ভগবানীপাড়ার মানুষ নিরাপদ সুপেয় পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও হাইজিন থেকে বঞ্চিত হয়ে ভুগছেন নানা রোগে। এছাড়া ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া ঋষিপাড়া, বলাডাঙ্গা কারিকরপাড়া, মাধবকাঠি কলোনীপাড়া, আখড়াখোলা মোড়লপাড়া ও ওয়ারিয়া গোলদারপাড়ার পিছিয়ে পড়া মানুষ ভুগছেন নানা রোগে। পুষ্টিহীনতার পাশাপাশি তারা ডায়রিয়া, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, হাপানীসহ চর্মরোগে রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রায় ৪ হাজার মানুষ ব্যবহার করছেন আর্সেনিক ও আয়রনযুক্ত পানি। নলকূপের গোড়া ময়লা আবর্জনায় ভরা। এসব পরিবারের অধিকাংশ সদস্যরা স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ পায়খানা ব্যবহার করেন না। এক সময় খোলা আকাশের নিচে বনে-বাদাড়ে ঝোপের আড়ালে তারা মলত্যাগ করতেন। এখন সে অবস্থা না থাকলেও যে পায়খানা ব্যবহার করেন তা আদৌ স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ৪ থেকে ৫টি রিং স্লাব বসিয়ে তা বস্তা কিংবা কাপড় দিয়ে ঘিরে সেখানেই মলত্যাগ করেন নারী-পুরুষ ও শিশুরা। একটি পায়খানা ৩-৪টি পরিবার ব্যবহার করছেন। এলাকার অধিকাংশ মানুষ অতি দরিদ্র শ্রেণির। অন্যের ক্ষেতে খামারে কামলা খেটে সংসার চলে তাদের। গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাঁশ সংগ্রহ করে ঝুড়ি ডালা বুনে অনেকেই কোন রকমে সংসার চালান। গরীব শ্রমজীবী এসব মানুষের পক্ষে নিরাপদ পানি কিনে পান করা দু:সাধ্য। পাকা পায়খানা নির্মাণ করার সক্ষমতা নেই তাদের।
উপরোক্ত পরিস্থিতি এই জনগোষ্ঠীকে এমন এক জীবনের দিকে ঠেলে দিয়েছে, যেখানে তাদের মানবিক মর্যাদা চরমভাবে ভুলুণ্ঠিত। সামাজিকভাবে মর্যাদাহীন, অনিরাপদ ও নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত হয়ে এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে আরেক ধাপ পেছনে থাকা দলিত নারীদের বিকাশের জন্য পানি ও পয়:নিস্কাশণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে দলিতদের জীবনকে বিকাশ যোগ্য করতে হবে।
লেখক:
এসএম শহীদুল ইসলাম
সংবাদ কর্মী।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
বর্ণিল সাজে সেজেছে সাতক্ষীরার ৫৮৪টি দুর্গাপূজা মন্ডপ
সনাতন ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব (দূর্গাপূজা) কে কেন্দ্রবিস্তারিত পড়ুন
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন