কেঁচো কম্পোজ সার তৈরি করে সাড়া ফেলেছেন সাংবাদিক ইয়ারব
সাতক্ষীরায় পরিবশ বান্ধব কৃষিকে এগিয়ে নিতে কাজ করে চলেছেন কৃষককের বন্ধু হিসাবে পরিচিত ইয়ারব হোসেন। তিনি কেঁচো কম্পোজ সার নিজে তৈরি করে তা কৃষককের মাঝে বিনা পয়সায় বিতরন করে ইতিমধ্যে বেশ সাড়াও ফেলেছেন। কৃষকরা তা ব্যবহার করে ভাল ফলাফলও পাচ্ছেন। এলাকার এখন অনেক কৃষক তার এই সার নিয়মিত ব্যবহার করছেন।
ইয়ারব হোসেন ইতিমধ্যে সদর উপজেলার তুজলপুর গ্রামর ১৫ জন কৃষককে হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে কেঁচো কম্পোজ তৈরির সরঞ্জামাদি প্রদান করেছেন। কম খরচ বাড়িতে তৈরি এই সার জমিতে ব্যবহার করে বেশ সাড়া ফেলছেন অনক কৃষক। কৃষিকে এগিয়ে নিতে তিনি প্রতিনিয়ত সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র কৃষি ও কৃষকদের মুখে হাঁসি ফুটানোর জন্য তার এ উদ্যোগ।
কৃষক ইয়ারব হোসেন জানান, প্রথমে কেঁচোতে হাত দিলে গাঁ ঘিন ঘিন করতো। তারপরেও প্রানীটি কৃষকের পরম বন্ধু হিসাবে তাকে আর অবহেলা করতে পারলাম না। মাটির উর্বরা শক্তি বাড়াতে প্রকৃতির লাঙ্গল হিসাবে কাজ করে। মাটির জৈব সার তৈরিতেও এর জুড়ি নাই। একটা সময় ছিল যখন মাটি খুঁড়লেই কেঁচো কিলবিল কিলবিল করতো। বর্তমান জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরা শক্তি যেমন কমছে, তেমনি কমছে কেঁচো। এর কুফল ভোগ করছে কৃষকরা। কেঁচো দিয়ে জমির উর্বরা শক্তি বাড়াতে তৈরি করা হচ্ছে জৈব সার। যা ইতিমধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
তিনি আরাও জানান, বছর খানেক আগে কৃষি বিভাগের আয়োজনে কৃষকদের নিয়ে এক অনুষ্ঠানে যান তিনি। সেখানে গাবর দিয়ে কেঁচো কম্পোজ সার তৈরির উপর আলোচনা শোনেন। ওই কথা শুনার পর শুরু করেন গোবর দিয়ে কেঁচো কম্পোজ সার তৈরির সংগ্রাম। কৃষি বিভাগের সহযাগিতায় কেঁচো নিয়ে প্রথম ৪টি সিম্নের নান্দা দিয়ে শুরু করেন এ চাষ। খুব সহজে তৈরি করা যায় এ সার। খরচ নেই বললেই চলে। বর্তমানে ২২টি নান্দায় তৈরি করা হচ্ছে তার এই সার। এসব কেঁচো দেখতে লাল। গোবর খেয় এগুলোর যে মল ছাড়ে এটিই জৈব সার। দেখতে চায়ের দানার মতো লালচে কালার। এই সার জনপ্রিয় করার জন্য কৃষকদের মাঝে বিনামুল্যে বিতরন করা হচ্ছে। তিনি দুই বিঘা ধানের জমিতে এই সার ব্যবহার করছেন। ব্যবহারের ফলে তার জমিতে বাড়তি ফলন দেখে আশপাশের কৃষকরা জৈব সার ব্যবহার আরো আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এই সার জমিতে ব্যবহার করা হলে জমিতে কোন প্রকার রাসায়নিক ব্যবহার করা লাগেনা। বর্তমান কৃষকদের প্রয়াজনে তারা নিজেরা কেঁচো সার বাড়িতে তৈরি করছেন। নিজের বাড়িতে গরু থাকলে এই কেঁচো চাষ ও সার উৎপাদনে বাড়তি কোন খরচ হয়না। শীতকাল ছাড়া সারা বছর কেঁচোর বাচ্চা হয়। আর এ গুলোর বংশবিস্তারও খুব দ্রুত ঘটে। আর এ কারনে অল্প দিনে ৫ হাজার কেঁচো থেকে তার বর্তমানে প্রায় ৩ লাখ কেঁচো দিয়ে এই সার তৈরী হচ্ছে।
সদর উপজলার তুজলপুর গ্রামর কৃষক আমিনূর ইসলাম জানান, তিনি ১০ কাটা জমিতে পটোল চাষ করছেন। পটোলে প্রচুর ইউরিয়া সার ও জৈব সারের ব্যবহার লাগে। ইউরিয়া সারের বদলে ইয়ারব হাসানের উদপাদিত জৈব সার এখন তিনি ব্যবহার করছেন। এতে তার খরচও কম হচ্ছে। জমির উর্বরতা শক্তি বেড়ে পটোলের চেহারা ও ফলন বেড়েছে। তিনি আরা জানান, কৃষককের বন্ধু হিসাবে পরিচিত ইয়ারব হাসান আমাকে ৪টি সিম্টের নান্দা, কেঁচো,ও ছাউনির জন্য বিনামুল্য টিন কিনে দিয়েছেন। বাড়িতে থাকা গরুর গোবর ও ইয়ারব হাসানের দেওয়া উপকরন দিয়ে তিনি বর্তমানে নিজে জৈব সার তৈরি করছেন। বাড়িতে তৈরি জৈব সার নিজের জমিতে ব্যবহার করে কৃষিতে লাভবান হচ্ছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমজাদ হাসান জানান, কেঁচো কম্পোজ সার তৈরি করে ইতিমধ্যে জেলাব্যাপি পরিচিত হয়ে উঠেছেন ইয়ারব হাসান। তিনি নিজে সার তৈরি করে কৃষকের ফসলের জন্য বিনামুল্য দিচ্ছেন। তার উদ্যেশ্য হলো এ সারকে জনপ্রিয় করে তোলা। তার খামার পরিদর্শন করছি। তার সার নিজের তৈরি দেখে গ্রামের ২২ জন কৃষক কেঁচো কম্পোজ সার তৈরি করেছেন। তিনি কেঁচো ও উপকরন দিয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করছেন। কৃষকরা নিজের তৈরি সার জমিতে ব্যবহার করছেন। কেঁচো কম্পোজ সার ফসল উৎপাদনে সহায়ক ভুমিকা রাখে। এ সারে রয়েছে পানি, নাইট্রোজন, পটাশ, ম্যাগনাশিয়াম, ফসফরাস, সালফার ও বারন। এ সার মাটির পুষ্টিগুন বৃদ্ধি করে। বেলে মাটির পানি ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহয্য করে। মাটিতে উপকারি অনুজীবের কার্যক্রম বৃদ্ধি করে।মাটির ভিতরে রাসায়নিক ও জৈবিক গুনাগুন বদ্ধি করে। এ স্যার ব্যবহারে মাটির গঠন উন্নত হয় এবং উৎপাদিত ফসলের গুনগতমান ভালো হয়।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষিসম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী আব্দুল মানান জানান, কৃষক ইয়ারব হাসান কৃষিকে এগিয়ে নিতে নিরলসভাবে কাজ করছেন। তিনি কেঁচো কম্পোজ সার তৈরি করে সাধারন কৃষকের মধ্যে দিচ্ছেন। ইয়ারব হাসানের কেঁচো কম্পোজ সার তৈরির খামার পরির্দশন করে তার নিজের হাতের কাজ আমি দেখছি। তিনি ইতিমধ্যে কৃষকের বন্ধু হিসাবে পরিচিত লাভ করেছেন। তিনি বৃক্ষ সংরক্ষন ও গবেষনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে পুরস্কার পেয়েছেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
বর্ণিল সাজে সেজেছে সাতক্ষীরার ৫৮৪টি দুর্গাপূজা মন্ডপ
সনাতন ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব (দূর্গাপূজা) কে কেন্দ্রবিস্তারিত পড়ুন
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন