মাদক নিরাময় কেন্দ্র নাকি টর্চার সেল?
মাদকের বিষে দেশের ভবিষ্যৎ ধাবিত হচ্ছে মৃত্যুর সুনিশ্চিত গন্তব্যে। মাদকের ছোবলে ভাঙছে সংসার, ধসে পড়ছে সমাজ, হারিয়ে যাচ্ছে মেধা। বাড়ছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, খুন। সন্তানের হাতে জীবন দিচ্ছে বাবা-মা, বাবা-মার হাতে নিভছে সন্তানের জীবন প্রদীপ। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে খুনোখুনি হচ্ছে নিত্যদিন। এমন দুর্বিষহ বাস্তবতার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেনীর অসাধু মানুষ মাদক নিরাময়ের নামে চালিয়ে যাচ্ছেন মানহীন নিরাময় কেন্দ্রের ব্যাবসা। যেখানে নিয়ম-নীতিমালার তোয়াছ করাতো হচ্ছে না। বরং অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়েছে। এমনই একটি উদাহরণ খুলনার ‘কথা মাদকাসক্তি নিরাময় ও মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র’।
মহানগরীর ১৮, সামসুর রহমান রোডে রাজিয়া মঞ্জিলের দ্বিতল ভবনে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটি ‘‘মাদক ছাড়া বাঁচবো, সুন্দর জীবন গড়বো’’ শ্লোগান নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
অনুমোদন ছাড়া মাদকাসক্তদের চিকিৎসার নামে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ কথা নামের অবৈধ মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের। এ প্রতিষ্ঠানের নেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের লাইসেন্স, মানা হয় না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোনো নীতিমালা। সেখানে পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই, নার্স নেই, ওষুধ নেই। এমনকি নেই মাদকাসক্ত ও মানসিক রোগীদের পৃথক থাকার ব্যবস্থা নেই, সেবার মূল্য তালিকা। মোটকথা মানসিক ও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের চিকিৎসা সুবিধা বলতে কিছুই নেই।
তবে আছে মাদকাসক্তি নিরাময়ের নামে মাদকদ্রব্য বেচা কেনার অভিযোগ। আছে মাদতাসক্তদের ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ। সম্প্রতি এক ভূক্তভোগীর লোমহর্ষক বর্ণনায় ‘কথা নিরাময় কেন্দ্রে’র ব্যাপারে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। যা অডিও রেকর্ড এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। তার ভাষ্যমতে, এ কেন্দ্রটি একটি টর্চার সেল হিসেবে কাজ করে । সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে রোগীর ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। মাদকাসক্ত রোগী একসঙ্গে ভর্তি করে বছরের পর বছর কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের মতো করে সেবা দেয়ার নামে হাতিয়ে নেয় স্বজনদের অর্থ-কড়ি কথা নিরাময় কেন্দ্র। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই সেখানে। ফলে ছারপোকার কামড়ে অনেক রোগীর হাত-পায়ে চর্মরোগের সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া মাদকের ব্যবসা পরিচালনা ও রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো অর্থ আদায় করার অভিযোগতো রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে জমি সংক্রান্ত ঝামেলা ও বিত্তশালী পরিবারের সম্পদ বাগিয়ে নিতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতার অভিযোগ আছে এই মাদক নিরাময় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। সম্পদের উত্তরাধিকারী মাদক গ্রহন করেনা অথচ তাকে মাদকাসক্ত বানিয়ে দেয়া হয়। নেপথ্যে কাজ করে সম্পদশালীর জমি ভোগ দখল ও সম্পদ লুন্ঠনের। এজন্য মোটা অংকের অর্থের বিনিময় এ কেন্দ্রের রি-কভারীরা কৌশলে অপহরন করে আটকে রাখে বছরের পর বছর।
এভাবে দীর্ঘ দিন আটক আর রি-কভারীর নির্যাতনের ফলে প্রায় ৫/৬জন এখন মানসিক রোগীতে পরিণত হয়েছে। এমনই একজন হতভাগা লাবিব, সে কোন নেশা জাতীয় দ্রব্য ব্যাবহার করেনা, অথচ তার টাকা পয়সা ও তার সম্পদ ভাগিয়ে নিতে তার মামাতো ভাই কথা সদস্যদের মোটা অংকের অর্থ দিয়ে, দীর্ঘদিন নির্যাতন করে মানসিক রোগীতে পরিণত করেছেন।
শুধু লাবিবই নয়, জামান, আকরাম, লাভু, শিকদার, মনিরসহ প্রায় ৩০/৩৫জন সেখানে বন্ধী জীবন যাপন করছে। কথা নিরাময় কেন্দ্রে বিত্তশালী পরিবারের সন্তানকে বেশি নির্যাতন করে মোটা অংকের টাকার জন্য। নির্যাতন শুরু হয় বাথরুমে সাতদিন আটকে রাখার মাধমে। এরপর চলে ২লিটার পানিভর্তি বোতল গোপনাঙ্গে বেধে ঝুলিয়ে রাখা, কাকরা বন্দ নির্যাতন, পায়ের তলে লাঠি মালিশ ও যীশু খ্রীস্টর শুল নির্যাতন, খাবার বন্দসহ অসংখ্য নির্যাতনের বর্ননা।
জানা গেছে, কথা মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের চেয়ারম্যান নগরীর আমতলার বাসিন্দা আবুল হোসেন শামীম। এছাড়া পরিচালক তসলিম আরিফ সোহান সহ খলিল, বাপ্পী, রিয়াদ, তাপস, মৃদুল, ইমরান ও স্বপন রয়েছে পরিচালনায়। এ কেন্দ্রে নির্যাতনের সময় বিকট শব্দে গান বাজানো হয় এবং আজানের সময় রুগিদের ধুমপানে বাধ্য করা হয়। খুলনাসহ আশপাশ জেলার সম্পদশালী পরিবারের কোন সদস্য গুমের স্বীকার হলে তাকে কথা নিরাময় কেন্দ্রে পাওয়া যাবে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে ।
এবিষয়ে সরেজমিনে কথা মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে গেলে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন পরিচালক শেখ বাপ্পি ও খলিল। এরা দুজনই রিকভারী। এরমধ্যে একজন বলেন, সপ্তাহে একবার চিকিৎসক আসেন, অপরজন বলেন সন্ধ্যায় চিকিৎসক আসেন। তবে কোন নার্স বা সেবিকা, সার্বক্ষণিক চিকিৎসক নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন শামীম মুঠোফোনে বলেন, আপনারা অপেক্ষা করেন, আমি আসছি। এসময় সে সমাজের কতিপয়ের নাম উল্লেখ করে বলেন, এদের চেনেন নাকি, তারা আমার নিকটজন। এসময়ের মধ্যে আরেক পরিচালক তসলিম আরিফ সোহান অফিসে এসে উত্তেজিত কন্ঠে সাংবাদিকদের আগমনের কারণ জানতে চান এবং নিজেকে পরিচালক দাবি করেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় রোগীদের বিস্তারিত তালিক ও কেস স্টাডি আছে কিনা, ডাক্তার, নার্স কজন এবং পরিচালনা কমিটিতে কয়জন? প্রতুত্তরে সে বলে, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কোন তথ্য দিতে পারবোনা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: রাশেদুজ্জামান জানান, ওই মাদক নিরাময় কেন্দ্রের কোন অনুমোদন এখনও দেয়া হয়নি। তারা আবেদন করায় বিষয়টি তদন্ত করে লাইসেন্স দেয়া যাবে কিনা তা বিবেচনা করা হবে। যদি কোন ত্র“টি পাই বা অভিযোগ ওঠে তবে লাইসেন্স দেয়া হবেনা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
ঢাবিতে ভর্তিচ্ছুদের সহায়তায় বাগেরহাট জেলা
গত ১৩ তারিখ অনুষ্ঠিত ‘গ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতেবিস্তারিত পড়ুন
এমটিসি গ্লোবাল একাডেমিক লিডারশীপ অ্যাওয়ার্ড পেলেন এনইউবিটি খুলনার উপাচার্য
নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি খুলনা-এর উপাচার্য প্রফেসর ড.বিস্তারিত পড়ুন