ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ : মঙ্গলবার উপকূল অতিক্রম করতে পারে
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিন্মচাপটি ক্রমশ ঘূর্ণিঝড়ে (মোরা) রূপ নিয়েছে। এটি সরাসরি কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে রাত ১০ টার ভিতরে কক্সবাজার চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও এর পার্শবর্তী এলাকা অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস।
বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমশ উপকূলের দিকে গতিশীল রয়েছে। উপকূলে আঘাত হানার পূর্বে ঝড়টি যথেষ্ট শক্তি সঞ্চয় করবে এবং একই সাথে ক্রমশ ধীর গতিতে অগ্রসর হতে থাকবে। এজন্য উপকূলে অবস্থানকারী জেলে নৌকাসহ বসবাসকারীদের নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি উখিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাঈন উদ্দিন। এছাড়াও সরকারিভাবে কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামের ডাক্তারদের ছুটি বাতিলসহ হাসপাতাল অবস্থান করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রম করার সময় ঐসকল এলাকায় ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত থাকতে পারে। ওই সকল এলাকার উপকূল ও চরদ্বীপ স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৭ নং সতর্ক সংকেত ও পায়রা ও মংলা বন্দরকে ৫ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘুর্ণিঝড় ‘মোরা’ বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে ৫৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে, পায়রা বন্দর থেকে ৫৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ও মংলা থেকে ৫৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তর। বর্তমানে এটি উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় এর প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ ভারি বর্ষণ ও চট্টগ্রাম কক্সবাজারে পাহাড় ধস হতে পারে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলবর্তী দক্ষিণাঞ্চল। ঝড়ের মূল শক্তি দ্বারা সম্ভাব্য আক্রান্ত জেলার মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম (১০), কক্সবাজার(১১), ফেনী(১৬), নোয়াখালী(৪৭) এই চারটি জেলাসহ আশপাশের এলাকা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম(১০) ও কক্সবাজার(১১) সব থেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
দেশের উপকূলবর্তী এলাকায় সম্ভাব্য বিপর্যয় ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট সকলকে একযোগে কাজ করে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন কক্সবাজার রেড-ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহ-সভাপতি সাবেক পৌর চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আবছার।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, উখিয়াসহ কক্সবাজার জেলায় ৭নং সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তাই ঘূর্ণিঝড় মোরা আঘাত আনতে পারে এমন আশংকা করে ইতোমধ্যে পাহাড়ে ঝূঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের ও উপকূল তীরবর্তী অবস্থানকারী জেলেদের নিরাপদে সরিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা যেসমস্ত সাইক্লোন সেন্টার এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এগুলো খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও এর তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এর নাম রাখা হয়েছে ‘মোরা’।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’-র কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ‘সাত নম্বর বিপদ সংকেত’ দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। সোমবার (২৯ মে) সকালে আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
রবিবার (২৮ মে) সকাল ৯টায় এটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কি. মি. দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৪৫ কি. মি. দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৮০ কি. মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫১০ কি. মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব দিকে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি আগামী ১৮ ঘণ্টায় আরও শক্তিশালী হয়ে উত্তর দিকে প্রবাহিত হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতরের সবশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোরার ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। যা বৃদ্ধি পেয়ে ৮৮ কিলোমিটারে পৌঁছাতে পারে। সাগর উত্তাল রয়েছে।
আবহাওয়া বুলেটিনে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪/৫ ফুট বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এদিকে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছিলেন, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দফতর ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেলের তালিকা থেকে ক্রম অনুসারে ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়। নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে ‘মোরা’ (MORA)। এটি থ্যাইল্যান্ডের প্রস্তাবিত নাম।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন