২০১৮ সালের ইজতেমা ১২ জানুয়ারি
মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় আখেরি মোনাজাতে শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমা
হে আল্লাহ, পুরো উম্মতের ওপর রহম কর, সব মানুষকে হেদায়েত দাও। হে আল্লাহ, পেরেশানি দূর করে দাও। হে আল্লাহ, ইজতেমাকে কবুল কর, আমাদের দোয়া কবুল কর।
অশ্রুসজল চোখে এমনি গভীর আকুতিপূর্ণ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রোববার শেষ হয়েছে তাবলিগ জামাতের ৫২তম বিশ্ব ইজতেমা।
রোববার বেলা ১১টা ১২ মিনিটে শুরু হয়ে ১১টা ৪২ মিনিট পর্যন্ত দীর্ঘ মোনাজাত পরিচালনা করেন দিল্লির মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ।
প্রথম ১৫ মিনিট পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ করেন তিনি। শেষ ১৫ মিনিটে উর্দু ভাষায় দোয়া করেন। এর আগে হেদায়েতী বয়ানও করেন মাওলানা সা’দ।
টঙ্গীর তুরাগতীরের ইজতেমা ময়দান ছাড়াও দক্ষিণে খিলক্ষেত, উত্তরে বোর্ডবাজার, পূর্বে টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরী ও পশ্চিমে আশুলিয়া পর্যন্ত প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটার এলাকা বিস্তৃত বিশাল জনসমুদ্রে ৩০ লক্ষাধিক মানুষের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন।
কেঁদে বুক ভাসিয়ে দুনিয়া ও আখিরাত, দেশ ও বিশ্বের কল্যাণ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন মুসল্লিরা। আত্মশুদ্ধি, গুণাহ মাফ ও সবক্ষেত্রে আল্লাহর রহমত চান তারা।
বাংলাদেশ ছাড়াও ৯৬ দেশের প্রায় ৬ হাজার বিদেশী মেহমান ইজতেমা ও আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন।
স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সম্প্রচার, মুঠোফোন ও পুলিশের ওয়্যারলেসের বদৌলতেও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বহু মানুষ মোনাজাতে শরিক হন।
মোনাজাতে অংশ নিতে শনিবার রাত থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে। সূর্য উঠতে না উঠতেই কুড়িল-বিমানবন্দর-আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী-কালীগঞ্জ, আশুলিয়া-সাভার ও ঢাকা-ময়মসসিংহ সড়কসহ বিভিন্ন পথে হাজারও মানুষ হেঁটেই আসতে থাকেন ময়দানের দিকে।
এমনকি নারীরাও ভিড় ঠেলে হেঁটেই আসেন। মোনাজাতের সময় ইজতেমাস্থলের চারপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
মিল-কারখানার ভেতর ও ছাদ, ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধ, বিভিন্ন যানবাহন এবং নৌকায় বসেও মোনাজাতে শরিক হন বহু মানুষ।
মোনাজাত শেষে হেঁটেই ফিরতে হয় এদের প্রায় সবাইকে। যে অল্প ক’জন মানুষ বাস, পিকআপ বা কোনো যানবাহনে উঠতে পেরেছেন তাদের গুণতে হয়েছে বহুগুণ বেশি ভাড়া।
আখেরি মোনাজাতের জন্য রোববার আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে ছিল ছুটি। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা না করলেও কর্মকর্তাদের মোনাজাতে অংশ নিতে বাধা ছিল না।
এর আগে সকাল ৮টা ২০ মিনিটে শুরু করেন মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ। তা বাংলা তরজমা করেন বাংলাদেশে মাওলানা ওমর ফারুক।
বয়ানে তিনি বলেন, যে দ্বীন ইসলামের বিধান অনুসারে চলবে এবং হজরত মুহাম্মদের (সা.) জীবনাদর্শ অনুসরণ করবে, সে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা অর্জন করবে।
ভোগান্তি থাকলেও অভিযোগ নেই
ইজতেমায় অংশ নেয়া মুসল্লিরা আসা ও যাওয়ার পথে গাড়ি না পেয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হলেও তাতে তাদের কোনো অভিযোগ নেই।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বেলায়েত হোসেন জানান, সকালে প্রায় ১০ কিলোমিটার হেঁটে ময়দানে এসেছি মোনাজাতে অংশ নেয়ার জন্য, আবার হেঁটেই বাড়ি যাচ্ছি। আল্লাহর রহমতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না, বরং ভালোই লাগছে।
টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে গত ১৩ জানুয়ারি থেকে ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। ১৫ জানুয়ারি হয় ওই পর্বের আখেরি মোনাজাত।
২০১৮ সালের বিশ্ব ইজতেমা ১২ জানুয়ারি
আগামী বছরের (২০১৮ সালের) বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব ১২ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে। যা শেষ হবে ১৪ জানুয়ারি। আর দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবে ১৯ জানুয়ারি এবং শেষ হবে ২১ জানুয়ারি।
ইজতেমার প্রতি পর্বই আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে। বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বি মাওলানা ইঞ্জনিয়ার গিয়াস উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গত ১৯ জানুয়ারি ইজতেমার মাঠে দেশ-বিদেশের মুরব্বিদের পরামর্শ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে (মাশওয়ারায়) এবারের জোড় ইজতেমার তারিখ চূড়ান্ত করা হয়।
এর পূর্বে ২০১৮ সালের বিশ্ব ইজতেমার তারিখও নির্ধারণ করা হয়। ইজতেমার আগে ৫ দিন ব্যাপী জোড় ইজতেমা শুরু হবে এ বছর ১৭ শুক্রবার নভেম্বর। আর শেষ হবে ২১ নভেম্বর মঙ্গলবার।
সাধারণত বিশ্ব ইজতেমার কমপক্ষে ৪০ দিন আগে জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এ জোড় ইজতেমায় তাবলীগের সব সাথিরা অংশগ্রহণ করতে পারেন না। শুধুমাত্র তিন চিল্লার সাথিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এ জোড় ইজতেমা।
তিন চিল্লার সাথিদের মধ্য থেকে কিছু অংশ বিশ্ব ইজতেমার আয়োজনে টঙ্গীর ইজতেমার মাঠে কাজে যোগদান করেন।
সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে ইজতেমা মাঠের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করেন তারা। আর বাকি সাথিরা বিশ্ব ইজতেমার দাওয়াত নিয়ে ময়দানে বেরিয়ে পড়েন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন