মুক্ত মত
গুম-হত্যা নির্যাতন, শেষ কোথায়?
ফরিদুল ইসলাম
স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকাটা মানুষের অধিকার। আর মানুষ সবথেকে তার জীবনকে বেশি ভালোবাসে। বর্তমান সামাজিক বাস্তবতায় মানুষের সেই জীবন আজ কি এক সাংঘাতিক এবং অনিবার্যভাবে বিপন্ন ও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ যেন এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি বলতে আজ আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। চারদিকে শুধু অপহরণ-গুম-খুন-অত্যাচার ইত্যাকার নৃশংস-নির্মম বিষয়গুলো এখন ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে।
আর বাংলাদেশে বিচারবর্হির্ভূত হত্যাকান্ড চরম পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। বিচারহীনতা পৌঁছেছে ভয়াবহ পর্যায়ে। ফলে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মীরা। বিশেষ করে সরকারবিরোধী ২০ দলীয় জোট ও জোটের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বেশি আতঙ্কে রয়েছেন। বিচারবর্হির্ভূত হত্যাকান্ডে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছেই। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিচারবর্হির্ভূত হত্যাকান্ডের সমালোচনা করে তা বন্ধের আহ্বান জানালেও সরকার নীরব। গত ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচন বয়কট করে যারা ভোটারদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন সরকারি বাহিনী অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় তাদের হত্যা করছে।
জনগণের ভোটাধিকার রার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নায়কদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, নির্বাচন করার অধিকার যেমন সরকারের আছে, তেমনি নির্বাচন বয়কট করার অধিকারও রাজনৈতিক দলগুলোর রয়েছে। যদি কোনো ব্যক্তি সরকারি সম্পত্তির তি ও কোনো ধরনের ফৌজধারি অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলেও সে যেই হোক দেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার হতে পারে।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের রিপোর্ট অনুযায়ি জানুয়ারি মাসে ৪ জনের গুম হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে ৪ জনকেই ১০ দিন গুম করে রাখার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর অনেকেরই কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ভিকটিমদের পরিবারগুলোর দাবি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই তাঁদের ধরে নিয়ে গেছে এবং এরপর থেকে তাঁরা গুম হয়েছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রমে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে আটক ব্যক্তিটিকে জনসম্মুখে হাজির করছে অথবা কোন থানায় নিয়ে হস্তান্তর করছে বা গুম হওয়া ব্যক্তিটির লাশ পাওয়া গেছে। গুম একটি মানবতা বিরোধী অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও তা অব্যাহত আছে এবং সরকার গুমের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। কিন্তু ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে সাত ব্যক্তিকে গুম করার পর হত্যা করে র্যাব -১১ এর সদস্যরা। ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি এই গুম ও হত্যাকা-ের মামলায় রায় ঘোষণা করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন।
অধিকার এর প্রাপ্ত তথ্য মতে জানুয়ারি মাসে ১৬ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- অব্যাহতভাবে চলতে থাকায় দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে এবং মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। গত ১০ জানুয়ারি গভীর রাতে যশোর জেলার সদর উপজেলায় মোহাম্মদ রাসেল নামে এক যুবককে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে বলে নিহতের পরিবার অভিযোগ করেছে। যশোর কতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলিয়াস হোসেন বলেন, রাতে জগহাটি এলাকায় দুই দল ডাকাতের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এই সময় রাসেল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। অন্যদিকে রাসেলের মামি সানিয়া খাতুন জানান, রাসেলকে পুলিশ ধরে নিয়ে ঘাড়ে গুলি করে হত্যা করেছে। রাসেলের নামে কয়েকটি মামলা ছিল।১০ এদিকে রাসেলের মা অধিকারকে জানান, রাসেল নিহত হওয়ার ১০-১২ দিন আগে পুলিশ তাঁদের বাড়িতে তাঁর ছেলেকে খুঁজতে আসে। তিনি মনে করেন যে, পুলিশ তাঁর ছেলেকে আটক করার পর গুলি করে হত্যা করেছে।
জানুয়ারি মাসে ১৫ জন ‘ক্রসফায়ার/এনকাউন্টার/বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদেরমধ্যে ৪ জন র্যাবের হাতে এবং ১১ জন পুলিশের হাতে নিহত হয়েছেন। উল্লেখিত নিহতদের মধ্যে ১ জন পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরকারের যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। নির্বিকার চিত্তে সরকার শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। নেই কোনো আইনের শাসন, জবাবদিহিতা-স্বচ্ছতা। মানুষের মনের গভীরে একটাই প্রশ্ন, এ ধরনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর দায়ভার আসলে কার? এর মূলে কারা জড়িত! আর সরকার কেনই বা এসব বিষয়ে কোনো সুরাহা করতে পারছে না!
বর্তমান সরকার বিরোধী দলকে কোন কর্মসূচী করতে দিতে চাচ্ছে না। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। সারাদেশে বেছে বেছে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। গত ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত সারাদেশে কালো পতাকা মিছিলে পুলিশ বাধা দিয়েছে এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলায় অনেক জায়গায় মিছিল-সমাবেশ প- হয়ে গেছে। ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে বিএনপি ৭ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অথবা বিকল্প জায়গা হিসেবে তাদের দলীয় কর্যালয়ের সামনে জনসভা করার অনুমতি চাইলে সরকার অনুমতি দেয়নি। ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে ৫ জানুয়ারি বরিশাল শহরের অশ্বিনী কুমার হলের কাছে মিছিল করার জন্য জড়ো হওয়া বিএনপির নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে পুলিশ ব্যানার কেড়ে নেয় এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ মিছিলে হামলা চালালে প্রায় পঞ্চাশজন নেতা-কর্মী আহত হন। এ সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা- কর্মীরা বিএনপি নেত্রী কামরুন বাহার রোজির ওপর হামলা চালালে তিনি গুরুতর আঘাত পান। এই ঘটনার চিত্র ধারণ করতে গেলে চ্যানেল আইয়ের ক্যামেরাপার্সন আরিফুর রহমানকে পুলিশ লাঠিপেটা করে।
এভাবেই বিরোধী দলকে ধ্বংস করার সব প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে একনায়কতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। এক উদ্ভট উটের পিঠে সাওয়ার হয়েছে স্বদেশ আমার। এই গুম-হত্যা ও বিরোধী মত দমনের চেষ্টার শেষ কোথায় কেউ জানেনা।
লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী
[মতামত লেখকের নিজস্ব। মতামতের জন্য কলারোয়া নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়]
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
ট্রাম্পের হয়ে প্রচারণা চালানো মোদি’র তা ভারতের পররাষ্ট্রনীতির পরিপন্থী
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ডবিস্তারিত পড়ুন
ছাত্রদলের কাউন্সিল: ৮ভোটে হেরে গেলেন কেশবপুরের সেই শ্রাবণ
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিলে সভাপতি পদে মাত্র ৮ ভোটে হেরে গেছেনবিস্তারিত পড়ুন
ছাত্রদলের নতুন সভাপতি খোকন, সম্পাদক শ্যামল
কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নতুন নেতৃত্ব পেল বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল।বিস্তারিত পড়ুন