তুরস্ককে পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠাই এরদোগানের প্রতিশ্রুতি
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের সম্প্রতি গ্রিসে রাষ্ট্রীয় সফরে আশা প্রকাশ করা হয়েছিল যে, দুই ন্যাটো মিত্রের মধ্যেকার ভঙ্গুর সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে এবং মাসের পর মাস ধরে চলা আন্তরিকতাশূন্য সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে তুরস্কের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ইউরোপের দিকে একটি তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করবে। এর আগে তিনি তার গ্রিক অভ্যর্থনাকরীকে একের পর এক বিতর্কের মধ্য রাখেন এবং দুই দেশের সীমানা প্রকাশ করে- এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। সুতরাং বলা যায় এরদোগান নেহাতই এথেন্সে পৌঁছাননি। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তার নিজস্ব ধ্যান-ধারণা, তার সমষ্টিগত লক্ষ্য এবং তার দেশকে একটি পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রচারণা- একসময়ের পশ্চিমা জোটের সঙ্গে তাকে মুখোমুখি অবস্থানে নিয়ে যায় এবং তা ক্রমবর্ধমানভাবে বাড়তে থাকে। এথেন্স-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস ইনস্টিটিউটের গবেষক কনস্টান্টান্টিনস ফিলিস বলেন, ‘তুরস্ক কেবল আঞ্চলিক পর্যায়েই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও একটি শক্তিশালী খেলোয়াড় তা প্রদর্শনের জন্য তার নিজেকে পশ্চিমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে এবং এতে দেশটির নিজস্ব অবস্থান, নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে; যা আবশ্যিকভাবে পশ্চিমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘এরদোগানের লক্ষ্য তার দেশকে একটি মহান আঞ্চলিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে তোলা; যাতে তুরস্কের স্বার্থকে সকলে সমীহ করে।’ গত দেড় বছরে বিশেষ করে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে তার সরকারের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর থেকে অনেক ইউরোপীয় দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন হয়েছে। এই সময়ে এরদোগান কখনোই তার মৌখিক তিরষ্কার বন্ধ রাখেননি। তিনি ধারাবাহিকভাবে তার মিত্রদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে থাকেন। ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ, সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়া এবং নাৎসিদের মতো আচরণ করার অভিযোগ আনেন এরদোগান। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নে আঙ্কারার যোগদান করার কয়েক দশকের প্রচেষ্টাকে আরো দূরে ঠেলে দেয়। মারমারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিহুলুল ওজকান বলেন, ‘তিনি যদি কোনো বিষয়ের ওপর আলোচনা শুরু করতে চান; যা তিনি আকর্ষণীয় মনে করেন, তবে তাকে জনগণের কাছে যেতে হবে এবং জনগণকে ঝাঁকুনি দিতে হবে। গত ১৫ বছরে তিনি তা অনেক বার করেছেন এবং গত কয়েক বছরে কূটনীতির মাধ্যমে তিনি এটি করছেন।’ আড়ম্বরপূর্ণ ভাষা অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বেশ ভাল কাজ করছে। অধিকাংশ তুর্কি নাগরিক এরদোগানকে দেশটির গর্ব হিসেবে অভিহিত করেন এবং একইভাবে মুসলিম বিশ্বও। তুরস্কের বৈদেশিক নীতি নিয়ে গত জুনে দেশটির বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘কাদরি হস ইউনিভার্সিটি’র জনমত জরিপে দেখা যায় ৩৮.৫ শতাংশ তুর্কি জনগণ মনে করেন তুরস্কের পররাষ্ট্র নীতি সফল হয়েছে। উত্তরদাতাদের অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল এবং ইইউকে তুরস্কের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ৩ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত পরিচালিত গবেষণাটিতে ২৬টি তুর্কি শহরের ১,০০০ জন লোক তাদের মতামত প্রদান করে। ইলমাজ ডেমিরজ নামে ইস্তাম্বুল শহরের ৪৮ বছর বয়সী একজন মালী বলেন, ‘আমি মনে করি তিনি (এরদোগান) আমাদের আগের নেতাদের চেয়ে অনেক ভাল, অন্তত মুসলিম দেশগুলোর তুলনায়। আমার দেখা পূর্বের সব নেতাদের থেকে তার পরিষ্কার অবস্থান রয়েছে।’ বিভিন্ন কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক নাজুক অবস্থায় চলে গেছে। আঙ্কারার অভিযোগ, তুর্কি নাগরিক ফেতুল্লাহ গুলেনকে আশ্রয় প্রদান করে এবং ইরান ও এরদোগানকে জড়িয়ে নিউইয়র্কে চলমান তুর্কি ব্যাংকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে বিচারের মাধ্যমে ওয়াশিংটন ইচ্ছাকৃতভাবে তুরস্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। এসব কারণে মার্কিন-তুর্কি সম্পর্ক কীভাবে উন্নত হবে তা স্পষ্ট নয় বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এসম্পর্কে ওজকান বলেন, ‘তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক খুব নেতিবাচক দিকে প্রবাহিত হতে পারে এবং তা তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের জন্যই খুবই নেতিবাচক ফলাফল হতে পারে। এ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা সত্যিই খুবই কঠিন।’ ইইউ এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে শীতল সম্পর্ক থাকায় মস্কো এবং তেহরান সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক উষ্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। চলতি বছরে এরদোগান এবং রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন এবং রাশিয়ান এস-৪০০ মিসাইল ক্রয়ের জন্য তুরস্ক সম্প্রতি একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এই পদক্ষেপ ন্যাটোকে উদ্বিগ্ন করে তুলে। উল্লেখ্য, ১৯৫২ সাল থেকে তুরস্ক ন্যাটোর একজন সদস্য। ফিলিস বলেন, ‘তুরস্ক একটি বিপজ্জনক নীতি অনুসরণ করছে। দেশটি ছুরির ধারালো প্রান্তে অগ্রসর হচ্ছে। রাশিয়া এবং ইরান সঙ্গে তুরস্কের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেশটিকে পশ্চিমাদের থেকে আরো দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। এই ধরনের নীতিমালার প্রেক্ষাপটে তুরস্ককে কিভাবে পরিচালনা করা যায় সে ব্যাপারে পশ্চিমাদের মধ্য বিবেকের সমস্যা তৈরি করেছে।’ তবে বিশ্লেষকরা বলছেন যে তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাশিয়া বা ইরানে ভয় পশ্চিমা দেশগুলো সম্পূর্ণভাবে প্রতিস্থাপন করতে পারে, বিশেষ করে তুরস্কের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার এবং বিনিয়োগকারী হিসাবে ইইউর ভূমিকা পালনের মাধ্যমে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
পাকিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১৯ জনের মৃত্যু
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে শক্তিশালী ৫ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাতে ১৯বিস্তারিত পড়ুন
২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় হিক্কা
ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিক্কা। এর ফলে ঝড়ের পাশাপাশি ভারীবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন