সোমবার, নভেম্বর ২৫, ২০২৪

কলারোয়া নিউজ

প্রধান ম্যেনু

সাতক্ষীরার সর্বাধুনিক অনলাইন পত্রিকা

শবে মিরাজের তাৎপর্য

প্রফেসর মো. আবু নসর

সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর ৬৩ বছর জীবনের অসংখ্য ও অগনিত বিশেষত্বের মধ্যে সবচেয়ে গৌরবমন্ডিত, বৈশিষ্টমন্ডিত, গৌরবজ্জল ও চমকপ্রদ ঘটনা হলো মিরাজ বা উর্দ্ধজগত ভ্রমন। মহানবী (সঃ) এর মিরাজ মহাবিশ্বের মহাবিস্বয়। মিরাজ আরবি শব্দ। মূল শব্দ “উরুজ” অর্থাৎ উত্থান। সাধারন অর্থে ঊর্ধ্বারোহন বা সিঁড়ি বা সোপান। অন্য অর্থ ঊর্ধোলোকে আরোহন বা মহামিলন। ইসলামি পরিভাষায় এটি একটি অলৌকিক ঘটনার স্পস্ট ইঙ্গিত যার সাথে রয়েছে ঈমানের গভীরতম সম্পর্ক। এটি বিজ্ঞানের এবং মহাবিশ্বের মহাবিস্ময়। মিরাজের বৈজ্ঞানিক যুক্তি খুঁচতে যাওয়া অবান্তর চিন্তা মাত্র। কারণ যুক্তি ঈমানের ভিত্তি নয় বরং ঈমানই যুক্তির ভিত্তি। যুক্তির ক্ষমতা যেখানে শেষ, ঈমানের যাত্রা সেখান থেকে শুরু। মিরাজ মূলত: একটি মোজেজা। মিরাজ বিশ্বের ইতিহাসে শুধু সাধারণ ঘটনা নয় বরং মানবতার মুক্তির দূত নবীকুল শিরোমনি হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর জীবনে একটি অত্যাশ্চর্য ও বিস্বয়কর অধ্যায়। ইসলামের ইতিহাসে পবিত্র শবে মিরাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবোধ সম্পন্ন। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর ৫০ বছর বয়সে অর্থাৎ নবুয়াতের দশম বর্ষে, হিজরতের দেড় বছর পূর্বে ৬২০ খৃষ্টাব্দের রজব মাসের ২৬তারিখ দিবাগত রাতে লাইলাতুল মিরাজের মহিমান্বিত ও বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। মিরাজের প্রথম পর্যায়ে অর্থাৎ মক্কা নগরের কাবা শরিফে বা মসজিদুল হারামের হাতিম থেকে পবিত্র জেরুজালেমের মসজিদুল আকসা অবধি বোরাকে আরোহন ও অবতরণ করা পর্যন্ত ইহলোক ভ্রমনকে “ইসরা” বলা হয়। এখান থেকেই নূরের চলন্ত সিঁড়ি যোগে মহাকাশ তথা উর্দ্ধলোকে সফরকে মিরাজ বলে। সামগ্রিক ভাবে এ নভোমন্ডল পরিভ্রমন শবে মিরাজ নামে পরিচিত। পৃথিবীর ইতিহাস এহেন শীর্ষ স্থানীয় ও যুগান্তকারী ঘটনা পবিত্র কুরআনে একাধিক সুরায় ও হাদিস শরীফে সর্বস্তরে লাইলাতুল মিরাজের বর্ণনা রয়েছে। মহানবী (সঃ) কে হাতিমের কাছে নিয়ে আসা হয়। এরপর যমযমের নিকট নিয়ে তাকে সিনা চাক বা বক্ষ বিদারন করা হয়। তারপর যথা সময়ে পানি দ্বারা ধৌত করে ঈমান ও হিকমত দ্বারা পরিপূর্ন ও শক্তিশালী করতঃ পুনরায় যথাস্থানে সংস্থাপন করলেন। এরপর রাসুল (সঃ) অজু করে হাতিমের নিকট ২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন। পরে বিদ্যুতের চেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন একটি বেহেশতী যান “বোরাকে” নবীজিকে আরোহন করানোর সঙ্গে সঙ্গেই তা দ্রুতগতিতে ছুটতে থাকে। এক হাজার মাইল দূরুত্বে প্রথমে মদিনা মুনাওয়ারা পরে সিনাই পর্বত, তারপর হযরত ঈসা (আঃ) এরজন্ম স্থান “রায়তে লাহম” হয়ে এক নিমিষে চোখের পলকে জেরুজালেমের মসজিদুল আকসা তথা বায়তুল মুকাদ্দসে গিয়ে পৌঁছালেন। এখানে সকল নবী রাসুল নবিজীকে প্রানঢালা স্বাগতম ও অপূর্ব সংবর্ধনা জানান। হযরত জিব্রাইল আমিন আযান ও ইকামত দেন। নবী রাসূলদের মুকুট মনি সেখানে আম্বিয়া কেরামগনের সঙ্গে দুই রাকাত নামাজের জামাতে ইমামতি করেন। তিনি হলেন ইমামূল মুরসালিন অর্থাৎ সকল নবী রসূলের ঈমাম। নামাজের পর জিব্রাইল (আঃ) উপস্থিত সকলের সঙ্গে রাসুলাল্লাহ (সঃ) এর আনুষ্ঠানিক পরিচয় করিয়ে দেন। নৈশভ্রমনের প্রথমাংশ সমাপ্ত হওয়ার পর নবী করিম (সঃ) পুনরায় বোরাকে আরোহন করলে তা দ্রুতগতিতে ঊর্ধ্বলোকে যাত্রা শুরু করে। প্রথম আসমানে হযরত আদম (আঃ), দ্বিতীয় আসমানে হযরত ঈসা (আঃ) ও ইয়াহিয়া (আঃ), তৃতীয় আসমানে হযরত ইউসুফ (আঃ), চতুর্থ আসমানে হযরত ইদ্রিস (আঃ), পঞ্চম আসমানে হযরত হারুন (আঃ), ষষ্ঠ আসমানে হযরত মুসা (আঃ) এবং সপ্তম আসমানে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর সঙ্গে মহানবী (সঃ) এর সাক্ষাত হয় এবং পরষ্পর শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় হয়।

সপ্তম আসমানে অবস্থিত আসমানি ক্বাবাগৃহ বায়তুল মামুরে তিনি অসংখ্য ফেরেস্তাদের নামাজ আদায় করতে দেখেন। এরপর, তিনি জিব্রাইল (আঃ) এর সঙ্গে বেহেস্থ ও দোযখ পরিদর্শন করেন। এভাবে সপ্তম আসমান থেকে ‘‘সিদরাতুল মুনতাহা’’ পর্যন্ত এসে সফর সঙ্গি হযরত জিবরাঈল (আঃ), হযরত মিকাঈল (আঃ) ও রাসুলাল্লাহ (সঃ) এর ঐশী বাহন বোরাকের গতি স্থির হয়ে যায়। জিবরাঈল (আঃ) এখানে থমকে দাড়িয়ে মহানবী (সঃ) কে বললেন যে, সামনে অগ্রসর হওয়ার আর কোন ক্ষমতা তার নেই। এখানেই রাসুলাল্লাহ (সঃ) ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ) কে তার স্বরূপে দেখতে পান। নবীজির বাহনের এখানে পরিবর্তন হয়। ‘রফরফ’ নামক বিশেষ স্বর্গীয় বাহনে আরোহণ করে রাব্বুল আলআমিনের অসীম কুদরতে কল্পনাতীত দ্রুত বেগে ৭০ হাজার নূরের পর্দা পেরিয়ে আরশে মোয়াল্লার (আরশে আজীম) সন্নিকটে পৌছায়ে আল্লাহ’র দরবারে হাজির হলেন। নূর আর নূরের সৌরভের মহাসমারোহে তিনি অভিভূত হয়ে যান। এখানেই আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর দিদার ও কথোপকথন হয়। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) একমাত্র মহামানব যিনি সশরীরে চর্মচক্ষে এ সময়ে আল্লাহ’র একান্ত সান্নিধ্য লাভ করেন। রাসুলাল্লাহ (সঃ) করুণা ও শুভেচ্ছার নিদর্শণ স্বরূপ পুরষ্কার হিসেবে আল্লাহ’র বান্দানের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে ওই রাত ও ঊষার সন্ধিক্ষণে আবার মক্কায় নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি ফিরে এসে দেখতে পান তার অজুর পানি তখনো গড়াচ্ছে এবং বিছানা ঊষ্ণই ছিল।

অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, মহানবী (সঃ) এর এই বিশ্বময়কর ও আশ্চার্যজনক ভ্রমণে দীর্ঘ ২৭ বছর কেটে যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য প্রথম পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হলেও পথিমধ্যে হযরত মুসা (আঃ) এর পরামর্শে আল্লাহর দরবারে সুপারিশক্রমে ১০বারে কমতে কমতে পাঁচ ওয়াক্তে এসে দাড়ায়। তবে পাঁচ ওয়াক্ত পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের সমান সওয়াবদানভুক্ত হিসেবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এখানে আরো উল্লেখ্য যে, নামাজ যেহেতু আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্যের বাস্তবরূপ সেহেতু নামাজ আল্লাহর সঙ্গে মিরাজ সমতূল্য। নামাজের মাধ্যমেই আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যায় এবং মুমিনগণ আত্মিকভাবে আল্লাহর দিদার পেয়ে থাকে। বস্তুত: মহানবী (সঃ) এর মিরাজ একটি বিস্ময় সৃষ্টিকারী মোজেজা এবং এটি রাসূলাল্লাহ (সঃ) এর মিরাজের অনুপম শিক্ষা বিভিন্ন দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। মহাবিশ্বে পরিভ্রমণের মাধ্যমে সৃষ্টি রহস্য উদঘাটনের পরম সৌভাগ্য রাসুল্লাহ (সঃ) কে প্রদান করে মানব মর্যাদার শ্রেষ্ঠত্ব আল্লাহতায়ালা মিরাজের মাধ্যমে নির্ধারণ করেছেন। এ রাতে বায়তুল মোকাদ্দাসে মহানবী (সঃ) এর ইমামতিতে হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে সকল নবী রাসুলের নামাজ আদায় করার মাধ্যমে নবীজির সর্বশ্রেষ্ঠত্ব ও তার নৈতিক, আদর্শিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষার অনুসরণীয় বিশ্বজনীন স্বরূপটিই প্রমাণিত হয়।

 

লেখক:
সাবেক অধ্যক্ষ, কলারোয়া সরকারি কলেজ, সাতক্ষীরা।
সাবেক কলেজ পরিদর্শক, যশোর শিক্ষা বোর্ড ও বরিশাল শিক্ষা বোর্ড।
সাবেক ডেপুটি রেজিষ্ট্রার, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।
মোবা: ০১৭১৭-০৮৪৭৯৩

একই রকম সংবাদ সমূহ

এবার বাংলাদেশেও ভাঙল প্রচলিত নিয়ম, যাত্রী নিয়ে বিয়ে করতে বরের বাড়িতে কনে!

এবার বাংলাদেশেও ভাঙল প্রচলিত নিয়ম, যাত্রী নিয়ে বিয়ে করতে বরেরবিস্তারিত পড়ুন

কলারোয়ায় উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের সাথে পুষ্টি বিষয়ে গোলটেবিল বৈঠক

কলারোয়ায় উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের সাথে পুষ্টি বিষয়ে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিতবিস্তারিত পড়ুন

ভালোবাসার সুড়ঙ্গ রহস্য (ভিডিও)

প্রকৃতি অপার রহস্যের ভান্ডার। তাই সে মাঝে মাঝেই আমাদের চমকেবিস্তারিত পড়ুন

  • কিডনি রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
  • ঝুঁকি নিয়ে ছবি তুলে আলোচনায় দম্পতি
  • এক বছর পরও নড়াচড়া করে মৃতদেহ!
  • সেলফি তোলায় ছড়াচ্ছে উকুন!
  • আলসেমি দূর করার উপায়
  • রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে উপকারী আমড়া
  • সেলফির কারণে দ্রুত ছড়াচ্ছে উকুন!
  • হৃদরোগ প্রতিরোধের সহজ মন্ত্র
  • কাশ্মীরের একটি গ্রামের নাম ‘বাংলাদেশ’
  • ফেসবুকে নতুন ফিচার চালু, ডিলিট হবে সবকিছু
  • ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তায় ফেসবুকে নতুন ফিচার
  • সৌরশক্তিতেই চলবে শাওমি