জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ গীতিকার আমিরুলের স্বপ্ন ছোঁয়ার গল্প
নজরুল ইসলাম তোফা: সংস্কৃতির শিকড়ের খোঁজে শিল্পখাত মানুষের প্রান কাঁদে। তাঁরা বলে থাকেন, ভালো অর্জনের পিছনে রয়েছে শিকড়ের সন্ধান। প্রানের মাঝে আদি সংস্কৃতির মিলন ঘটিয়ে অমশ্রিণ দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে গৌরবোজ্জ্বল দিনের সাফল্য কামনা করেন। জ্ঞানি গুনি মনিষীদের মতে, শিকড় সংস্কৃতি শিল্প চৈতন্য বোধের মানুষদের অনেক কাজে দেয়। তাই শিকড়ের সংস্কৃতিকে অশিকার করলে চরম ভুল করবে মানুষ। এমনি একজন সুদক্ষ শিকড় সংস্কৃতি মানুষ, যাঁর কৃতিত্ব পূর্ত অর্জন সত্যিই আমাদেরকে ভাবায়। তিনি স্বদেশের মাটির গানের পাশাপাশি অনেক বাউল গানের স্বাদ সত্যিই অতুলনীয়। তিনি সবার প্রিয় সংগীত শিল্পী ও অভিনেতা আমিরুল ইসলাম।
শিশু অভিনয় শিল্পী হিসেবে চৌরহাস মুকুল সংঘ স্কুল থিয়েটারে গান গাওয়া সহ অভিনয় জগতে তাঁর যাত্রা শুরু। তার পরপরই রাসেল স্মৃতি সংসদ, নুপুর, বোধন,পরিমল থিয়েটার সহ কুষ্টিয়ার সবগুলো থিয়েটারেই কমবেশি সংগীত শিল্পী ও নাট্যশিল্পী হিসেবে বহুত গুনে গুনান্নিত্ব ব্যক্তি তিনি।তাঁর জীবনের সেই সমান গতির সাথে লালনের গান, যা একেবারে লালন মাজার কেন্দ্রিক। আসলে এমন গুনি অভিনেতার বাউল গানের চর্চা কেনই বা সাফল্য আনবে না। এমন অভিনেতা, গীতিকার এবং বিভিন্ন গানের সুরকার ও গায়ক কেনই বা জীবনের অর্জিত স্বাদ আস্বাদন করবেন না। নানা গুণের এমন পরিপূর্ণ ব্যক্তি অবশেষে পেলেন জাতীয় স্বীকৃতি। ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’ নামক চলচ্চিত্রে গীতিকার, গায়ক ও অভিনেতা হিসেবে অবদান রাখার পাশাপাশি শিল্প নির্দেশনা সহ প্রয়োজনীয় কসটিউমের কাজও করেছেন তিনি। ‘উথাল পাথাল জোয়ার ভাটা’ নামক গানটির জন্য তিনি পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৫। এমন গৌরবোজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এ বছর শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবেন।
তিনি নজরুল ইসলাম তোফাকে বলেন, এদেশের সংস্কৃতির গভীরে শিকড়ের সংস্কৃতি ছড়িয়ে রয়েছে লোকগানে। শুধু বাংলার মানুষের জীবনধারাই নয়, বরং তাতে বিভিন্ন ধর্মের প্রার্থনাও রয়েছে। তিনি মানুষের বৈচিত্র্যময় জীবন যাপনে লোকসঙ্গীতে জড়িয়ে আছে নিবিড়ভাবে। তাই মাটি, মানুষ আর তাদের অন্তরের কথা নিয়ে গান ও অভিনয় করে থাকেন, সেই গান ও অভিনয়ের টানে ছুটে বেড়ান। তিনি বলেন, নিজেকে চেনা এবং সংস্কৃতিকে বাংলার জনগণকে চিনিয়ে দেবার জন্যই সর্বদা ব্যকুল।
লোকসঙ্গীতের অবারিত রত্নভাণ্ডার সেই শিশু কালেই যোগ দিয়েছিলেন নিজ শহর কুষ্টিয়ার একটি থিয়েটারে। এরপর দীর্ঘ পথপরিক্রমায় কুষ্টিয়া ও ঢাকা মিলিয়ে কাজ করেছেন প্রায় ২০/৩০টি থিয়েটারে। একাধারে অবদান রেখেছেন টেলিভিশনেও। তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে উন্নতম হলো- হেলেনের চোখে বাংলাদেশ, প্রিন্স অব বেঙ্গল, লালন, কান্না, বাপজানের বায়োস্কোপ ও সোনাদ্বীপ ।
মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ছেলে আমিরুল ছোট বেলাতেই হারিয়েছেন বাবাকে। কিন্তু সেই অভাব বুঝতে দেননি বাবার মতো বড় ভাই কুষ্টিয়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান। উনাকে বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখেন আমিরুল ইসলাম। তবে আরো কিছু মানুষকেও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে অবদান দিয়েছেন। মায়ের অনুপ্রেরণার পাশাপাশি মায়ের মতো বড় ভাবীকেও স্মরণ করেন তিনি। জানালেন, ভাবী পারুল আক্তারই ছিল তাঁর সকল আবদার রক্ষার বড় আশ্রয়স্থল। শত আবদার মুখ বুঝে মিটিয়েছেন পারুল আক্তার। ছোট ছোট অপরাধ গুলোকে লুকিয়েছেন নিজের আঁচলে। আর জীবন সঙ্গী সেলিনা আক্তারকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা হারানো আমিরুল ইসলাম বললেন, তার সহযোগিতা ছাড়া এসব হয়তবা কিছুই সম্ভব ছিলনা। এছাড়াও এই পুরস্কার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান প্রয়াত প্রখ্যাত নাট্যকার মরহুম জিন্না হক, একমাত্র সন্তান আর্য্য দিগন্তকে।
দীর্ঘ সাধনার ফসল ঘরে তুলতে পেরে আনন্দে উদ্বেলিত আমিরুল ইসলাম বললেন, এই পুরস্কার আমাকে আজীবন কাজ করে যাওয়ার অনুপ্রেরণা জোগাবে, পথ দেখাবে। আজ আমাকে যে সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে, তার ঋণ কতটুকু শোধ করতে পারবো জানিনা। তবে বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতির ঝাণ্ডা সমুন্নত রাখতে চেষ্টা করবো। তিনি বলেন, আমি আমার এই প্রাপ্তি উৎসর্গ করছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের।
২০০১ সালে সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটারে কাজের সুযোগ পেয়ে পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। কাজ করার সুযোগ পান শহীদুল আলম সাচ্চুর ‘থিয়েটার সেন্টারে’। এর কিছুদিন পরেই প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন রিসোর্স বাংলাদেশ থিয়েটারে। ২০০৭ সালে প্রখ্যাত নাট্যকার মাসুম রেজা ও শামসুল আলম বকুল প্রতিষ্ঠিত দেশ নাটকে অভিনেতা হিসেবে কাজ শুরু করেন।
তার রচিত টেলিভিশন নাটক গুলোর মধ্যে অন্যতম (ধারাবাহিক) লালন কয় যেতে পারি, নীলচন্দ্র, স্বচ্ছ স্বরবর, অবোধ, আলাল দুলাল, বিষাক্ত বিষাদ, ময়ূর চিত্ত, অবগুণ্ঠিত চাঁদ। একক ও টেলিফিল্ম: ভাটির কলমী, বায়ুবীয় ভালবাসা, কালোপদ্ম, বিষচোখ, কালোপদ্ম, নিন্দার কাটা, রংমাখামুখ ও ভুজঙ্গনা। মঞ্চ নাটক রচনা: বেড়া, ত্রিবেণী, কমলা পুরের ককিলারা, পদ্ম গোখরা ও পরমানুষ।
গুনি অভিনেতা আমিরুল ইসলাম টিভি নাটকে অনেক সাফল্য দেখিয়ে আসছেন। সে সব নাটক গুলো যেমন, কোন সীমানায় মুক্তি, আরশি নগর, তেভাগা, তের কাহন, ইট কাঠের খাঁচা, নীল নির্জনে, চৌদ্দ ফ্রেম, বারোটা বেজে পাঁচ, একটি সাধারণ প্রেমের গল্প, ঘরে ফেরা ও নূরজাহান অন্যতম। তিনি নাট্য নির্দেশনা দিয়ে অনেক সফল হয়েছিলেন। তাঁর পারদর্শিতার অজস্র ভান্ডারে ছিল বেশ কিছু নাটক যেমন: ত্রিবেনী, ডোমরু, তোতা কাহিনী, কমলাপুরের ককিলারা, পদ্ম গোখরা পরমানুষ, পাল্লায় ফের এর মতো অসংখ্য নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন বেশ শক্ত হাতে। আবার মঞ্চ নাটকে চমৎকার অভিনয় দেখিয়ে দর্শক নন্দিত হয়েছেন বারবার। অন্যতম নাটক গুলোর মধ্যে যেমন, ভক্ত, বাঘাল, দর্পণে শরৎ শশী, বিরসা কাব্য,জনমে জন্মান্তর, সোনাবিবির শাড়ি,একটি পয়সা, প্রাকৃত পুরাঙ্গণা, এবার ধরা দাও,উনিশ শ একাত্তর ও বেড়া অন্যতম।
নজরুল ইসলাম তোফাকে দেয়া তাঁর জীবনে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, শিল্পী জীবনের নানা চড়াই উৎরাইয়ের গল্প আছে, স্বল্প পরিসরে শেষ হবার নয়। তিনি জানালেন, যত দিন বাঁচবেন মাটি ও মানুষ নিয়ে কাজ করবেন। এমনই আশা নিয়ে দেশ বিদেশে পৌঁছিয়ে দিতে চান শিকড়ের সংস্কৃতি।
গানের সুরে বললেন,…
“আসিও আসিও বন্ধু
বন্ধু আসিও স্বদেশে
এগো মন বাঁধিব পণ করিব
রাখিব মনদেশে
বন্ধু আসিও স্বদেশে….”
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
এবার অভিনয়ে পরিচালক শিমুল সরকার
নজরুল ইসলাম তোফা:: পরিচালক শিমুল সরকার। সময়ের তরুণ জনপ্রিয় একজনবিস্তারিত পড়ুন
সালমানকে উৎসর্গ করে গাইলেন টুটুল
জনপ্রিয় রেডিও উপস্থাপক জহিরুল ইসলাম টুটুল শ্রোতা মহলে আরজে টুটুলবিস্তারিত পড়ুন
সন্তানকে নিয়ে নিউইয়র্কের পথে পথে তাহসান-মিথিলা
সন্তানকে নিয়ে নিউ ইয়র্কের পথে পথে তাহসান-মিথিলা। বিচ্ছেদ হলেও তাহসান-মিথিলাবিস্তারিত পড়ুন