কেন রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেননি পোপ?
শেষ পর্যন্ত মিয়ানমার সফরের মুল ভাষণে সরাসরি রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করতে সমর্থ হননি পোপ ফ্রান্সিস। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে চলছে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সংখ্যালঘু ক্যাথলিকদের সুরক্ষায় ভ্যাটিকান সিটি এবং মিয়ানমারের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পকোর্ন্নয়নের স্বার্থেই পোপ মিয়ানমার সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। চ্যানেল নিউজ এশিয়ার এক বিশ্লেষণেও পোপের সফরকে পূণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়েছে। তবে রোহিঙ্গাদের নাম না নেওয়াকে মিয়ানমারের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এক সতর্ক কূটনৈতিক পদক্ষেপ আখ্যা দিয়েছে এশিয়াভিত্তিক ওই সংবাদমাধ্যম। একইভাবে কানাডাভিত্তিক টরেন্টো স্টার প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে দাবি করা হয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যেতে পারেননি বলেই শব্দটি ব্যবহার করেননি পোপ।
আদি জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয় স্বীকার করে না মিয়ানমার। তাদের নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করতে ‘বাঙালি’ হিসেবে পরিচিত করতে চায় ইয়াঙ্গুন। রোহিঙ্গাদের পালিয়ে মিয়ানমারে যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে দেখাতে চায় দেশটি। নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শুধু নাগরিকত্বই কেড়ে নেওয়া হয়নি বরং পদ্ধতিগতভাবে তাদের মৌলিক অধিকারও ছিনতাই করা হয়েছে। মুক্তভাবে চলাফেরা, কাজকর্ম এমনকি বিয়ের ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তবে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মানবিক আবেদন জানাতে গিয়ে চলতি বছরেই দুই দুইবার রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করেছেন পোপ ফ্রান্সিস। তাই মিয়ানমারের জনগোষ্ঠীর ভোগান্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করার মধ্য দিয়ে তিনি রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গ বাদ দিতে পারেন না। রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করতে মিয়ানমার সফর শুরুর আগেই কার্ডিনালের পক্ষ থেকে পোপকে সতর্ক করা হয়েছিল। শব্দটি উচ্চারণ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছিল উগ্র বৌদ্ধদের সংগঠনগুলো। প্রটোকল ভেঙে প্রথমদিনেই পোপকে বাধ্য করা হয়েছিল সেনা নেতৃত্বের সঙ্গের বৈঠকে।
মঙ্গলবার নেপিদোতে পোপ তার মিয়ানমার সফরের মূল ভাষণ দেন। সেই ভাষণে সরাসরি রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেননি পোপ। বিবিসির এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে প্রতিবেদক জোনাথন ফিশার জানিয়েছেন, মঙ্গলবারের ভাষণে রোহিঙ্গা শব্দটি বর্জন করে কট্টরপন্থী বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এবং অং সান সু চি’র অস্বস্তি ঠেকাতে পেরেছেন পোপ। চ্যানেল নিউজ এশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে সামরিক বাহিনীর প্রভাবের কথা চিন্তা করে মিয়ানমারের কার্ডিনাল গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়ার ভয় পেয়েছিলেন। এই বাস্তবতায় দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ জনতাকে উত্তেজিত করতে চাননি পোপ। এতে রোহিঙ্গাদের ওপর আরও বেশি করে নিপীড়ন নেমে আসার আশঙ্কা ছিল। বিবিসির বিশ্লেষণে অবশ্য রোহিঙ্গাদের বাইরে পোপের নিজ সম্প্রদায়ের সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষার প্রসঙ্গটিও উঠে এসেছে। ওই বিশ্লেষণ অনুযায়ী মিয়ানমারে বসবাসরত সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের আবেদনে সাড়া দিয়েছেন তিনি। তাদের নাজুক অবস্থার কথা বিবেচনা করেছেন।
বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার আগেই ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের মিয়ানমার সফরের দিন-ক্ষণ নির্ধারণ হয়েছিল। মিয়ানমারে বসবাসরত ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের সংখ্যালঘু মানুষের বিপন্নতায় ভ্যাটিক্যান ও মিয়ানমারের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্যই এই সফরের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। চ্যানেল নিউজ এশিয়া রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করার পেছনে সেই কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে একটি বড় কারণ আখ্যা দিয়েছে। তাদের মতে, পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নের স্বার্থে পোপ সরাসরি রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেননি। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সু চি এখন পোপের সফরকে সফল দাবি করতে পারবেন। সে দেশের ক্যাথলিক চার্চে প্রবেশের মধ্য দিয়ে পোপ দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের আভাস দিয়েছেন মনে করছেন বিবিসি প্রতিবেদক। তার ধারণা, কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে মানবাধিকারের প্রশ্নে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পোপ এখন ভ্যাটিক্যানের মাধ্যমে সরব হতে পারবেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়, ধর্মীয় নেতার চেয়ে অনেক বেশি কূটনীতিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে মিয়ানমারে পা রেখেছেন পোপ ফ্রান্সিস।
অং সান সু চি’র সমর্থকদের দাবি, রোহিঙ্গা প্রশ্নে তাদের নেত্রীর নীরবতা এবং রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন চলছে অভিযোগ করে পশ্চিমা বিশ্ব যেসব সমালোচনা করছে তাতে কেবল সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের ক্ষমতার লড়াইকে দুর্বল করা হবে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন সু চি রোহিঙ্গাদেরকে প্রাধান্য দেন না এ কথাটি কেবল অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পোপের সফরের সংবাদ সংগ্রহে থাকা বিবিসি প্রতিবেদক জনাথন জানিয়েছেন, পোপের আচরণ দেখে মনে হয়েছে, সু চির সমর্থকদের এইসব যুক্তি-তর্ক শুনেছেন তিনি। মঙ্গলবার নেপিদোতে দেওয়া ভাষণে সরাসরি রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করলেও তিনি বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ভোগান্তির কথা বলতে গিয়ে পরোক্ষে রোহিঙ্গা সংকটকে ইঙ্গিত করেছেন। যারা মিয়ানমারকে নিজেদের মাতৃভূমি মনে করে তাদের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন পোপ। মিয়ানমারের প্রত্যেক ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সবাইকে নিয়ে একটি গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা গঠনের তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
ভ্যাটিকান মুখপত্র ক্রাক্স নিউজের মঙ্গলবারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাংয়ের সঙ্গে দেখা করতে বাধ্য করা হয়েছে পোপ ফ্রান্সিসকে। ভ্যাটিকান প্রতিবেদকের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিয়ানমারের কার্ডিনাল চার্লস মং বো’র নির্দেশনা মেনেই তিনি শীর্ষ সামরিক নেত্বত্বের সঙ্গে গতকাল সোমবারের আকস্মিক সেই ১৫ মিনিটের অনির্ধারিত বৈঠকে মিলিত হন। মিয়ানমারের কার্ডিনাল নিজেও এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। টরেন্টো স্টারের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, মিয়ানমারের প্রচণ্ড ক্ষমতাশালী জেনারেললা একটি শব্দ উচ্চারণ থেকে পোপকে বিরত রাখতে চেয়েছেন। তা হলো রোহিঙ্গা।-বাংলা ট্রিবিউনের সৌজন্যে প্রকাশিত
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
পাকিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১৯ জনের মৃত্যু
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে শক্তিশালী ৫ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাতে ১৯বিস্তারিত পড়ুন
২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় হিক্কা
ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিক্কা। এর ফলে ঝড়ের পাশাপাশি ভারীবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন