নুরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন
নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পেলেন সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদা। আর চার কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ কবিতা খানম এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী।
সোমবার রাত সাড়ে নয়টায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সংবাদ সম্মেলন করে সিইসি ও চার কমিশনার নিয়োগের কথা জানান। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি তাঁদের নিয়োগ চূড়ান্ত করেছেন।
পরে রাতেই প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর মাধ্যমে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা জল্পনাকল্পনার অবসান হলো। গতবার অনুসন্ধান কমিটির প্রস্তাবের ২৪ ঘণ্টা পর নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এবার একই সংবাদ সম্মেলনে অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশ করা ১০ জনের তালিকা ও নতুন কমিশন গঠনের কথা জানানো হলো। সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনার সুযোগ না রাখতেই রাষ্ট্রপতির কাছে নাম সুপারিশ করার পর তিন ঘণ্টার মধ্যে কমিশন গঠন করা হয়।
নতুন সিইসি নুরুল হুদা বিসিএস ১৯৭৩ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে যুগ্ম সচিব থাকা অবস্থায় তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। পরে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০০৯ সালে ভূতাপেক্ষ সচিব হন। এর আগে তিনি মামলা করে আদালতের রায় পান। সাবেক এই আমলা চাকরিজীবনে ফরিদপুর ও কুমিল্লার জেলার প্রশাসক ছিলেন। এ ছাড়া যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ছিলেন। তিনি সংসদবিষয়ক সচিবালয় এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ছিলেন। এ ছাড়া বিলুপ্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র কে এম নুরুল হুদার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফলে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নুরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা অনেক বড় ও ভালো দায়িত্ব। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমসহ সবার সহযোগিতা চাই।’ তিনি বলেন, শপথ হওয়ার পর আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তী সময়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
বঙ্গভবনে নির্বাচন কমিশনের জন্য সুপারিশ করা নামের তালিকা এবং বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনার সারসংক্ষেপ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের হাতে তুলে দেন অনুসন্ধান কমিটির প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। এ সময় কমিটির অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন l ছবি: ফোকাস বাংলাগতকাল রাতে নির্বাচন কমিশন গঠনের খবর জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম বলেন, বড় দুই দলের তালিকায় তাঁর (নুরুল হুদা) নাম ছিল না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া রাজশাহীর অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ কবিতা খানমের নাম আওয়ামী লীগের তালিকায় ছিল। আরেক কমিশনার ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদারের নাম ছিল বিএনপির তালিকায়। মাহবুব তালুকদার লেখালেখির সঙ্গে জড়িত।
নতুন কমিশনার মাহবুব তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি একটি দায়িত্বশীল কাজ। আমি আমার বিবেককে জাগ্রত রেখে দক্ষতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে যথাযথভাবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করব।’
অন্য দুই কমিশনারের মধ্যে সাবেক সেনা কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন। আর রফিকুল ইসলাম ছিলেন সাবেক সচিব।
এর আগে সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি গঠিত অনুসন্ধান কমিটি ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে সুপারিশ করে। এই ১০ জনের মধ্যে সিইসি হিসেবে কে এম নুরুল হুদার নাম প্রথমে ছিল। এ ছাড়া সিইসি হিসেবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারের নামও প্রস্তাব করা হয়। ২০১২ সালেও আলী ইমামের নাম সিইসি হিসেবে প্রস্তাব করেছিল তখনকার অনুসন্ধান কমিটি।
কমিশনার হিসেবে অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশ করা আটজন হলেন মাহবুব তালুকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক জারিনা রহমান খান, সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, বেগম কবিতা খানম, পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য আবদুল মান্নান, ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের সহ-উপাচার্য ও নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিপপের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। তাঁদের মধ্যে থেকে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেন রাষ্ট্রপতি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, শিগগিরই সিইসি ও কমিশনাররা শপথ নেবেন। কাল বুধবার একজন কমিশনার বাদে বাকিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
অনুসন্ধান কমিটি সূত্র জানায়, গতকাল বিকেলে কমিটির বৈঠকে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করা হয়। সন্ধ্যা ছয়টায় এই বৈঠক শেষ হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে এই তালিকা জমা দেওয়া হয়। রাত সাড়ে নয়টার দিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সংবাদ সম্মেলন করে কমিশন গঠনের কথা জানান। রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রজ্ঞাপন জারি হয়।
এর আগে অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা সুপারিশ করা নাম নিজেরা প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা রাষ্ট্রপতিকে নাম প্রকাশের অনুরোধ জানান।
২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচন হবে এই কমিশনের অধীনে। তাই কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক মহলসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ ছিল। এর আগে অনুসন্ধান কমিটি কাদের নাম সুপারিশ করছে, তা নিয়ে দিনভর আগ্রহ-আলোচনা ছিল। এসব আগ্রহের অবসান হয় রাতে, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের তালিকা থেকেই ১০ জনের নাম প্রস্তাব করে অনুসন্ধান কমিটি। কিন্তু কোন রাজনৈতিক দল কাদের নাম প্রস্তাব করেছিল, তা প্রকাশ করেনি ওই কমিটি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া ১২৮ জনের নামের মধ্য থেকে নাম চূড়ান্ত করা হয়।
অবশ্য অনুসন্ধান কমিটির একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছে, রাজনৈতিক দলের দেওয়া নাম ও বিশিষ্ট নাগরিকদের দেওয়া পরামর্শ মাথায় রেখেই ১০ জনের নামের তালিকা তৈরি করা হয়।
গত ২৫ জানুয়ারি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের পর ছয়টি বৈঠক হয়েছে। এর মধ্যে দুই দিন বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়। আর রাজনৈতিক দল থেকে নাম পাওয়ার পর অনুসন্ধান কমিটি তিনটি বৈঠক করে। বিশিষ্ট নাগরিকেরা দলনিরপেক্ষ, সাহসী, দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করার সুপারিশ করেন। তাঁদের মত হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন হতে হবে বিতর্কের ঊর্ধ্বে, মেরুদণ্ড হতে হবে সোজা; যাতে চাপ কিংবা হুমকির মুখেও প্রভাবমুক্ত হয়ে তাঁরা কাজ করতে পারেন।
নির্বাচন কমিশন গঠনে গত ২৫ জানুয়ারি বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান করে ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। কমিটিকে ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নারীসহ ১০ জনের নামের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। অনুসন্ধান কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য শিরীণ আখতার।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন