গাজীপুরে ৮০ শতাংশ ভোট কেন্দ্রই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ৪২৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৩৩৭টি কেন্দ্রই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই হিসাবে গাজীপুর সিটিতে গড়ে ৭৯ দশমিক ২৫ শতাংশ ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিতে আছে। এছাড়া ৮৮টি ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিমুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
আসন্ন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ এ কেন্দ্রের তালিকা তৈরি করেছে গাজীপুর পুলিশ। ওই তালিকা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসারের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তবে গাজীপুর সিটির সাধারণ ভোটার ও বিএনপি প্রার্থী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার গাজীপুরে আইনশৃঙ্খলা সভায় নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। আগামী ২৬ জুন এ সিটিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচ বছরের ব্যবধানে এ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা বেড়েছে। গত নির্বাচনে গাজীপুরে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ছিল মোট ভোট কেন্দ্রের ৬০ শতাংশ। এবার গাজীপুরে আরও ১৯ শতাংশ কেন্দ্র ঝুঁকির তালিকায় যুক্ত হলো।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, প্রার্থী বা প্রভাবশালীদের বাড়ির কাছাকাছি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত কেন্দ্র, অতীতে যেসব ভোট কেন্দ্রে সহিংসতা হয়েছিল, যেসব ভোট কেন্দ্রে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ এবং এলাকার গোয়েন্দা তথ্যসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও প্রশাসনিক ভাষায় এসব কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র পাহারায় পুলিশ ও আনসারের ২৪ জন সদস্য মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে ১২ জন অস্ত্রধারী ও বাকি ১২ জন লাঠিসহ অবস্থান করবেন।
অপরদিকে সাধারণ ভোট কেন্দ্রে (ঝুঁকিমুক্ত) ২২ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবেন, যাদের মধ্যে রয়েছে ১০ জন অস্ত্রধারী।
এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের বাইরে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির টহল বেশি থাকবে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই বৈঠকে ভোটের আগে-পরে মোট চার দিনের জন্য গাজীপুরের ৫৭টি ওয়ার্ডে পুলিশ ও এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের ৫৭টি মোবাইল ও ২০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, র্যাবের ৫৮টি টিম ও ২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, প্রার্থীর বাড়ির কাছের কেন্দ্র, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ কয়েকটি দিক বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) ও সাধারণ কেন্দ্রের তালিকা তৈরি করেছি। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ও আশপাশের এলাকার নিরাপত্তায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হবে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের নিজ নিজ ওয়ার্ডের সবগুলো কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। জাহাঙ্গীর আলমের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের তিনটি কেন্দ্রে সাড়ে ছয় হাজার ভোটার রয়েছেন। এ ওয়ার্ডের কানাইয়ায় তার বাড়ি। আর তার বর্তমান বাসভবন ছয়দানার হারিকেন ফ্যাক্টরি সংলগ্ন। সেখানেই তিনি বাস করেন। তার বাসভবন সংলগ্ন ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে।
অপরদিকে হাসান সরকারের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১০টি কেন্দ্রে ভোটার রয়েছেন ৩৭ হাজার। এছাড়া গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র বিএনপির সহসভাপতি এমএ মান্নান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানের ভোট কেন্দ্র দুটিও ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রয়েছে।
পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, কাশিমপুর এলাকার ১ থেকে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ২৪টি কেন্দ্রের সবগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৮টি কেন্দ্রের ৬টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ২টি সাধারণ। সাধারণ কেন্দ্র দুটি সারদাগঞ্জ মেরী গোল্ড হাইস্কুলে অবস্থিত। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচটি কেন্দ্রের তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ ও দুটি সাধারণ। এ কেন্দ্র দুটি বাগবাড়ী হাক্কানিয়া সালেহীয়া আলিম মাদরাসায় অবস্থিত।
এছাড়া কাশিমপুরে অবস্থিত ৬ নম্বর ওয়ার্ড, কোনাবাড়ীর ১১ নম্বর ওয়ার্ড, বাসনের ১৩ নম্বর, ১৪ নম্বর ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড, সালনার ১৯ নম্বর, ২০ নম্বর, ২১ নম্বর ও ২২ নম্বর, জয়দেবপুরের ২৯ নম্বর, ৩০ নম্বর, ৩১ নম্বর, ৩২ নম্বর, ৩৩ নম্বর, ৩৪ নম্বর, ৩৫ নম্বর ও ৩৬ নম্বর এবং গাছা এলাকার ৩৮ ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের সবগুলো ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া টঙ্গীর ৪৩ নম্বর, ৪৬ নম্বর, ৪৯ নম্বর, ৫০ নম্বর, ৫৩ নম্বর ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের সব কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ।
এর বাইরে ৭, ৮, ৯, ১০, ১২, ১৫, ১৭, ১৮, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ৩৭, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৪, ৪৫, ৪৭, ৪৮, ৫১, ৫২, ৫৫ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে ঝুঁকিপূর্ণের পাশাপাশি সাধারণ ভোট কেন্দ্র রয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা প্রসঙ্গে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, যে তালিকা পুলিশ করেছে, তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমরা মনে করি নির্বাচনের পরিবেশ অত্যন্ত ভালো আছে। কোথাও সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। এমন পরিস্থিতি ভোট গ্রহণ পর্যন্ত বজায় থাকবে বলে আশা করছি।
বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের নির্বাচনী এজেন্ট ও জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিল্পপতি মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই ওই তালিকা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়ে ওইসব কেন্দ্রের নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানানো হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন