এমন ফাইনাল আগে দেখেনি বিশ্বকাপ
ক্রিকেটের বাড়ি লর্ডসে বিশ্বকাপের ফাইনাল। মুখোমুখি ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড। আগে কখনোই শিরোপা ছুঁয়ে দেখেনি তাদের কেউই। স্বর্ণের ওই কাপটা যেকোনো মূল্যে চাইই চাই- দুই দলের ভেতরের সেই আগুন দেখা গেলো পুরো ম্যাচে। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলো এমন ফাইনাল বিশ্বকাপের ইতিহাসে আগে কখনো দেখা যায়নি! সুপার ওভারেও শিরোপা নির্ধারণ হয়নি কখনোই।
লর্ডসের কানায় কানায় পূর্ণ গ্যালারি এদিন রোমে রোমে উপভোগ করেছে বিশ্বকাপের ফাইনাল। ম্যাচটি পেন্ডুলামের মতো ঝুলছিলো। এই ইংল্যান্ডের দিকে তো, পরক্ষণেই নিউজিল্যান্ডের দিকে।
ম্যাচের শেষ ওভারে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৫ রান। প্রথম দুই বলে স্টোকসকে পরাস্ত করেন ট্রেন্ট বোল্ট। তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে আশা জাগান স্টোকস। পরের বলেই হল সবচেয়ে বড় নাটকীয়তা। ফুলটস থেকে দৌড়ে দুই রান নেয়ার পথে সীমানা থেকে ছোড়া বল স্টোকসের গায়ে লেগে চলে হয়ে গেল ৪। ছয় রান যোগ হয়ে গেলো ইংল্যান্ডের স্কোরে। পরের বলে রান আউট হওয়ার আগে ১টি রান নিয়ে গেলেন আদিল রশিদ। শেষ বলে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২ রান। এক রান হওয়ার পর দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন মার্ক উড। খেলা গড়ালো সুপার ওভারে।
সুপার ওভারে ট্রেন্ট বোল্টের বলে জস বাটলার এবং বেন স্টোকস মিলে করেন ১৫ রান। বিশ্বকাপ জিততে জোফরে আর্চারের এক ওভারে ১৬ রান নিতে হবে নিউজিল্যান্ডকে।
শুধু ফাইনালেই নয়, পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে বাজে ব্যাটিং করার মার্টিন গাপটিলের ওপরই ভারসা করে নিউজিল্যান্ড। তার সঙ্গে নামেন জিমি নিশাম। প্রথম বলই করেন ওয়াইড। পরের ডেলিভারিতে ২ রান নেন জেমি নিশাম। পরের বলেই ফুললেন্থ ডেলিভারি আছড়ে ফেলেন গ্যালারিতে। বলের সঙ্গে মাঠরে বাইরে চলে যায় ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ স্বপ্নও। পরের ২ বলে নেন ২ রান করে। শেষ ২ বলে জয়ের জন্য দরকার ছিল ৩ রান। পঞ্চম বলে আসে ১ রান। প্রথমবারের মতো স্ট্রাইক পান গাপটিল। শেষ বলে দরকার ২ রান। আস্থার প্রতিদান দিনে পারলেন না গাপটিল। দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে গেলেন। ম্যাচ টাই হলেও শিরোপা ঘরে উঠলো ইংল্যান্ডের।
তবে গল্পটা অন্য রকমও হতে পারতো। ৪৯তম ওভারের তৃতীয় বলে লিয়াম প্লাঙ্কেটকে ফেরান জেমস নিশাম। পরের বলেই ইংলিশদের শেষ ভরসা বেন স্টোকস ক্যাচ তুলে দেন। সীমানায় ফিল্ডিং করা ট্রেন্ট বোল্ট সহজেই তালুবন্দ্বী করেন স্টোকসকে। কিন্তু পেছনে থাকা বাউন্ডারি লাইন খেয়াল করেননি। তাতে পাঁ ছুঁইয়ে আউটকে পরিণত করেন ছক্কায়।
শুরুতেই রানের চাকা টেনে ধরতে সক্ষম হন নিউজিল্যান্ডে পেসাররা। তার ফলটাও পায় হাতেনাতে। টপ অর্ডারকে ব্যর্থ করে ৮৬ রানেই তুলে নেয় ৪ উইকেট। হেনরি, ফার্গুসনরা যখন ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালের স্মৃতি জাগিয়ে তুলছিলেন ঠিক ওই সময় জুটি বাধেন বেন স্টোকস এবং জস বাটলার। এই জুটিতেই স্বপ্ন দেখছিলেন ইংলিশরা। কিন্তু তাদের ১১০ রানে জুটি ভেঙে নিউজিল্যান্ডকে আবারো ম্যাচে ফেরান লোকি ফার্গুসন। ৬০ বলে ৫৯ রান করা জস বাটলার ফিরে গেলে আবারো চাপে পড়ে স্বাগতিকরা।
শেষ ৩ ওভারে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৩৪ রান। ৪৮তম ওভারের প্রথম বলেই ক্রিস ওকস ফিরে গেলে পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে বেন স্টোকসের কাঁধে।
তার আগে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ঘরে তুলতে ইংল্যান্ডের সামনে বড় লক্ষ্য দাঁড় করাতে ব্যর্থ হয় নিউজিল্যান্ড। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪১ রান তোলে কিউইরা। ওয়ানডেতে টার্গেট একেবারে ছোট না হলেও ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের জন্য ‘মামুলিই’ বলা যায়।
প্রথম ইনিংসে আম্পায়ারদের বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত বাজেভাবে চোখে পড়ে। ম্যাচের তৃতীয় ওভারে তৃতীয় বলে ওপেনার হেনরি নিকোলসের প্যাডে আঘাত করে ক্রিস ওকসের ডেলিভারি। ফিল্ডারদের জোরালো আবেদনে সাড়া দিয়ে তর্জনী তুলে দেন আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা। নিকোলস রিভিউ নিলে দেখা যায়, বলটি প্যাডে না লাগলে স্ট্যাম্পের উপর দিয়ে চলে যেতো। ধর্মসেনাকে ক্ষমা চাইতে হয় এবং তার সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেন টিভি আম্পায়ার রোড টাকার।
তারপরেও ওপেনিং জুটিটা বড় করতে পারেননি মার্টিন গাপটিল। পুরো আসরে নিজের ছায়া হয়ে থাকা এ ওপেনার ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে ওকসের শিকার হন ১৯ রানে। নিজে তো গেলেনই, রিভিউটা নষ্ট করে গেলেন। যার মূল্য পরে দলের কঠিন সময়ে চুকাতে হয়েছে রস টেইলরকে।
এরপর অবশ্য নিকোলসকে নিয়ে চাপ সামাল দেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। বিশ্বকাপের এক আসরে অধিনায়ক হিসেবে সর্বাধিক রানের রেকর্ড গড়ার পথে তিনি জুটি গড়েন ৭৪ রানে।
তবে ২৩তম ওভারে আবারো ধর্মসেনার ভুলে একবার জীবন পান তিনি! লিয়াম প্লাঙ্কেটের বল উইলিয়ামসনের ব্যাট ছঁয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষক জস বাটলারের হাতে। কিন্তু, ইংল্যান্ডের আবেদনে সাড়া দেননি ধর্মসেনা। ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ন মরগান রিভিউ নিলে আল্ট্রা এজে দেখা যায়, বলটি ব্যাট ছুঁয়েছে। ফলে আবারো ক্ষমা চাইতে হয় ধর্মসেনাকে। আউট হয়ে ফেরেন ৫৩ বলে ৩০ রান করা উইলিয়ামসন।
নিকোলসকেও দ্রুতই অধিনায়কের পথ ধরান প্লাঙ্কেট। বোল্ড হওয়ার আগে ৫৫ রান করে যান তিনি। ১১৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া নিউজিল্যান্ডকে যখন টেনে তোলার চেষ্টা করছিলেন অভিজ্ঞ রস টেইলর টিক তখনই আম্পায়ার মারিয়াস ইরাসমুসের ভুল সিদ্ধান্তের বলি হলেন। দলকে ফেলে গেলেন আরো বিপদে। মার্ক উডের জোরালো আবেদনে সাড়া দিয়ে আম্পায়ার আঙুল তুললেও টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল স্ট্যাম্পের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছিলো।
টেইলের পোড়াকপালের পেছনে তার সতীর্থ গাপটিল আর নিকোলসের হাতও কম নয়। ম্যাচের সপ্তম ওভারে ক্রিস ওকসের বলে লেগ বিফোর হয়ে সাজঘরে ফেরেন ১৯ রান করা গাপটিল। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পছন্দ না হওয়ায় নিয়েছিলেন রিভিউ। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। বরং, বড় লোকসানটা হয়ে গেছে রিভিউ নষ্ট করে। রিভিউ নেয়ার আগে গাপটিল পরামর্শ করেছিলেন নিকোলসের সঙ্গে। কিন্তু তিনিও সঠিক পরামর্শ দিতে পারেননি।
রিভিউটা হাতে থাকলে হয়তো বেঁচে যেতেও পারতেন টেইলর। এরপর টম লাথাম একপাশ আগলে দারুণ ব্যাটিং করতে থাকলেও তাকে ঠিকভাবে সঙ্গ দিতে পারেননি অন্যরা। ৫৬ বলে ৪৭ রানের কার্যকরি ইনিংস খেলে ফেরেন তিনি।
বল হাতে ৩টি করে উইকেট তুলে নেন ক্রিস ওকস এবং লিয়াম প্লাঙ্কেট। একটি করে উইকেট শিকার করেন জোফরে আর্চার এবং মার্ক উড।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
কলারোয়ায় ফুটবল টুর্নামেন্টে ফাইম একাদশ, গদখালি ও পাথরঘাটা সেমিতে
কলারোয়ায় ৮দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে ১ম, ২য় ও ৩য় খেলায় ফাইমবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ার কেঁড়াগাছিতে প্রীতি ফুটবল ম্যাচে মাধবকাটিকে হারালো স্বাগতিকরা
কলারোয়ার কেঁড়াগাছিতে এক প্রীতি ফুটবল ম্যাচে সাতক্ষীরা সদরের মাধবকাটি ফুটবলবিস্তারিত পড়ুন
সাতক্ষীরায় বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ
সাতক্ষীরায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখবিস্তারিত পড়ুন