ছোটভাইকে ‘স্বপ্নের’ মানুষ করতে চায় সাতক্ষীরার দুধ বিক্রেতা তাপস ঘোষ
নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি তাপস ঘোষ। তাই ছোট ভাই সুভাষ ঘোষের স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশায় পথের ক্লান্তি ভুলে জীবনের টানে দুর্বার গতিতে মটরসাইকেলে করে দুধ বিক্রি করছেন তিনি।
দেবহাটার উপজেলার পারুলিয়া থেকে সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে দুধ বিক্রি করেন তাপস ঘোষ। তার বয়স এখন ৩২। লেখাপড়া করেছেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। সংসারে অভাবের কারণে আর পড়ালেখা করা হয়নি তার। চার কাঠা ভিটেবাড়ি তার বাবার সম্পদ। সংসারে নুন আনতে পানতা ফুরাতো। ভালো জামাকাপড় জুটতো না। বাবা অজয় ঘোষের পেশা ছিলো দুধ বিক্রি। কিন্তু বয়সের কারণে আর পেরে উঠছিলেন না তিনি। সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে নাকাল হয়ে পড়েছিলেন অজয় ঘোষ। বাবার কষ্ট দেখে ছেলে তাপস ঘোষ চিরতরে লেখাপড়া বন্ধ করে জাত পেশায় যোগ দেয়। ১২ বছর আগে ২০০৬ সালে অষ্টম শ্রেণি পাশ করার পর আর স্কুলে যাওয়া হয়নি তার। একটি পুরাতন বাইসাইকেল আর একটি টিনের কলস নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন গাঁও গ্রামে। এ বাড়ি সে বাড়ি থেকে দুধ কিনে ২০ কিলোমিটার দূরে সাতক্ষীরা শহরে এসে বিক্রি করতেন। দিনে একবার আসতেই কষ্টে বুক ফেটে যেতো তার। ফিরতে হতো রাত ১২ টায়। বাইসাইকেলে ৩০/৪০ লিটারের বেশি দুধ আনতে পারতেন না তিনি। তাই স্বপ্ন দেখতেন যদি একটি স্কুটি (মটরসাইকেল) কেনার। তাতে দুধ বিক্রি করে বাবার কষ্ট দূর করবেন। ছোটভাই সুভাষের লেখাপড়া শেখাবেন। মাকে কিনে দিবেন নতুন শাড়ি। জীবন সংগ্রামে অপরাজিত তাপসের সে স্বপ্ন আজ হাতের মুঠোয়। স্কুটির স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। গোয়ালে গরু কিনেছেন তিনটি। ছোটভাই সুভাষ ঘোষ এবার এইচএসসি পরীক্ষায় এ গ্রেডে পাশ করেছে। অনার্স ভর্তি করানোর ইচ্ছে তার।
তাপস ঘোষ জানান- অভাব আমার লেখাপড়া কেড়ে নিয়েছিল। বাইসাইকেলে গ্রাম থেকে দুধ কিনে শহরে বিক্রি করে আবার বাড়ি ফিরতে রাত ১২টা বেজে যেতো। খুব কষ্ট হতো। ছোট ভাইয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সব কষ্ট ভুলে যেতাম। মনে মনে স্বপ্ন দেখতাম একটি স্কুটি কেনার। মাসখানেক আগে ৫২হাজার টাকা দিয়ে একটি স্কুটি কিনেছি। এখন ৪০/৫০ বাড়ি থেকে দুধ সংগ্রহ করতে পারি। দিনে তিনবার শহরে যাতায়াত করতে পারি। দৈনিক প্রায় ২০০ লিটার দুধ বিক্রি করি। যদিও রাত ১২টার আগে বাড়ি ফিরতে পারিনা। পথের শত ক্লান্তি ভুলে যাই, যখন বাড়ি যেয়ে দেখি ছোটভাই সুভাষ বই পড়ছে। তখন মনে মনে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, ‘ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু, পথে যদি পিছিয়ে পড়ি কভু’। ছোটভাইকে পড়ার টেবিলে দেখলে প্রশান্তিতে মনটা ভরে যায়। অন্তরে জ্বলে ওঠে প্রত্যাশার আলো। আমার মতো যেনো আমার ভাইকে দুয়ারে দুয়ারে দুধ বিক্রি করতে না হয়। লেখাপড়া শিখে আমার ভাই যেনো একটি চাকরি পেয়ে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারে সেজন্য আমার এ নিরন্তর প্রচেষ্টা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
বর্ণিল সাজে সেজেছে সাতক্ষীরার ৫৮৪টি দুর্গাপূজা মন্ডপ
সনাতন ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব (দূর্গাপূজা) কে কেন্দ্রবিস্তারিত পড়ুন
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন