অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ডের জন্য সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবো: ড. কামাল
সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সাত দফা দাবি সরকার মেনে না নিলে ভবিষ্যতে ‘বিচার’ করার হুমকি দিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা কামাল হোসেন।
চট্টগ্রামের লালদীঘিতে সমাবেশ করতে না দেওয়ায় সরকারের সমালোচনা করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘কথা ছিলো চট্টগ্রামের লালদীঘিতে সমাবেশ করার। সেজন্য নিয়ম মেনে আবেদনও করা হয়েছে। তার পরেও সেখানে সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে দেশের মানুষকে চারঘন্টা রাস্তায় দাঁড় করিয়ে কষ্ট দিয়েছে’।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এ চিত্র ভিডিও ও ছবি (সমাবেশের) তুলে আমাকে দেবেন। আমি জীবনে যদি বেঁচে থাকি, একদিন না একদিন এ অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ডের জন্য এ সরকারকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবো’।
শনিবার দুপুরে নগরের কাজির দেউড়িতে নাসিমন ভবনের সামনে নুর মোহাম্মদ সড়কের উপর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারের কাছে ঐক্যফ্রন্টের দেওয়া সাত দফা দাবি মেনে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এ সাত দফা জনগণের দাবি। সরকারকে অনুরোধ করবো এ সাত দফা দাবি মেনে নিতে। জনগণের কথা অমান্য করলে সরকার যে শাস্তির মুখোমুখি হবে তা তারা কল্পনাও করতে পারবে না।’
৭ দফা দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরবো: মির্জা ফখরুল
সরকারের কাছে ঐক্যফ্রন্টের দেওয়া সাত দফা দাবি মেনে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মামলা অনেকে হয়েছে, ভৌতিক মামলা অনেক দিয়েছেন। কিন্তু সাত দফা দাবি আদায় না করে আমরা ঘরে ফিরব না। আমাদের চেয়ারপারসন কারাগারে যাওয়ার আগে বলে গেছেন, ‘আমি যদি নাও থাকি, জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে পতন ঘটাতে হবে।’
শনিবার বিকেল ৪টার দিকে নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনের সামনের সড়কে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘সরকার নিজেরা নাশকতা-সহিংসতা করে। তারপর বিরোধীদলের ওপর দোষ দেয়। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বন্দী করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, জনগণকে জিম্মি করে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। বন্দুক, পিস্তল দেখিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বপ্ন পাকিস্তানিরাও দেখেনি। আমরা অন্যায়ের কাছে মাথানত করব না।’
জনগণ এবার আর ভাঙা নৌকায় উঠবে না মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সরকারের ওপর জনগণের আস্থা নেই। তারা মামলা দিয়ে জনগণের আন্দোলন বন্ধ করতে চায়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আন্দোলন জনগণের মুক্তির আন্দোলন। এ আন্দোলন তখনই থামবে যখন এ সরকার পতন হবে।
নুর আহমেদ সড়কে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে ৭ দফা দাবিতে এই সমাবেশ হয়। সড়কের এক পাশে ফুটপাতে ছোট মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। ছোট ছোট মিছিল নিয়ে জনসভায় মানুষের সমাগম ঘটে। বেলা ২টায় শুরু হওয়া এই সমাবেশ শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৫টায়।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এটি দ্বিতীয় জনসভা। প্রথম জনসভা হয় গত ২৪ অক্টোবর সিলেটের রেজিস্টারি মাঠে।
জনসভার মঞ্চে লেখা ছিল- “অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, সকল রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তিসহ ৭ দফা দাবি’। মঞ্চের পাশে টানানো হয়েছে ‘খালেদা জিয়া ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মুক্তি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রায় বাতিলের দাবি’ সম্বলিত ডিজিটাল ব্যানার।
জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে আসা নেতা-কর্মীদের কারো কারো হাতে রয়েছে কারাবন্দি খালেদা জিয়া, যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, মহানগর সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, ভারতের মেঘালয়ে বন্দি সালাহ উদ্দিন আহমেদসহ স্থানীয় নেতাদের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড। দাবি আদায়ে জনসভা হলেও নেতা-কর্মীদের হাতে ধানের শীষের ছড়াও দেখা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, “আমাদের ৭ দফা মানা ছাড়া, আমাদের সাথে আলাপ করা ছাড়া তফসিল যদি ঘোষণার করেন, তাহলে বুঝব যে, আপনি ও আপনার সরকার নির্বাচন বানচাল করতে চান। আমরা নির্বাচন করতে চাই, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চাই।
“সরকারকে বলব, নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করবেন না। তফসিল ঘোষণা আলোচনা না করে করলে, দেশের ১৬ কোটি মানুষকে যদি সংকটের ভেতরে ঠেলে দেন, এর সমস্ত দায়-দায়িত্ব আপনাদের বহন করতে হবে।”
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “ওরা (সরকার) বলে তোরা যতই দাবি দিস, ৭ দফা ১১ দফা- আমরা মানবো না। আর আমরা চট্টগ্রামে বলতে এসেছি, দাবি মানতে হবে। ওরা বলছে, আমাদের অধীনেই নির্বাচন হবে, আমরা সরকারে থাকবো, আমাদের কেউ পরিবর্তন করতে পারবো না। আর আমরা বলতে এসেছি, তোমাদের অধীনে নির্বাচন হবে না।
“আমরা সমস্ত জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে তোমাদেরকে গদি থেকে নামিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করব। এই আন্দোলনের আহ্বান জানাতে আমরা এখানে এসেছি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “সরকার জাতীয় ঐক্য ও জনগণকে ভয় পায়। আজকে যে ক্রান্তিকাল তা থেকে উত্তরণের নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক করতে হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করতে হবে। বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্ররা বলেছেন, বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হবে।
“দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপিসহ বিরোধী দল ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে পারে না।”
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, “এই ঐক্যের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করব সংলাপে বসার জন্য এবং সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন একটা নিরপেক্ষ সরকার করে তার অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। তা নাহলে দেশে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।”
মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এসএম সাইফুল আলম ও বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদের পরিচালনায় জনসভায় বিএনপির মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন, আমানউল্লাহ আমান, ফজলুর রহমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সুকোমল বড়ুয়া, গোলাম আকবর খন্দকার, এসএম ফজলুল হক, মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, আওম শফিকউল্লাহ, একেএম জগলুল হায়দার আফ্রিক, জানে আলম, জেএসডির তানিয়া রব, আবদুল মালেক রতন, বেলাল আহমেদ, শফিক উদ্দিন স্বপন, গোলাম জিলানী, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, সোহরাব হোসেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর আহমেদ ও আবম মোস্তফা আমিন বক্তব্য দেন।
গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ২০ দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, সাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, বৃহত্তর চট্টগ্রামের সাবেক সাংসদ জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, শাহজাহান চৌধুরী, ওয়াদুদ ভুঁইয়া, লুৎফর রহমান কাজল, গাজী শাহজাহান জুয়েল, ম্যামা চিং, রেহানা আখতার রানু, নুরে আরা সাফা, সাকিলা ফারজানা, কোরবান আলী, আবু সুফিয়ান, ভিপি নাজিম উদ্দিন ও শাহ আলমও বক্তব্য দেন।
জনসভায় খেলাফত মজলিসের এমএ রকিব, মাওলানা মজিবুর রহমান, বিকল্পধারা একাংশের মহাসচিব শাহ আহমেদ বাদল, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা শওকত আমীন, গণফোরামের মোশতাক আহমেদ, নাগরিক ঐক্যের জাহিদুর রহমান, গণফোরামের রফিকুল ইসলাম পথিক, বিএনপির ফরহাদ হালিম ডোনার, মামুন আহমেদ, সানাউল্লাহ মিয়া, দীপেন দেওয়ান, নাজিমউদ্দিন আলম, শামীমুর রহমান শামীম, মীর হেলাল উদ্দিন, কাদের গনি চৌধুরী, রফিক শিকদার, আনোয়ার হোসেইন, নুরুল ইসলাম খান নাসিম, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান ও শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশ উপলক্ষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সড়ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়; কাছাকাছি রাখা হয় জলকামানের গাড়িসহ প্রিজন ভ্যান।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন