৬ ডিসেম্বর দেবহাটা হানাদার মুক্ত দিবস পালনে প্রস্তুতি সভা
৬ই ডিসেম্বর সাতক্ষীরার দেবহাটা হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে সম্পূর্ন রুপে পাক হানাদার মুক্ত হয় গোটা দেবহাটা। দীর্ঘ দিনের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে অবশেষে এই দিনেই দেবহাটা ছেড়ে পিছু হটে যায় পাক সেনারা।
বিশ্ব মানচিত্রে তখনও লালসবুজের পতাকা খচিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেনি কিন্তু সাতক্ষীরার বীর জনতা, মুক্তিপাগল বীর মুক্তিযোদ্ধারা বর্বর পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যদেরকে সাতক্ষীরার পবিত্র মাটি হতে বিতাড়িত করে বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে। সাতক্ষীরার বিভিন্ন মফস্বল এলাকাগুলো হতে একে একে পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা বিতাড়িত হতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের কারনে অত্যাচারী পাক বাহিনী শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, আশাশুনী এবং দেবহাটা হতে বিতাড়িত হতে থাকে। ধীরে ধীরে পরাজিত হয়ে, জীবন হানী, অস্ত্র হারিয়ে জেলাশহরে পৌছাতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে সেদিন সাতক্ষীরার শত সহ¯্র মুক্তিযোদ্ধা দেশ স্বাধীন করার দৃপ্ত সপথে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাক বাহিনী আস্তে আস্তে পালিয়ে যাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে।
স্বাধীনতা সংগ্রামের তৎকালীন ৯নং সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার প্রয়াত ক্যাপ্টেন শাহাজান মাষ্টারের নের্তৃত্বে সম্মূখ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো দেবহাটার মুক্তিকামী মানুষ। একের পর এক যুদ্ধে পরাস্থ হয়ে সেদিন দেবহাটা ছাড়তে বাধ্য হয় পাক বাহিনী ও তাদের দোষররা। সাতক্ষীরা কোর্ট চত্বরের ট্রেজারীর ৪শত রাইফেল লুট করে তৎকালীন সময়ে আব্দুল গফুর, এম এল এ আয়ুব হোসেন ও ক্যাপ্টেন শাহাজান মাষ্টার জীবন বাজি রেখে পরবর্তীতে ৯ নং সেক্টর গঠন করে। একাত্তরের নভেম্বর মাসের শেষ ও ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের প্রতিটি দিন অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে ক্রমেই পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোষররা পিছু হটতে থাকে। যাওয়ার সময় তারা মানুষের ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে এবং পারুলিয়া, কুলিয়া, বিনেরপোতা ব্রীজ গ্রেনেড দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে যায়। পাক হানাদার বাহিনী দেবহাটার মাটি ছেড়ে যাওয়ার সময় মাটিতে পুতে রাখা এপি মাইন অপসারনকালে দেবহাটার কোঁড়া গ্রামের অব্দুল ওহাবের দেহটি মাইনের বিষ্ফরনে ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে যায়। সেদিন এই বীর শহিদের ছিন্ন দেহটির প্রতি মাষ্টার শাহাজানের নের্তৃত্বাধীন সকল মুক্তিযোদ্ধারা তাদের হাতিয়ার উচিয়ে শেষ সম্মান জানিয়েছিল। অবশেষে তার দেহটি ভারতের টাকী সাজারু বাগানে সমাহিত করা হয়। সর্বশেষে পাক সেনাদের সুরক্ষিত পুষ্পকাটি ইটের ভাটা ঘাঁটি পতনের জয়লাভের মধ্য দিয়ে ৬ই ডিসেম্বর সমগ্র দেবহাটা থানা এলাকা স্বাধীন হয়ে সম্পূর্ন হানাদার মুক্ত হয়। তখন মুক্তিযোদ্ধা জনতা উল্লাসে ফেটে পড়ে। মূহুমূহু জয় বাংলা শ্লোগানে তাৎক্ষনিকভাবে বিজয়ের উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেবহাটা জুড়ে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে প্রতিবছর র্যালী, আলেচনা সভার আয়োজন করে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নের্তৃবৃন্দরা।
এ উপলক্ষ্যে দেবহাটায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও সন্তান কামান্ডের আয়োজনে ৬ ই ডিসেম্বর দেবহাটা মুক্ত দিবস ও ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উর্যাপন উপলক্ষ্যে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার ১১ টায় উপজেলা হল রুমে উপজেলা চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলহাজ্ব আব্দুল গনির সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা যুদ্ধহত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সভাপতি আব্দুল মাহমুদ গাজী, দেবহাটা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার ইয়সিন আলী, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জামসেদ আলী, দপ্তর কমান্ডার আব্দুর রউফ। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দেবহাটা সদর ইউনিয়ন কমান্ডার ইদ্রিস আলী, নওয়াপাড়া ইউনিয়ন কমান্ডার আব্দুর রশিদ, সখিপুর ইউনিয়ন কমান্ডার আবুল কাসেম, মুক্তিযোদ্ধা সাবুর আলী, প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাব, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি আবু রায়হান তিতু, দেবহাটা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক রনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুর রহমান বাবু, সখিপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি হারুন অর রশিদ প্রমূখ।
দেবহাটা মুক্তদিবস উপলক্ষ্যে দিনের শুরুতে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা হয়ে এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পতাকা উত্তোলন, মুক্ত দিবসের বর্ণাঢ্য র্যালি, বাদ জোহর জাতির শান্তি, অগ্রগতি এবং মুক্তিযুুদ্ধে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত, বিকাল ৩টায় পারুলিয়া আবু রায়হান চত্বরে মুক্তদিবসের আলোচনা সভাসহ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে বলে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। এই আয়নায় সমাজেরবিস্তারিত পড়ুন
সাতক্ষীরা জেলা ব্যাপী গ্রেফতার ১৩, ইয়াবা-ফেন্সিডিল-গাঁজা উদ্ধার
সাতক্ষীরা জেলা ব্যাপী পুলিশের মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযানে মাদক মামলারবিস্তারিত পড়ুন