চুলপড়া প্রতিরোধে দরকার যে ৮টি ভিটামিন ও খনিজ
ভালো চুল স্বাস্থ্যকর দেহের লক্ষণ। কীভাবে? কারণ দেহে সঠিক পরিমাণে পুষ্টি উপাদান ভারসাম্যপূর্ণভাবে থাকলেই আপনি শক্তিশালী ও ভারী চুল পাবেন।
সুতরাং কোনো ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবস্থা আন্দাজ করা যায় শুধু তার চুলের দিকে তাকিয়েই। চুলের জন্য উপকারী অসংখ্য পুষ্টি উপাদান আছে। এখানে শুধু সবচেয়ে দরকারী পুষ্টি উপাদানগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
আর কীভাবে সবচেয়ে ভালো উপায়ে চুলের জন্য আপনি এই সবগুলো পুষ্টি উপাদান পেতে পারেন? চুলে পুষ্টি উপাদান সরবরাহের জন্য আপনি মাসে একবার বা দুইবার সেলুনে যেতে পারেন। কিন্তু সেলুনে চুল পরিচর্যার প্রভাব আজীবন থাকবে না। তারচেয়ে বরং সঠিক খাবার খাওয়ার মাধ্যমে চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা যায় সবচেয়ে ভালোভাবে। এতে আপনার সেলুনের অতিরিক্ত খরচও বাঁচবে। খাবারের মাধ্যমে চুলের জন্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করা হলে তা ভেতর থেকে চুলকে পরিপুষ্ট করে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কোন খাদ্যগুলোতে চুলের জন্য উপকারী ভিটামিন এবং খনিজ পুষ্টি উপাদানগুলো আছে।
১. জিঙ্ক
চুলের গ্রন্থির স্বাস্থ্যের জন্য জিঙ্ক জরুরি। চুলের গ্রন্থির ক্ষয়ে যাওয়া রোধ করে চুলের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে জিঙ্ক। জিঙ্ক হরমোনের ভারসাম্যও রক্ষা করে ব্যাপকভাবে। জিঙ্কের ঘাটতি হলে চুল পড়া বাড়ে। তার মানে এই নয় যে, দেখতে সুন্দর চুলের জন্য প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক দরকার। বরং প্রতিদিন মাত্র ১৫ মিলিগ্রাম জিঙ্ক দেহে প্রবেশ করলেই যথেষ্ট। খুব বেশি জিঙ্ক খেলে আবার মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
যেসব খাবার জিঙ্ক সমৃদ্ধ:
কুমড়ার বীজ, হিজলি বাদাম, স্পিনাক, দই, মুরগীর মাংস, ছোলা।
২. ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড বেশি পাওয়া যায় মাছে। এই উপাদানটি চুলকে করে সজীব এবং ঘন। এছাড়া এই স্বাস্থ্যকর চর্বি মানসিক অবসাদ থেকেও আপনাকে দূরে রাখবে। এবং মাথার ত্বকের প্রদাহ রোধ করবে। প্রতিদিন মাছের তেলের সাপ্লিমেন্ট নিয়েও আপনি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের মাত্রা ঠিক রাখতে পারেন।
মাছ ছাড়া ডিমের কুসুম, শণবীজ, সয়াবিন, শ্বেতবীজ, চিয়া বীজে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়।
৩. বি কমপ্লেক্স ভিটামিনসমূহ
বি কমপ্লেক্স এর ভিটামিন সমুহের সাথে চুলের বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু দেহে এই জাতীয় ভিটামিনের ঘাটতি হলে চুল পড়া বাড়ে। পানিতে দ্রবনীয় আটটি ভিটামিন এই গ্রুপের ভিটামিনের অন্তর্ভুক্ত। আর সেগুলো হলো, বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, বি৭, বি৯ এবং বি১২।
ডাল, বাদাম, আলু, মাছ, ডিম, শীম, সয়াদুধ এই খাবারগুলোতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ভিটামিন সমুহ পাওয়া যায়।
৪. আয়রন
আয়রনের ঘাটতি হলে অ্যালোপেসিয়া, ট্যালোজেন এফ্লুভিয়াম এবং চুল পাতলা হওয়ার মতো ক্ষতি হয়। দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন সরবরাহ করা হলে চুল শক্তিশালী, পুরু এবং চকচকে হয়। চুলের গোছার বৃদ্ধি ঘটায় আয়রণ। মাথার ত্বকের কোষে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করে আয়রন। যাতে চুলের বৃদ্ধি ঘটে দ্রুত গতিতে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন গড়ে ১৮ মিলিগ্রাম আয়রন দরকার হয়।
কচু শাক, স্পিনাক, কিসমিস, এপ্রিকোট, কালো শীম, ডিমের কুসুম, লাল মাংস, মুরগীর মাংস প্রভৃতিতে আয়রন আছে প্রচুর পরিমাণে।
৫. ভিটামিন সি
প্রয়োজনীয় কোলাজেন সরবরাহ করে ভিটামিন সি। এটি এমন একটি প্রোটিন যা চুলের স্থিতিস্থাপকতা ও শক্তি বজায় রাখে। কোলাজেন অ্যামাইনো এসিডের সরবরাহ বাড়ায়। যা চুলের কাঠামোতে ক্যারাটিনের ভিত্তি তৈরি করে। ভিটামিন সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে। কিন্তু, আপনি হয়তো জেনে বিস্মিত হবেন, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস চুলের বুড়িয়ে যাওয়া এবং ফ্রি র্যাডিক্যাল ড্যামেজের রাস্তা খুলে দেয়। যথাযথ পরিমাণে ভিটামিন সি খেলে এই সমস্যা দূর হয়। প্রতিদিন একজন নারীর জন্য ৭৫ মিলিগ্রাম এবং একজন পুরুষের জন্য ৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি দরকার হয়।
কমলা, লেবু, কাঁচা ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, স্ট্রবেরি, পেয়ারা, কিউই, জাম্বুরা ইত্যাদিতে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
৬. ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডি এমন একটি হরমোন যা চুলের জন্য উপকারী। এবং এটি নতুন চুলের গ্রন্থি সৃষ্টিতে সহায়ক। ফলে চুল গজানো বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অ্যালোপেসিয়া বা তীব্র চুলপড়া রোগে আক্রান্ত তাদের দেহে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি আছে। যদিও অনেকেই এটা জানেন না। ভিটামিন ডিও চুলের অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডি পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো মাথায় সরাসরি সূর্যের রোদ লাগানো।
কড লিভার তেল, মাশরুম, ডিম, দুধ, বায়োটিন প্রভৃতি ভিটামিন ডি-র সবচেয়ে ভালো উৎস।
৭. বায়োটিন (ভিটামিন বি৭)
যারাই চুলপড়া রোগে আক্রান্ত তারাই নিশ্চিতভাবে বায়োটিনের ঘাটতিতে ভুগছেন। চুলে পর্যাপ্ত পরিমাণে বায়োটিন থাকলে অ্যামাইনো এসিড উৎপন্ন হয় যখন বায়োটিন কোষের এনজাইমের সঙ্গে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করে। অ্যামাইনো এসিড থেকে উৎপন্ন হয় ক্যারাটিন নামের প্রোটিন। স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য প্রতিদিন অন্তত ৩০ মাইক্রোগ্রাম বায়োটিন জরুরি।
পাশাপাশি, বায়োটিন ক্ষতিগ্রস্ত চুলকে পুনরায় উজ্জীবিত করে তোলে এবং চুলের ঘনত্ব বাড়ায়। বায়োটিনে সমৃদ্ধ খাবারগুলো হলো, অ্যাভোকাডো, ডিম, র্যাস্পবেরি, ফুলকপি, পূর্ণ শস্য গমের পাউরুটি, বাদাম, খামির, চেষর, পনির।
৮. ভিটামিন এ
মথার ত্বকে সেবাম নামের একটি প্রাকৃতিক তেল উৎপন্ন হয়। যা একে স্বাস্থ্যবান রাখতে সহায়ক। ভিটামিন এ সেবাম উৎপাদনে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। মাথার ত্বকে সেবামের পরিমাণ কমে গেলে তা শুকিয়ে যায় এবং চুলের উজ্বলতা কমে যায়। ভিটামিন এ চুলকে ঘন করতে সহায়ক কোষেরও বৃদ্ধি ঘটায়। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৭.৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন এ গ্রহণ করা যায়। গাজর, স্পিনাক, আম, শুকনো এপ্রিকট, পিচ, মিষ্টি আলু প্রভৃতিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায়।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
এবার বাংলাদেশেও ভাঙল প্রচলিত নিয়ম, যাত্রী নিয়ে বিয়ে করতে বরের বাড়িতে কনে!
এবার বাংলাদেশেও ভাঙল প্রচলিত নিয়ম, যাত্রী নিয়ে বিয়ে করতে বরেরবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ায় উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের সাথে পুষ্টি বিষয়ে গোলটেবিল বৈঠক
কলারোয়ায় উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের সাথে পুষ্টি বিষয়ে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিতবিস্তারিত পড়ুন
ভালোবাসার সুড়ঙ্গ রহস্য (ভিডিও)
প্রকৃতি অপার রহস্যের ভান্ডার। তাই সে মাঝে মাঝেই আমাদের চমকেবিস্তারিত পড়ুন