আরো খবর...
নড়াইলে কলেজছাত্রীকে ধর্ষন: রক্তক্ষরণে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা
নড়াইলে সংখ্যালঘু পরিবারের কলেজ পড়ুয়া কন্যাকে একাধিকবার ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে। বখাটে মাকতুল কর্তৃক বার বার ধর্ষনের কারনে গর্ভবতী ওই কলেজছাত্রী জোরপূর্বক অ্যাবরশন করায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
মারাত্মক ধর্ষক বখাটে মাকতুল মোল্যা নড়াইল পৌর এলাকার ডুমুরতলা গ্রামের মুফা মোল্যার ছেলে।
ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ওই কলেজছাত্রীর বাবা না থাকায় সে পারিবারিক কারনে মাঝে মধ্যে বাজারে আসে এবং লেখাপড়ার জন্য স্কুলে ও প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে যাতায়াত করে। যাতায়াতের পথে তার উপর কুনজর পড়ে নড়াইল সদর হাসপাতাল গেটের চায়ের দোকানদার মুফা মোল্যার ছেলে মাকতুল মোল্যার। মাকতুল নানা ভাবে ওই কলেজছাত্রীকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে তাকে উত্যক্ত করতে শুরু করে। এতে ওই কলেজছাত্রী বিরক্ত হয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু বাবা না থাকায় সন্ত্রাসী মাকতুলের ভয়ে ওই কলেজছাত্রী বিষয়টি গোপন রাখে। এরই মধ্যে মাকতুল সুযোগ মতো ওই কলেজছাত্রীকে একা পেয়ে জিম্মি করে তার বন্ধুর বাড়ি নিয়ে ধর্ষন করে। ধর্ষনের ভিডিও ধারন করে রাখে। ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ওই কলেজছাত্রীকে একাধিকবার ধর্ষন করে। এরই মধ্যে ওই কলেজছাত্রী গর্ভবতী হয়ে পড়ে। মাকতুলের কথায় নড়াইল সদর হাসপাতালের নার্স রুপাবতী ওই কলেজছাত্রীর আড়াই মাসের গর্ভজাত সন্তান গত ২৭ জুন অ্যাবরশন করে। অ্যাবরশনে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হয়ে ওই কলেজছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। লোক জানাজানির ভয়ে ও উন্নত চিকিৎসার জন্য কলেজছাত্রীকে খুলনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করে। মারাত্মক অসুস্থ ওই কলেজছাত্রী হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এদিকে, সন্ত্রাসী মাকতুলের নিকট হতে মোটা অংকের টাকা নিয়ে একটি চক্র এ বিষয়ে নিরব থাকার জন্য কলেজছাত্রীর মাকে চাপ দিচ্ছে। আর মাকতুল বখাটে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে কলেজছাত্রীর বাড়ির পাশ দিয়ে মহড়া দিচ্ছে। আর এ বিষয়ে মুখ না খোলার জন্য কলেজছাত্রীর পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। একদিকে মেয়ের শারিরিক অবস্থার অবনতি, অপর দিকে সন্ত্রাসীদের হুমকিতে কলেজছাত্রীর মা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সচেতন মহল এ ব্যাপারে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি দুগ্ধ খামার
নড়াইলে ব্যাক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি দুগ্ধ খামার। খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা কৃষির পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন পারিবারিক ক্ষুদ্র দুগ্ধ খামার। ইতোমধ্যে নড়াইল দুধের উদ্ধৃত্ত জেলায় পরিণত হয়েছে। জেলায় দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র (মিল্ক ভিটা,আড়ং, প্রাণ) স্থাপিত হলে, বাজার নিশ্চিতকরণসহ আরো নতুন নতুন খামার গড়ে উঠবে। নড়াইল পৌর শহরের আলাদাৎ পুরের মোঃ সাইফুল্লাহ ২০০৪ সালে রসায়নে মাষ্টার্স পাশ করে চাকরির পেছনে না ঘুরে ২০০৬ সালে ৪টি গাভী নিয়ে গড়ে তোলেন দুগ্ধ খামার। নিজেই হয়েছেন উদ্যোক্তা, করেছেন অন্যের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। বর্তমানে তাঁর খামারে মোট শতাধিক গরু রয়েছে। তিনি জানালেন, অনেক বেকার যুবক তাঁর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দুগ্ধ খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। নড়াইলে দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র (মিল্ক ভিটা,আড়ং, প্রাণ) স্থাপিত হলে, বাজার নিশ্চিতকরণসহ আরো নতুন নতুন দুগ্ধ খামার গড়ে উঠবে। আইনজীবী হেমায়েত উল্লাহ (হিরু) আইন পেশার পাশাপাশি ২০১৪ সালে খামার শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর খামারে ৩০০ থেকে ৪০০লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। নিয়মিত ৮-১০জন শ্রমিক কাজ করছেন তাঁর খামারে। মিষ্টির দোকান ও বাজারের গুড়ো দুধ নিয়ন্ত্রণ করলে গরুর দুধের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি করেন তিনি (হেমায়েত উল্লাহ হিরু) স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হওয়ায় খুশি দুগ্ধ খামার শ্রমিকেরা। জেলার সাতঘরিয়া, তালতলা, কচুবাড়িয়া, এগারখানসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকেরা কৃষি কাজের পাশাপাশি ক্ষুদ্র দুগ্ধ খামার (উন্নত জাতের গাভী) গড়ে তুলছেন। এর মধ্যে জেলা শহর সংলগ্ন সাতঘরিয়া গ্রামের ১শ’ টি পরিবারের প্রত্যেকটি পরিবারে রয়েছে ৩ থেকে ৫টি গাভী। এ গ্রামেই প্রতিদিন উৎপাদিত হয় ৫০০লিটারের বেশী দুধ। সাতঘরিয়া গ্রামের ক্ষুদ্র খামারীরা জানালেন, উন্নত জাতের গাভী পালন করে তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে। তবে মাত্র ২ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার জন্য বর্ষাকালে উৎপাদিত দুধ বাজারে পৌঁছাতে পোহাতে হয় সীমাহীন দূর্ভোগ। খামারীদের দুধ বাজার জাতকরণের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এল,ডি,ডি,পি (লাইভস্টক ডেভলপমেন্ট এন্ড ডেইরী প্রডাকশান) প্রজেক্টের কাজ খুব দ্রুত শুরু হবে। এ প্রাজেক্টের কাজ শেষ হলে দুধ বাজারজাতকরণের আর কোন সমস্যা থাকবে না। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মারুফ হাসান, এ প্রতিবেদক উজ্জ্বল রায়কে জানান, দুধের বাজার জাতকরণ নিশ্চিত হলে আরো অনেক দুগ্ধ খামার গড়ে উঠবে নড়াইলে। দুধের স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের অন্যন্য স্থানেও দুধ সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এখানকার খামারীরা।
স্কুটার চালক থেকে সফল শ্যামলী পরিবহনের মালিক গনেশ চন্দ্র ঘোষ!
দারিদ্র্যকে জয় করে যারা স্বপ্ন পূরণ করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ‘শ্যামলী পরিবহনের’ চেয়ারম্যান গনেশ চন্দ্র ঘোষ। চুয়াল্লিশ বছর আগে একটি জীর্ণ পুরাতন স্কুটার থেকে একটি চকচকে নতুন বাস কেনার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। পাবনা শহরের শালগাড়িয়ার অভাবী ঘরের সেই গনেশ চন্দ্র ঘোষ আজ গোটা দেশের পরিবহন খাতের এক দিকপাল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তার সেই জীর্ণ স্কুটারটি যেন এক চারাগাছ, যা এখন মহীরুহে পরিণত হয়েছে।
তখন কেবল স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও খুব ভালো ছিল না। গনেশ ঘোষদের পরিবারেও ছিল শতেক রকমের অভাব-অনটন। তবু স্বপ্নবান মানুষটি এই অভাব-অনটনের মধ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। পড়াশোনা করার সময়ই তিন চাকার একটি স্কুটার কিনেফেলেন তিনি।
জমানো কিছু টাকা তো ছিলই। সঙ্গে ধার-কর্জও করতে হয়েছে। পাবনা শহর থেকে সুজানগর উপজেলা পর্যন্ত স্কুটারে যাত্রী বহন করে যে টাকা আয় হতো তা দিয়ে সংসার চলত। গণেশ চন্দ্র ঘোষ নিজেও স্কুটার চালাতেন। বড় সন্তান হিসেবে সংসারের ঘানি টানতে টানতেই একদিন তিনি পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে রসায়নে সম্মান ডিগ্রিটাও অর্জন করে ফেললেন। মেজ ভাই রমেশ চন্দ্র ঘোষ ও ছোট ভাই রমেন্দ্রনাথ ঘোষ নিয়মিত স্কুটার চালাতেন। আজকের শ্যামলীর বিশাল সাফল্যে এই দুই ভাইয়ের শ্রমও স্মরণীয়। আকাশছোঁয়া স্বপ্ন বাস্তবায়নে বড় ভাই গণেশ চন্দ্রের পাশে থেকে কঠোর পরিশ্রম করেছেন রমেশ ও রমেন্দ্র।
ওই সময় পাবনা শহর থেকে সুজানগর আর পাকশী ফেরিঘাট পর্যন্ত চালানো হতো স্কুটারটি। পাবনা-সুজানগর ১২ কিলোমিটার পথের যাত্রীপ্রতি ভাড়া ছিল পাঁচ টাকা। পাকশী ফেরিঘাট পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার চালিয়ে প্রতিজনে পেতেন ৭-৮ টাকা। প্রতি ট্রিপে চারজন যাত্রী বহন করে যা পাওয়া যেত সে দিয়ে সংসারের খরচ বহনের পর কিছু জমানো হতো। এভাবেই কিছুদিনের মধ্যে আরও কয়েকটি স্কুটারের মালিক হয়ে গেলেন তারা।
সেই পুরনো স্কুটারটিতেই গোড়াপত্তন হয়েছিল আজকের শ্যামলী পরিবহনের। এই নামটি প্রথম লেখা হয় জীর্ণ-শীর্ণ সেই স্কুটারটির গায়ে। এখন দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের গৌরব বহন করছে সেই নাম। ধর্মীয় চিন্তা থেকেই স্কুটারটির নাম রাখা হয়েছিল শ্যামলী পরিবহন। দেবতা শ্রীকৃষ্ণের শ্যামলী, ধবলী, কাজলী নামের ধেনুর (গাভী) মধ্য থেকেই ‘শ্যামলী’ নামটি রাখা হয়েছিল। মা-বাবাসহ সাত ভাই, চার বোনের ১৩ সদস্যের পরিবারের সদস্যরা বসে আলোচনা করেই ধর্মীয় শ্রদ্ধাবোধ থেকে নামটি রেখেছিলেন।
গণেশ চন্দ্রের এই উদ্যোগে প্রেরণা জুগিয়েছেন তার বাবা মৃত অবিনাশ চন্দ্র ঘোষ। এতকাল পর পুরনো সেই সব দিনের কথা বলতে গিয়ে তিনি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে বাবার স্মৃতিচারণ করেন। ঢাকায় শ্যামলী পরিবহনের প্রধান কার্যালয় বিলুপ্ত শ্যামলী সিনেমা হলের খুব কাছাকাছি একটি ভবনে। সেখানে ছোট্ট একটি টেবিল, একটি কাঠের চেয়ার। এখানে বসেই প্রতিদিন অফিস করেন চেয়ারম্যান গণেশ চন্দ্র ঘোষ। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখোমুখি বসেন তিনি।
অতি সাধারণ পোশাকে নম্রতা ও ভদ্রতার এক এক মূর্ত প্রতীক যেন। সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত এই মানুষটির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, এমডিরা আধুনিক অফিসে বসেন, বিলাসবহুল জীবন-যাপন করেন, আপনি তাদের থেকে ভিন্ন কেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘শান-শওকত আর বিলাসী জীবন-যাপন করলে যাত্রী সেবার মানসিকতা থাকে না। এই সাধারণ জীবন-যাপনেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি আমি।’ জীবনের এক পর্যায়ে তিনি পাবনার সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের রসায়ন বিভাগে প্রদর্শক শিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। অবসরে যান ২০০৯ সালে।
সাধারণ জীবন-যাপনে অভ্যস্ত মানুষটি এখন শ্যামলী পরিবহন নামে এক সাম্রাজ্যের অধিকর্তা। জীবনের চড়াই-উৎরাই পার করে আজ তিনি দেশের গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন খাতের সার্থক এক ব্যবসায়ী। তার শ্রম, মেধা ও কঠোর পরিশ্রম নতুন প্রজন্মের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের জন্য প্রেরণা হয়ে থাকবে।
শুরুতে স্বপ্নটা এত বড় ছিল না। নতুন একটি বাসের মালিক হবেনথ এই স্বপ্নটুকুই পুঁজি ছিল গণেশ চন্দ্রের। তিনি বললেন, স্বাধীনতার পর প্রথম যে স্কুটারটি তিনি কিনেছিলেন সেটি কেনা হয়েছিল ১৯৭২ সালে। দাম কত পড়েছিল ঠিক মনে নেই। তবে যতদূর মনে করতে পারেন ৭-৮ হাজার টাকায় কেনা হয়েছিল পুরনো ওই স্কুটারটি। পরে আরও কিছু টাকা খরচ হয়েছিল স্কুটারটি সংস্কার করতে। এক সময় পুরনোটির সঙ্গে যুক্ত হয় আরও কয়েকটি স্কুটার।
পরে স্কুটারগুলো বিক্রি করে যে টাকা হয়েছিল তা দিয়ে একটি পুরনো বাস কেনা হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। তখনও নতুন বাস কেনার স্বপ্ন অপূর্ণ রয়ে যায়। রাজশাহী থেকে নগরবাড়ি পর্যন্ত চালানো হতো পুরনো ওই বাসটি। বাস চালিয়ে উপার্জিত অর্থ, পরিবারের সদস্যদের স্বর্ণালঙ্কার বিক্রির অর্থ এবং সোনালী ব্যাংক পাবনা জেলা শাখা থেকে নেওয়া ঋণের টাকায় ১৯৭৮ সালে কেনা হয় চকচকে একটি নতুন বাস। সেদিনই পূরণ হয় গণেশ চন্দ্রের নতুন বাস কেনার স্বপ্ন। তখন থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর বছরে বছরে কেনা হয় নতুন নতুন বিলাসবহুল আধুনিক বাস।
১৯৭২ থেকে ৪৪ বছর পর আজ পরিবহন সেক্টরে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী গণেশ চন্দ্র ঘোষ। দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও চলে তিল তিল করে গড়ে তোলা শ্যামলী পরিবহনের বাস। দেশে-বিদেশে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার টিকিট কাউন্টার। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েক লাখ শিক্ষিত, অশিক্ষিত মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে এই পরিবহনে। বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিধি ক্রমে বেড়েই চলেছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার সর্বত্র চলে শ্যামলী পরিবহনের বাস। অর্থাৎ টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া শ্যামলীর সেবা আছে সর্বত্রই।
আন্তর্জাতিক রুটের মধ্যে ঢাকা-কলকাতা, আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা, ঢাকা-শিলং-গৌহাটি-ঢাকা, ঢাকা-বুড়িমারি-শিলিগুড়ি, চট্টগ্রাম-ঢাকা-কলকাতায় (ট্রানজিট) চলছে শ্যামলীর বাস। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক রুটে চালানো হচ্ছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ১০টি অত্যাধুনিক বাস। দেশের অভ্যন্তরে শ্যামলী ব্র্যান্ডের বাসের সংখ্যা ৪শ’ ৫০টি। এর মধ্যে অর্ধশত বাস শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।
এখন দেশে-বিদেশে শ্যামলী পরিবহন একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। তাদের আধুনিক একটি চেয়ার কোচের দাম ৭০ লাখ টাকা। অত্যাধুনিক বিলাসবহুল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি বাসের দাম দেড় কোটি থেকে পৌনে দুই কোটি টাকা। একদিন যারা জীবনের তাগিদে ৭-৮ হাজার টাকায় পুরনো স্কুটার কিনে চালাতেন আজ তারাই পৌনে ২ কোটি টাকায় আন্তর্জাতিক মানের বাস কেনেন। দেশ-বিদেশে যারা দারিদ্র্যের রাহু থেকে মুক্ত হয়ে জীবনসংগ্রামে জয়ী হয়েছেন, তারাই আজ ওইসব দেশে ইতিহাসের অংশ। শ্যামলীও আজ বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ।
চুয়াল্লিশ বছর আগের ৭-৮ হাজার টাকার বিনিয়োগ আজ ৪০০ কোটির ঊর্ধ্বে পৌছেছে। পাবনা-ঢাকা প্রথম বাস সার্ভিস চালু হয় ১৯৭৯ সালে। কুষ্টিয়া-ঢাকা প্রথম নাইট কোচ চালু করা হয় ১৯৮১ সালে। আন্তর্জাতিক রুটে বাস চলাচল শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। আন্তর্জাতিক রুটে বাস চালানোর জন্য ওই সময় সরকারি উদ্যোগে এক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল খ্যাতনামা ১২টি বাস কোম্পানি। তার মধ্যে গুণগতমানসহ সার্বিক বিচার-বিশ্লেষণে নির্বাচিত হয় শ্যামলীর বাস। ওই সময়ই ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বাস চালানোর জন্য সরকারের সঙ্গে শ্যামলী কর্তৃপক্ষের এক চুক্তিও হয়েছিল।
বর্তমানে ঢাকাসহ সারাদেশে শ্যামলী পরিবহনের এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে। এই সাম্রাজ্যে প্রত্যক্ষভাবে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ কাজ করে। দেশের ভেতরে টিকিট কাউন্টারের সংখ্যা তিনশ’র বেশি। প্রতিষ্ঠানের জিএম, অঞ্চলভিত্তিক ম্যানেজার, কাউন্টার মাস্টার, টিকিট বিক্রেতা, চালক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, হিসাব বিভাগ, মেইনটেন্যান্স, প্রধান মেকানিক, সহকারী, সার্ভিসিং সেন্টার, ক্লিনিং, চেকআপ, বডি মেরামত গ্যারেজ, পার্কিং অ্যান্ড ফুয়েলিং স্টেশনসহ নানা ইউনিট রয়েছে।
পরিবহন খাতের ঝুঁকি সম্পর্কে গণেশ চন্দ্রের মেজ ভাই শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেছেন, ফুটবল খেলে মারধর করা হলেও একপর্যায়ে গাড়ি ভাংচুর শুরু হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতায়ও রাস্তায় চলা গাড়িগুলো হয়ে ওঠে প্রধান শত্রু। শুরু হয় ভাংচুর। সবচেয়ে ভয়ানক হলো পুড়িয়ে দেওয়া। একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হলে সেটি সচল করার মতো কোনো অবস্থা থাকে না। মুহূর্তেই মূল্যহীন হয়ে যায় দামি একটি বাস। এরপর দুর্ঘটনাতো আছেই।
শ্যামলী পরিবহনের কোনো বাস দুর্ঘটনার শিকার হলে দুর্ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী অফিসের দায়িত্বশীল লোক দ্রুত সেখানে চলে গিয়ে স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেন। শ্যামলী পরিবহন কর্তৃপক্ষই এই চিকিৎসার খরচ বহন করে। প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়। দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে সংশ্লিষ্ট পরিবারকে সাধ্যমতো ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়। মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের কাছে গিয়ে সহমর্মিতাও জানানো হয়।
শ্যামলী পরিবহনের চেয়ারম্যান গণেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘যাত্রী সেবাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। একটি গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছাতে যাত্রীদের যতটুকু সেবা দেওয়া দরকার আমরা ততটুকু দিই। যাত্রীরাই আমাদের অমূল্য সম্পদ। সেবা দিয়ে আমরা তৃপ্তি পাই।’ তিনি বলেন, ‘স্বপ্ন ছিল বলেই দেশের পরিবহন খাতের উন্নয়নের আজ এই জায়গায় আসতে পেরেছি।’
ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মায়ের মৃত্যু
নড়াইলের লক্ষীপাশায় মা ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার (৫ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রসব বেদনা নিয়ে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে মা ক্লিনিকে আসেন লোহাগড়ার করগাতী গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী কামাল শেখের স্ত্রী বিলকিস বেগম (২৫)। ক্লিনিকের চিকিৎসক তাজরুল ইসলাম তাজ প্রসব বেদনার জন্য বিলকিসকে ইনজেকশন দেয়ার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে নড়াইল সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বিলকিসের স্বামী কামালসহ তার পরিবারের সদস্যরা জানান, সদর হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তারা অভিযোগ করেন, হাসপাতালে আনার আগেই ক্লিনিকে বিলকিসের মৃত্যু হয়েছে। স্বজনদের অভিযোগ তাকে ভুল চিকিৎসা দেয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। এরপর সদর হাসপাতাল থেকে বিলকিসের লাশ মা ক্লিনিকের সামনে এনে বিক্ষোভ করেন তার স্বজনসহ স্থানীয়রা। বিলকিসের পাঁচ বছরের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।
এ ব্যাপারে লোহাগড়া থানার ওসি মোকাররম হোসেন এ প্রতিবেদক উজ্জ্বল রায়কে জানান, প্রসব বেদনায় ইনজেকশন দেয়ার পরই বিলকিস অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে নেয়ার পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়েছে। ডাক্তার সুব্রত ও তাজ তাকে সিজার করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। বিলকিসের মৃত্যুর পর ওই দুই চিকিৎসকসহ ক্লিনিক মালিক শেখ জাহাঙ্গীর আলম পলাতক আছেন। তবে ক্লিনিক খোলা রয়েছে। এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
এনামুল-সম্রাটসহ ৪ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ
ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও অবৈধ অর্থ লেনদেনের অভিযোগে সংসদবিস্তারিত পড়ুন
‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। এই আয়নায় সমাজেরবিস্তারিত পড়ুন