৭৩ হাজার অধিবাসীর যে শহরে মসজিদ নিষিদ্ধ!
ইথিওপিয়ার একটি শহর আকসুম। প্রায় ৭৩ হাজার অধিবাসীর এই শহরে ১০ শতাংশ মুসলিম। কিন্তু এই শহরে নেই কোনো স্থায়ী মসজিদ। এমনকি মসজিদ স্থাপন করতেও দেওয়া হয় না সেখানে। তবুও ‘জাস্টিস ফর আকসুম মুসলিম’ এর ব্যানারে একদল মুসলিম সেখানে মসজিদ নির্মাণের জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাদের দাবি, মসজিদ নির্মাণ ও প্রার্থনার সুযোগ পাওয়া তাদের অধিকার। আর তাদের এ তৎপরতায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন সেখানকার অর্থোডক্স খ্রিষ্টানরা।
খ্রিষ্টান ধর্মীয় নেতারা অবশ্য এই বিষয়টিকে মানতে পারছেন না। খ্রিষ্টানদের সিনিয়র ধর্মীয় নেতা গডেফা মেরহা বলেন, আকসুম তাদের কাছে মক্কা। তাদের বিশ্বাস ইসলামের পবিত্র স্থানগুলোতে যেমন গির্জা নিষিদ্ধ, তেমনি আকসুমেও কোনো মসজিদ থাকতে পারে না।
গডেফা বলেন, ‘আকসুম একটি পবিত্র স্থান। সিটি অব মনেস্ট্রি। এখানে কেউ যদি মসজিদ নির্মাণ করতে আসেন তাহলে আমরা মরব। কখনোই এটা মেনে নেয়া হবে না। আমাদের জীবদ্দশায় এটা আমরা অনুমোদন করব না।’
যদিও সেখানকার অনেকে বিশ্বাস করেন যে এ বিতর্ক অর্থহীন। কারণ প্রাচীন এ শহরটি অনাদিকাল থেকেই ধর্মীয় সহনশীলতার জন্য সুপরিচিত।
ধর্মদুটির অনুসারীদের মতে ইসলামের সূচনালগ্নে মক্কায় অমুসলিম শাসকদের অত্যাচারে পালিয়ে প্রথম মুসলিমরা এসেছিল এই শহরে। তৎকালীন খ্রিষ্টান রাজা সে সময় তাদের স্বাগত জানিয়েছিলেন। মূলত আরব উপত্যকার বাইরে এটাই ছিল মুসলিমদের প্রথম কোনো উপস্থিতি।
এখন আকসুমের ৭৩ হাজার অধিবাসীর শতকরা ৮৫ ভাগ অর্থোডক্স খ্রিষ্টান, ১০ ভাগ মুসলিম, আর ৫ ভাগ খ্রিষ্টান ধর্মের অন্য ধারার অনুসারী।
শহরের ৪০ বছর বয়সী আব্দু মোহাম্মদ আলী নামে এক মুসলিম বলেন, তারা কয়েক প্রজন্ম ধরে খ্রিষ্টানদের একটি বাড়ি প্রার্থনার জন্য ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, শহরে আমাদের তেরটি অস্থায়ী মসজিদ আছে। শুক্রবার আমরা মাইক ব্যবহার করলে তারা বলে আমরা সেন্ট ম্যারিকে অসম্মান করছি।
চিকিৎসক আজিজ মোহাম্মদ প্রায় ২০ বছর ধরে আকসুমে বাস করছেন। মসজিদ না থাকায় অনেক মুসলিম খোলা জায়গায় প্রার্থনা করতে বাধ্য হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখানে আমরা মুসলিম ও খ্রিষ্টান সবাই একই সঙ্গে বাস করি। খ্রিষ্টানরা বাধা দেয় না। কিন্তু বহু বছর ধরেই আমরা রাস্তায় নামাজ পড়ছি, আমাদের একটি মসজিদ দরকার।’
প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে যখন ইথিওপিয়ায় সম্রাট হাইল সেলেসি ক্ষমতায় ছিলেন তখন আকসুমেও একই রকম মতপার্থক্য দেখা দেয়। সে সময় রাজ পরিবারের সদস্য ও শহরের তৎকালীন প্রধান একটি সমঝোতা করে দেন। এর ফলে মুসলমানরা ভুকিরো-মারে শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।
ওই শহরে মুসলিমদের জন্য রান্নার কাজ করেন কেরিয়া মেসুদ। তিনি বলেন, ‘মসজিদের জন্য আমরা জোর করতে পারি না। আমাদের শান্তিতে থাকতে হবে।’
খ্রিষ্টান নেতা গডেফা মেরহা বলেন, আকসুমে উভয় ধর্মের মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে। উভয় সম্প্রদায় নবী ইব্রাহিম (আ.) সম্পর্কে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একই বিশ্বাস পোষণ করেন।
তিনি বলেন, তার বেস্ট ফ্রেন্ড হলো একজন মুসলিম। তারা একসঙ্গেই বিয়ে, শেষকৃত্যের মতো নানা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তার ধারণা আকসুমে মসজিদ বানানোর এই প্রচারণার পেছনে ইথিওপিয়ার অন্য অঞ্চলের মুসলিমরা আছেন। কিন্তু অর্থোডক্স খ্রিষ্টানরা শহরের পবিত্রতা রক্ষায় সেটি হতে দেবে না।
এদিকে অনেকেরই আশা সম্রাট হেইলি সেলাসিসের সরকার এ বিষয়ে একটি সমঝোতা তৈরি করতে পারবেন। এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবিই আহমেদের বাবা একজন মুসলিম আর মা খ্রিষ্টান ছিলেন।
রিজিওনাল কাউন্সিল অব মুসলিম বলছে তারা খ্রিষ্টানদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। কাউন্সিল কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাহসে বলেন, আশাকরি খ্রিষ্টানরা মসজিদ নির্মাণে আমাদের সহায়তা করবেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
পাকিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১৯ জনের মৃত্যু
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে শক্তিশালী ৫ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাতে ১৯বিস্তারিত পড়ুন
২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় হিক্কা
ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিক্কা। এর ফলে ঝড়ের পাশাপাশি ভারীবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন