ইসির সঙ্গে সংলাপ : পর্যবেক্ষক সংস্থার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যাচাইয়ের তাগিদ
নিবন্ধিত নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিস্টতা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) তাগিদ দিয়েছেন সংলাপে অংশ নেয়া সংস্থাগুলো। কোন সংস্থার বিরুদ্ধে এর সংশ্লিস্টতা খুঁজে পেলে ওই সংস্থার নিবন্ধন কার্যক্রম স্থগিত করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।
রবিবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত সংলাপে অংশ নিয়ে পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে এই প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রস্তাব বলা হয়, জাতীয় সংসদসহ স্থাণীয় পর্যায়ের সব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সর্বজনগ্রাহ্য করতে পর্যবেক্ষককদের নিরপেক্ষ ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তারা কাজ করলে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
সংলাপে অংশ নেয়া বেশ কয়েকজন পর্যবেক্ষক জানান, সংলাপের সূচনা বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) খান মো নূরুল হুদা এ বিষয়ে আমন্ত্রিত সংস্থার প্রতিনিধিদের মতামত দিতে ফ্লোর উš§ুক্ত করেন। সিইসি আরো বলেন, রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যেন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে কাজ করতে না পারেন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিদের আহ্বানও জানানো হয়। এ নিয়ে কয়েকটি সংস্থা বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া পর্যবেক্ষকদের বয়স শিথিল করে নির্বাচনে পর্যবেক্ষণ করতে প্রস্তাব ছাড়াও পর্যবেক্ষণে কার্যকরী ভূমিকরা রাখতে পুলিশকে আলাদা চিঠি; যাতে কেন্দ্রে যাওয়ার পর তাদের বাধার মুখে না পড়তে না হয় এবং ভোট কেন্দ্রে কোন অনিয়ম কিংবা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দেখলে কমিশনকে তাৎক্ষণিক জানাতে পারেন পর্যবেক্ষকরা তার ব্যবস্থা রাখতে প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাগুলো।
সংস্থা প্রধানদের সতর্ক হতে বললেন সিইসি
সংলাপে অংশ নেয়া ৩২ পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রধানদের উদ্দেশ্যে কেএম নূরুল হুদা বলেন, রাজনৈতিক কোনো ব্যক্তি যেন নির্বাচন পযবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ না পায়, সে বিষয়ে পর্যবেক্ষকদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। পক্ষপাতহীন ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দায়িত্ব পালনকালে সামগ্রিকভাবে ভোট কার্যক্রম যেন বাধাগ্রস্ত না হয়-সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যাদেরকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে মাঠে পাঠাবেন, তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেবেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষদের ভূমিকা নিয়ে কথা হয়েছে এবং পর্যবেক্ষকরা যাতে সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, আপনারা নির্বাচন চলাকালে মাঠে ময়দানে বিচরণ করবেন, সঠিক সংবাদ সংগ্রহের সুযোগ পাবেন। আপনাদের পরামর্শ আমরা গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করব এবং বিবেচনা করব।
সিইসির বক্তব্যের পর তার সঙ্গে ঐকমত্য প্রকাশ করেন উপস্থিত পর্যবেক্ষকরা। তবে পর্যবেক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ইসিকে করতেই সুপারিশ করেছেন তারা। এছাড়া তৃতীয় কোনো পক্ষকে (নিরপেক্ষ সংস্থা) দিয়ে ভোটার তালিকা নিরীক্ষা করা ও ভোটার দিবস উদযাপনের পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে সংলাপে অপর চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১১টার দিকে পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিরা সভাকক্ষে উপস্থিত হলে সিইসি সূচনা বক্তব্য দেন। এরপর ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সংলাপের আনুষ্ঠানিক আলোচনা।
এসময় পর্যবেক্ষকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের উপর জোর দিয়ে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) প্রধান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ। তিনি বলেন, কোনো সংস্থা কমিশন থেকে নিবন্ধন নিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে কিনা, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা-তা খতিয়ে দেখতে হবে। দায়িত্বপালন না করলে এ ধরনের ভূঁইফোড়দের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম বলেন, ভোটার তালিকা তৃতীয় কোনো পক্ষ দিয়ে অডিট করা প্রয়োজন। নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরুর আগ পর্যন্ত পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র প্রদান নিয়ে গড়িমসি করা হয়। এ বিষয়েও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এছাড়া কেন্দ্রে প্রবেশ করে পর্যবেক্ষকদের সময় নির্ধারণ ও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার সুপারিশ করেন তিনি।
আব্দুল আলীম বলেন, নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত কোনো পর্যবেক্ষকের কার্যক্রম তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি কোনো কারণে এখন পর্যন্ত পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনও বাতিল করার নজির নেই। কাজেই পর্যবেক্ষকরা ঠিকমতো তাদের দায়িত্ব পালন করছেন কিনা, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তিনি বলেন, ভোটার তালিকা প্রণয়ন দিবস উদযাপন করা দরকার। প্রতিবছর পহেলা জানুয়ারি ভোটার দিবস উদযাপন এবং সেদিন ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু হলে সবার ভেতরেই একটা সচেতনতা সৃষ্টি হবে।
ফেয়ার ইলেকশন মনিটিরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা) ভাইস প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের বয়স কমিয়ে ২৫ থেকে ২০ বছর করা উচিত। স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের স্থানীয়ভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করার পক্ষেও মত দেন তিনি। ইভিএম এখনই শুরু করা উচিত নয় বলেও মনে করেন মুনিরা খান। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি আনোয়ার ফরায়েজী পর্যক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেয়ার পরামর্শ দেন।
২২ নারী নেত্রীর সঙ্গে সংলাপ
একাদশ সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সোমবার ২২ নারী নেত্রীর সঙ্গে সংলাপ করবে নির্বাচন কমিশন। সকাল ১১টায় ইসি ভবনে এ সংলাপ শুরু হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার সাবেক ৫ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ১২ নির্বাচন কমিশনার এবং সাবেক পুলিশের আইজি, সচিবদের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দল ও নানা শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে ইসি। গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ইসি। গত ২৪ আগষ্ট থেকে গত ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে কমিশন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন