পরিকল্পিত মামলায় তালার বারবার নির্বাচিত ইউপি সদস্য নিমাই সানা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন!
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খেশরার বার বার নির্বাচিত ইউপি সদস্য নিমাই সানাকে ফাঁসাতে এলাকার একটি প্রভাবশালী চক্র দীর্ঘ দিন যাবৎ উঠে পড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। এমনকি মিথ্যা মামলায় হাজতবাসের পর এবার পরিকল্পিতভাবে তাকে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে জাল মেডিকেলের সনদ সরবরাহের দায়ে। এমনতর অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আদালত নিমাইসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেছে।
ইউপি সদস্য ও তার পরিবারসহ এলাকাবাসী জানায়- ২০১৬ সালের ২২ মার্চ ইউপি নির্বাচনের পরের দিন ২৩ মার্চ দুপুর ১২ টার দিকে ইউপি নির্বাচনে খেশরা ইউপির ১নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য ও কুলপোতা গ্রামের মৃত করুনাময় সানার ছেলে নিমাই সানার সমর্থক ও পরাজিত প্রার্থির সমর্থক মেশেরডাঙ্গা গ্রামের মৃত প্রফুল্ল ব্যানার্জীর ছেলে কার্ত্তিক ব্যানার্জীর মধ্যে কাথাকাটাকাটি এক পর্যায়ে কাত্তিক ব্যানার্জীর ভাই আদিত্যসহ অন্যান্যরা নিমাইয়ের সমর্থকদের মারপিট করে। এতে কয়েকজন আহত হয়। এঘটনায় উভয় পক্ষ পরষ্পরকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালতে পৃথক পৃথক দু’টি মামলা করেন। যার একটি মামলার বাদী ইউপি সদস্য নিমাই সানা নিজেই। যার নং-২৯/১৬।
অপর মামলাটি করেন,কাত্তিকের ভাই আদিত্য ব্যানার্জী। ২৪ মার্চ দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয় যে,নব নির্বাচিত ইউপি সদস্যসহ অন্যান্যরা তার ভাই কাত্তিককে বাড়িতে না পেয়ে তার স্ত্রী নমিতাকে পিটিয়ে মাথা ফাঁটিয়ে দেয়। এঘটনায় নিমাইকে প্রধান করে ২০ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতনামা আরো ১৫/২০ জনকে আসামী করে তালা থানায় ঐ মামলাটি দায়ের করেন। যার নং-১২। উদ্ভুদ জিআর মামলা নং২৯/১৬। পরে মামলাটি বিচারের জন্য চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্থানান্তর হয়,যার টিআর মামলা নং-৩০৮/১৮।
উভয় মামলায় আসামীরা জেল-হাজত খেটেছেন। একপর্যায়ে ঘটনার প্রায় আড়াই বছর পর চলতি বছরের ১০ মে’ নমিতা ব্যানার্জীর মৃত্যু হলে মামলাসহ নানা আইনী জটিলতায় লাশের সৎকার করতে না পেরে ৪ দিন পর ১৩ মে নিহতের ভাসুর ও সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী প্রভাষক আদিত্য ব্যানার্জী বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নমিতার মৃত্যুর বিষয়টি অবহিতপূর্বক তার লাশের সৎকারের জন্য আবেদন করলে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক বিলাশ মন্ডল মামলাটির সত্য-মিথ্যা নির্ধারণপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদিসহ ১১ জুলাই প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাতক্ষীরা জেলা গোয়েন্দা শাখা(সিআইডি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
এরআগে ইউপি সদস্য নিমাই সানার দায়ের করা মামলায় সরবরাহকৃত মেডিকেল সনদগুলী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জাল বলে প্রতিয়মান হলে আসামীদের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেন। এখানে নিমাইসহ এলাকাবাসীর প্রশ্ন আদালতের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল থেকে নিয়মানুযায়ী সরাসরি মেডিকেল সনদ সরবরাহের কথা। ভূয়া বা জাল সনদ সরবরাহ হলে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষই তার জন্য দায়ী থাকবেন।
অথচ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা তাদেরকে বাদ রেখে ইউপি সদস্যকে জড়িয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করায় বিষয়টি তাদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এছাড়া ঘটনার দিন ইউপি সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলেও তাকে উপস্থিত দেখিয়ে মামলাটি দায়ের হয়। এবং পরবর্তী পর্যায়ে আইনের মারপ্যাচে তাকেসহ অন্যান্যদের ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।
এলাকাবাসী জানায়,মৃত নমিতার ভাসুর(স্বামীর বড় ভাই) আদিত্যর সাথে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য নিমাই সানার বিভিন্ন সময় নানা কারণে বিবাদ চলে আসছিল। যার জের হিসেবে প্রথমত ২৩ মার্চের গোলযোগে অনুপস্থিত নিমাইকে সম্পৃক্ত করে মামলাটি দায়ের করেন। পরে ঘটনার প্রায় আড়াই বছর পরে রোগ-শোকে মৃত্যু নমিতার মৃত্যুর জন্যও তাকে দায়ী করেন। শুধু এখানেই শেষ নয়,নমিতার মৃত্যুর পর তার লাশের সৎকার না করে পাবলিক সেন্টিমেন্ট গ্রো এমনকি আদালতের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা নিতে তার মৃত্যুর ৪ দিন পর্যন্ত লাশ বাড়িতে বরফজাত করে রেখে আদালতকে জানায়,মারামারির ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। এরপর আদালত স্পর্ষকাতর মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিতে হস্তান্তর করে।
স্বপন দেবনাথের দায়ের করা খুলনার বিজ্ঞ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ইউপি সদস্য নিমাই সানাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং-সিআর ৪২৯/১৭। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দীর্ঘ অনুসন্ধানে আদালতে জাল মেডিকেল সনদের বিষয়টি উঠে আসে। পাশাপাশি সনদগুলোর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় ভুক্তভোগীদের পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবী খুমেক হাসপাতালের সুপারকে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন। এর জবাবে খুমেক হাসপাতালের সুপার ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল’ ১০২৫ নং স্মারকে সংশ্লিষ্ট মেডিকেল সনদগুলো সঠিক নয় বলে প্রত্যয়ন দেন। তবে কি করে কারা সনদগুলো সরবরাহ করেছে তার বিস্তারিত কিংবা আইনের আওতায় আনা হয়নি বলেও অভিযোগ ভূক্তভোগীদের। তাদের দাবি,পরিকল্পিতভাবে তাদেরকে ফাঁসাতে আদিত্য গং সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে।
প্রসঙ্গত,মামলায় দীর্ঘ শুনানী শেষে বিজ্ঞ আদালত ১৫ সেপ্টেম্বর’২০১৯ সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য নিমাই সানাসহ কামনাশীষ মন্ডল ও অম্বিক মন্ডলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন।
মূলত নিমাই সানাকে আইনের মারপ্যাচে আটকে তার ইউপি সদস্য পদটি খারিজ করতে আদিত্য গং দীর্ঘ দিন যাবৎ ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় সাংবাদিকদের সরবরাহকৃত তথ্যে এনিয়েও দাবি তোলা হয় বলে এলাকাবাসী জানান। তারা সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনে প্রশাসনের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। এই আয়নায় সমাজেরবিস্তারিত পড়ুন
তালায় ইউএনও’র প্রেরণায় গার্লস হাইস্কুলে ডেইলি স্টার কর্নার চালু
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও’র অনুপ্রেরণায় শহীদ আলী আহম্মেদ বালিকাবিস্তারিত পড়ুন