মরা বাড়িতে কান্না করাই যাদের পেশা!
দুনিয়া জুড়ে কত শত অদ্ভুত পেশা রয়েছে তার কোন হিসাব নেই। তেমনি অদ্ভুত এক নতুন পেশার খবর পাওয়া গেছে, যা আমাদের কাছে নতুন হলেও এই প্রথা অনেক বছর ধরে চলে আসছে। এটি হল মরা বাড়িতে কান্না করার পেশা!
মারা যাওয়া কোন ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে কালো কাপড় পরিহিত একদল নারী কান্না করতে থাকেন। তারা বুক এবং মাটি চাপরে ফুঁপিয়ে কান্না করতে থাকেন। তাদের মোটামোটা চোখের পানিতে গালে দাগ পড়ে যায়, কিন্তু সেটি মুছে ফেলা নিয়ে তারা মোটেও চিন্তিত না। সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে তাদের কান্নাকাটি দেখে। ভারতের এই পেশাদার সম্প্রদায় রুদালি নামে পরিচিত। এরা অর্থের বিনিময়ে বিলাপ করে থাকে।
রুদালিরা কেবল মৃত্যুর দেবতা ইয়ামার পছন্দের রঙ কালো পোশাক পরে থাকে। তারা সমাজের নিচু বর্ণের লোক এবং তাদের বিয়ে করবারও অনুমতি নেই, কেননা যদি তারা পরিবারের মধ্যে সুখ খুঁজে পায় তাহলে শেষকৃত্যানুষ্ঠানে কে কাঁদবে?
আর সবার কাছে এটি অদ্ভুত একটি পেশা মনে হলেও রাজস্থানে বহু বছর ধরে এই ঐতিহ্য টিকে রয়েছে। আসলে অন্য সম্প্রদায়ের সামনে উঁচু বর্ণের নারীদের আবেগ প্রদর্শন করার অনুমতি নেই। তারা সাধারণ পর্দার মধ্যে অট্টালিকার ভেতরই থাকেন। তাই এই দায়িত্ব পালন করেন রুদালিরা।
কিন্তু এমন না যে, রুদালিরা ইচ্ছাকৃতভাবে এ ধরনের পেশা বেছে নেয়। তাদের এমনটা করতে বাধ্য করা হয়। আর তাদের চোখের জলের বিনিময়ে ধনীরা পয়সা দেয়, আর শান্তির নিঃশ্বাস নেয়। সমাজে এসব নারীদের নিচু অবস্থান দেয়া হয়, যার ফলে তারা প্রায়ই শোষণের শিকার হন। এসব নারীদের অনেকেই উঁচু বর্ণের ব্যক্তিদের অবৈধ সন্তানের জন্ম দেন। তবে যদি তারা মেয়ে সন্তানের জন্ম দেয়, তাহলে সে তাৎক্ষণিকভাবে কান্না পার্টির একজন হয়ে যায়।
এদিকে অপরিচিত এসব ব্যক্তির জন্য কান্না করে দিলেও খুব বেশি অর্থ পান না রুদালিরা। ফুঁপিয়ে কাঁদা ও মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া, হাউমাউ করে কাঁদা, বুক চাপরানো এবং মৃতদেহের সৎকার পর্যন্ত সঙ্গ দেয়ার জন্য ৫ থেকে ৬ রুপি পান। অনেক সময় তাদের ভাত এবং পুরনো কাপড়ও দেয়া হয়। তবে খাবারের মধ্যে কাঁচা পেঁয়াজ আর বাসী রুটিই বেশি দেয়া হতো তাদের।
পারফরম্যান্স ভালো করতে রুদালিরা নিজেদের জীবনের দুঃখ-কষ্টের কথা মনে করার চেষ্টা করে। তবে সবসময় কিন্তু চাইলেই চোখের পানি পড়ে না, তখন শুধু মুখের বিলাপই ভরসা। তবে যারা পুরোপুরি পেশাদার, তাদের নিজস্ব কিছু কৌশল আছে চোখে পানি আনার। কেউ কেউ থুতু লাগিয়ে মুখে পানির রেখা তৈরি করেন কেউবা এক ধরনের গাছের শেকড় ব্যবহার করেন যা অনেকটা গ্লিসারিনের মতো কাজ করে। কাজলের মতো এক ধরনের কালিও পাওয়া যায়, যা চোখে লাগানোর সাথে সাথে তীব্র জ্বলুনি শুরু হয় আর চোখের পানি পড়তে থাকে।
নিষ্পেষিত এই সম্প্রদায়ের জীবনের কঠিন সত্য অবলম্বনে ‘রুদালি’ নামে বলিউডে সিনেমাও নির্মিত হয়েছে। ১৯৯৩ সালে নির্মিত ওই ছবিটির পরিচালনা করেছেন-কল্পনা লাজমী। আর তাতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডিম্পল কাপাডিয়া।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
পাকিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১৯ জনের মৃত্যু
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে শক্তিশালী ৫ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাতে ১৯বিস্তারিত পড়ুন
২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় হিক্কা
ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিক্কা। এর ফলে ঝড়ের পাশাপাশি ভারীবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন