পাটকেলঘাটায় মা খুনের ঘটনায় মামলা দায়ের, মেয়ে পলাতক
ঢাকার পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে ঐশি কর্তৃক বাবা-মাকে হত্যার পর এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে সাতক্ষীরা পাটকেলঘাটার নেশাগ্রস্ত মেয়ে টুম্পার লাঠির আঘাতে মাকে হত্যার বিষয়। অবশেষে মর্মান্তিক এই হত্যাকাণ্ডের দুই দিন পর পাটকেলঘাটা থানায় মায়ের খুনের অপরাধে মেয়ে টুম্পাকে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।
বুধবার রাতে পাটকেলঘাটা থানার এস আই আসাদুজ্জামান বাদি হয়ে হত্যা মামলাটি দায়ের করেছেন। যার মামলা নং ৫, তারিখ ১২.৯.১৮ ইং।
এদিকে ঘটনার রাতে নিহত মা মমতাজ খাতুনের লাশ ময়না তদন্তের জন্য পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে আসার পর এলাকা ছেড়ে কৌশলে পালিয়ে যায় মেয়ে টুম্পা খাতুন। এর পর থেকে টুম্পাকে এলাকায় আর দেখা যায়নি। মায়ের লাশ দাফনের সময়ও টুম্পা নিহত মায়ের পাশে ছিলোনা। মমতাময়ী মায়ের শেষ মুখটুকুও সে দেখিনি। পুলিশ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত টুম্পা থাতুনকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
পাটকেলঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল ইসলাম জানান- মমতাজ বেগম হত্যাকান্ডের ঘটনায় থানায় বুধবার রাতে একটি হত্যা মামলা রেকর্ড হয়েছে। পাটকেলঘাটা থানার এস আই আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে নিহতের মেয়ে টুম্পা খাতুন (২৪) কে একমাত্র আসামী করে থানায় একটি হত্যা মামলাটি দায়ের করেছে। লাশের গায়ে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিলো। প্রাথমিক ভাবে এটি একটি হত্যাকান্ড বলে পুলিশ মনে করে। বিধায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেছে। তিনি বলেন, ঘটনার সময় আমি ছুটিতে ছিলাম। আমি থাকলে আসামী টুম্পা খাতুন পালিয়ে যেতে পারতো না। তিনি বলেন, এই হত্যা মামলার আসামী টুম্পা খাতুনকে গেফতারের জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি যে কোন সময় তাকে আমরা গ্রেফতার করতে পারবো।
এ বিষয়ে এলাকাবাসী জানায়- বেশ কয়েক বছর আগে মমতাজ বেগমের স্বামী আব্দুস সবুর সরদার মারা গেছে। নিহতের স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে টুম্পা খাতুন সোমবার দুপুরে পারিবারিক কলহের জেরধরে তার মা মমতাজ খাতুন (৫০) কে ঝগড়ার এক পর্যায়ে লোহার রড দিয়ে সজোরে মাথায় ও ঘাড়ে আঘাত করে। এতে মমতাজ খাতুন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সাতক্ষীরার চায়না বাংলা হাসপাতাল ও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু রোগির অবস্থা খারাপ দেখে তারা ভর্তি করতে রাজি হয়নি। পরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার আরো অবনতি হলে তাকে খুলনার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথিমধ্যে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে তার মৃত্যু হয়। রাতেই তার লাশ গ্রামের বাড়িতে এনে টুম্পা প্রচার করতে থাকে, তার মা ষ্টোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। স্থানীয়রা জানতে পেরে পাটকেলঘাটা থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ওই রাতেই লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। মঙ্গলবার দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে পুলিশ নিহতের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে।
তারা আরো জানায়- মেয়ে টুম্পা খাতুনের বিয়ে হয় সাতক্ষীরার সংরক্ষিত আসনের এমপি মিসেস রিফাত আমিনের ছেলে রুমনের সাথে। প্রায় আড়াই বছর আগে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। টুম্পা খাতুন প্রায় তার মাকে মারধর করতো। স্বামাীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর থেকে টুম্পা এলাকায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে। উশৃঙ্খল জীবন ছিল তার। তার একমাত্র ভাই শরীফও নেশাগ্রস্ত। টুম্পার একটি ৩ বছর বয়েসের ছেলে রয়েছে। মেয়ে টুম্পার বেপরোয়া চলাফেরা পছন্দ করতো না তার মা মমতাজ বেগম। সোমবার সকাল ৮ টার দিকে এনিয়ে গন্ডগোলের জেরধরে টুম্পা তার মাকে লোহার রড দিয়ে ঘাড়ে ও মাথায় আঘাত করে । এর পর মা কয়েক বার বমি করে। পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আর জ্ঞান ফিরেনি। বাড়ির লোকজন তার মা কে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
এদিকে এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তার মা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে এলাকায় প্রচার দেয় মেয়ে টুম্পা খাতুন। পুলিশ ঘটনার রাতেই নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। এরই মধ্যে কৌশলে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায় টুম্পা খাতুন।
তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, গত সোমবার রাতে পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য মমতাজ খাতুনের লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে মেয়ে টুম্পা খাতুন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। প্রায় সারাটা দিন হাসপাতালের বারান্দায় মায়ের লাশ পড়ে থাকলেও পাশে একমাত্র মেয়ে টুম্পা খাতুনের দেখা মেলেনি। একমাত্র মাদকাসক্ত ছেলে শরীফ হাসপাতালে ভর্তি। লাশ যখন পুলিশের কাছ থেকে নিহতের আত্মীয়স্বজন গ্রহন করে তখনও মেয়ে টুম্পা খাতুন পাশে ছিলনা।
অপরদিকে এই হত্যাকান্ড থেকে নিজেকে বাঁচাতে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে খুনি টুম্পা খাতুন। মা হত্যার দায় থেকে এ যাত্রায় রক্ষা পেতে বিভিন্ন মহলে দৌড়-ঝাপ শুরু করছে সে। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রভাবশালী নেতা ও কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার সাথে আগে থেকে টুম্পার রয়েছে ওঠা-বসা। সেই সব রাজনৈতিক নেতা ও কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার সহযোগিতা নিয়ে মা হত্যাকান্ডের এই ঘটনা থেকে এ যাত্রায় বাঁচার চেষ্টা করছে টুম্পা।
প্রসঙ্গত, গত ১০ সেপ্টম্বর সোমবার সকাল ৮টার দিকে নগরঘাটা গ্রামের মৃত আব্দুর সবুর সরদারের স্বামী পরিত্যক্তা কন্যা টুম্পা খাতুন পারিবারিক কলহের জেরধরে তার মা মমতাজ খাতুন (৫৫) কে ঝগড়ার এক পর্যায়ে রড দিয়ে সজোরে আঘাত করে। এতে মমতাজ খাতুন মাথায় ও ঘাড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ভর্তি করে। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে খুলনার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। এই আয়নায় সমাজেরবিস্তারিত পড়ুন
তালায় ইউএনও’র প্রেরণায় গার্লস হাইস্কুলে ডেইলি স্টার কর্নার চালু
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও’র অনুপ্রেরণায় শহীদ আলী আহম্মেদ বালিকাবিস্তারিত পড়ুন