কলম থেকে কলাম..
নারীর শ্লীলতাহানীতে কতিপয় মাদরাসা শিক্ষক-ইমামরা কি মানুষ?
বাংলাদেশ ৮৬.০৬ শতাংশ মুসলমানের দেশ। সুতরাং ইসলামী অনুভূতির উপস্থিতি সর্বাপেক্ষা হওয়াটা বাঞ্ছনীয়। আবার দেশের মুসলমান জনসাধারনের মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পর সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতঃপর দেশের ইসলামী জ্ঞানে জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ বিশ্বাসের প্রথম আশ্রয়স্থল হিসেবে বিশ্বস্ত। কেননা ইসলাম ধর্মের প্রবাদপুরুষ মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আলেমগণ (ইসলামী জ্ঞানী) নবীদের উত্তরসূরী। কিন্তু বর্তমানে দেশের আলেম সম্প্রদায়ের একাংশ সেই ইসলামপূর্ব আইয়ামে জাহিলিয়া যুগের পূর্ণ আবির্ভাবের অগ্রনায়ক এর ভূমিকা পালনকারী হিসেবে হঠাৎই অবতীর্ণ হয়েছে।
অতি সাম্প্রতিককালে দেশের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাদ্রাসার শিক্ষক ও মুসলমান ধর্মের মহা পবিত্র উপাসনালয় মসজিদের ইমামদের দ্বারা ঘটে যাওয়া কিছু নৃশংস ঘটনা কলঙ্কিত করেছে দেশের ইসলামী চিন্তা চেতনাকে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের আলেম সম্প্রদায়ের অত্যাচারের নিকৃষ্টতম নিদর্শন হলো ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ড। গত ২৭ মার্চ ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার হাতে শ্লীলতাহানীর শিকার হয় একই প্রতিষ্ঠান আলিম (এইচএসসি) পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি। এরপর অত্যন্ত দৃঢ় কন্ঠে প্রতিবাদ করলে মগের মুল্লুক নামক এই বাংলাদেশ তার কপালে জোটে আগুনে পুড়ে করুণ মৃত্যু আর ঝরে যায় দেশের তনুর মত আরেকটি মেধা সম্পদ।
নিজের পশু ক্ষুধাকে চরিতার্থ করতে এবং সেই পাপ ধামাচাপা দিতে আগুন এর মাধ্যমে হত্যার এমন নিকৃষ্ট ঘটনা সত্যিই জাহেলী যুগের আবু লাহাব, আবু জেহেল ,আবু সুফিয়ান দের লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে! তারা নিশ্চয়ই বেঁচে থাকলে হারের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহুতি না দিয়ে পারতো না।
এসময়ের সাড়া জাগানো আরেক কুখ্যাত নাম মাওলানা শাহিদুর রহমান। যিনি কিনা ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার দারুল কোরআন ওয়াস সুন্নাহ মাদ্রাসা বিতর্কিত অধ্যক্ষ। এই নরপশুর হাতে একই মাদ্রাসার ছাত্র রাজাপুর ইউনিয়নের শিশু শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে বলাৎকার করার এই খবর জানাজানি হলে এলাকাবাসী এই কুলাঙ্গার কে পুলিশের হাতে সমর্পণ করে। এই নর পিচাশ প্রতিদিনই কোন না কোন শিক্ষার্থীকে তার যৌন খায়েশ মেটাতে নিজের কক্ষে নিয়ে যেত বলে ছাত্ররা মুখ খুলতে শুরু করেছেন । যদিও তখন ছাত্ররা ভয়ের কারণে কিছুই বলেনি অসহায় ছাত্ররা মানুষ রূপী হায়েনার ভয়ে মুখ বুজে থাকলেও এ জাতির বিবেক কবে জাগ্রত হবে তা এখনো অজানা ।
প্রসঙ্গত শিশু যৌন হয়রানির মত একটা বড় সমস্যার মুখোমুখি বাংলাদেশ। বিশেষত মাদ্রাসার শিক্ষক হুজুর এমনকি কিছু সামাজিক আবর্জনা দের দ্বারা নানাভাবে শিশুরা হালকা বা মাঝারি যৌন অত্যাচারের শিকার হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে শিশুদের যৌন শিক্ষার আগেই তারা হয়রানির শিকার হয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এমন পরিস্থিতি কে বলা হয় পেডোফিলিয়া।
চলমান এই নৈরাজ্যের মসজিদের ইমাম ও কেন পিছিয়ে থাকবে? হ্যাঁ তারাও পিছিয়ে নেই! আসুন দেখা যাক তাদের কুকর্ম সমূহ।
কুমিল্লার দেবিদ্বারে এক কিশোরী বাইতুল ফালা জামে মসজিদের ইমামের ধর্ষণের কালো থাবার শিকার হয়। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ, এলাকাবাসীর তথ্য, স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে ও ধর্ষক ইমামের স্বীকারোক্তিতে জানা যায় মাহফুজ নামের ওই নরপশু মসজিদের আসা যাওয়ার পথ থেকে অল্প বয়সী ছাত্রীদের কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। ভিকটিম ওই ছাত্রীর অভিযোগ ঘটনার দিন সে মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ইমাম ১৫ বছরের ওই কিশোরীকে ফুসলিয়ে ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে ছেড়ে দেয়। এরপর ওই কিশোরী অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরলে পরিবারের লোকজন তার গোপনাঙ্গে রক্তপাতের বিষয়টি অবগত হয় এবং পারিবারিক উদ্যোগে এই তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। উপজেলার শালঘর দক্ষিণপাড়ার বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদের ইমাম ধর্ষক মাহফুজুর রহমান মেয়েটিকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন বলে দেবিদ্বার থানার ওসি জহিরুল আনোয়ার জানিয়েছেন। ধর্ষক ইমাম মাহফুজুর (২১) দেবিদ্বারের ভিরাল্লা গ্রামের সাইদুল ইসলাম ছেলে।
মাদ্রাসার শিক্ষক আর মসজিদের ইমামদের কুকীর্তি ছাড়া মিডিয়ায় আর তেমন কিছুই দেখি না।
যে ইসলামী রাষ্ট্রে মাদ্রাসার সুপার নগ্ন ছবির ভয় দেখিয়ে ছাত্রীকে ধর্ষণ করতে পারে, ইমাম মসজিদের মত পবিত্র জায়গায় নিষ্পাপ শিশুকে ধর্ষণ করতে পারে, আবার মাঝে মাঝে শোনা যায় কোন কোন মাদ্রাসা শিক্ষকের পশু ক্ষুধার শিকার হয় তিন বা তদূর্ধ্ব তরুণী!
বরগুনা শিশু ধর্ষণকারী মাদ্রাসা শিক্ষকের গ্রেফতার হওয়ার পর হাসি মাখা মুখ দেখলে মনে হবে উনি মহাভারত জয় করে এসেছেন! আনন্দ তার মনে আর ধরে না। আর ইমামদের ধর্ষণে মাদ্রাসা ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনাটা এখন নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।
মাঝে মাঝে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের ধর্ষণে চতুর্থ শ্রেণীর শিশু অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যাচ্ছে। কি আজব দুনিয়া! কি আজব বাংলাদেশ! কি আজব দেশের ধর্মীয় অবস্থা! কি আজব দেশের ধর্মীয় অনুশাসন তাই নয় কি ! প্রতিনিয়ত আমরা ছাত্রী ধর্ষণ, ছাত্র বলাৎকার, শ্লীলতাহানি, নির্যাতনের খবরে মিডিয়া সরগরম হতে দেখি তার শতকরা ৯৫ ভাগই ঘটে ধর্মের লেবাসধারী, সব সময় ধর্মীয় বুলি আওড়ানো, কোরআনের নাম ভাঙিয়ে চলা মাদ্রাসার শিক্ষক ও মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে। কিন্তু আরো না জানি কত নিষ্পাপ নিরীহ প্রাণ নির্যাতিত হচ্ছে এইসব ইসলামী নামধারী পশুদের পাপের বলি হয়ে! আর যারা ধর্মের বেড়াজাল, সামাজিক সম্মান, পারিবারিক অবস্থানের কথা ভেবে নিভৃতে সহ্য করছে এই অত্যাচার, তাদের সংখ্যাও নিত্যান্তই কম বলে ভাববার অবকাশ নেই!
বর্তমান পরিস্থিতিতে অভিভাবক সম্প্রদায় আছেন মহা বিপদে ! কারণ একবার ভাবুন তো আপনার সন্তানকে শিক্ষিত, আদর্শ, যোগ্য নাগরিক করে গড়ে তুলতে গিয়ে কোন শিক্ষক রূপী হায়েনার থাবাতে নিক্ষেপ করছেন না?
তো ইসলামী জ্ঞানের আলোকে এ কথা স্পষ্ট তো বলতে পারি যে ১৪০০ বছর পূর্বে হতে অদ্যবধি এইসব কুকর্মের ব্যাপারে ইসলামের কঠোর নিষেধাজ্ঞা বিদ্যমান। তাহলে কেন ইসলামী জ্ঞান পাপীদের এমন হিংস্র মানসিকতা? এই ইসলাম কোন ইসলাম। এই সমাজ আমাদের। আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ সচেতনতা সৃষ্টি ছাড়া এ মহামারি হতে রক্ষার উপায় কি?
কলাম রচয়িতা
শফিকুর রহমান
লেখক, সাংবাদিক, সমাজকর্মী
ছবিতে নারীর শ্লীলতাহানীতে পশুরূপী কতিপয় জড়িতরা:
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
এনামুল-সম্রাটসহ ৪ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ
ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও অবৈধ অর্থ লেনদেনের অভিযোগে সংসদবিস্তারিত পড়ুন
‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। এই আয়নায় সমাজেরবিস্তারিত পড়ুন