রোজার যতো প্রকার ও ফজিলত
রোজা শুধু রমজান মাসেই নয়, বছরের অন্যান্য দিনের রোজায়ও রয়েছে ফজিলত। তবে রমজানের রোজা ফরজ আর অন্যান্য দিনের রোজা নফল। পার্থক্য শুধু এই।
ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ সব রোজা এখানে তুলে ধরা হলো-
রজব মাসের নফল রোজা:
হজরত উম্মে সালমা (রাযি.) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রোজা রাখা দেখে বুঝতে পারতাম রজব মাস এসেছে। তিনি রমজানে এক মাস রোজা রাখতেন, শাবানে ২০ দিন রোজা রাখতেন; রজবে ১০ দিন রোজা রাখতেন।
সোমবারের নফল রোজা:
হজরত আয়িশা (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। (তিরমিজি ও নাসায়ি)। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুলাল্লাহ, আপনি সোমবার রোজা রাখেন কেন? তিনি বললেন, এই দিনে আমার জন্ম হয়েছে; তাই এই দিন রোজা রাখি। এখনো মদিনা শরিফে ব্যাপকভাবে এই আমল প্রচলিত আছে; প্রতি সোমবার মসজিদে নববীতে ইফতারের বিশেষ আয়োজন করা হয়, যা স্থানীয় জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আয়োজন করে থাকেন।
বৃহস্পতিবারের নফল রোজা:
হজরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সোম ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়; আমি চাই রোজা অবস্থায় আমার আমল উপস্থাপিত হোক।’ (তিরমিজি)। মক্কা শরিফে এই আমল আজও বিদ্যমান রয়েছে। মসজিদুল হারামের দোতলায় প্রতি বৃহস্পতিবার সরকারিভাবে ইফতারের আয়োজন করা হয়ে থাকে।
শুক্রবারের নফল রোজা:
শুক্রবারের নফল রোজা এক সপ্তাহের রোজার সমান। শবে জুমুআ বা জুমার রাতে নবীজি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়ের গর্ভে আগমন করেন বলে উল্লেখ আছে। তাই এই দিনটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রতি চান্দ্রমাসের তিন দিনের নফল রোজা:
প্রতি চান্দ্রমাসের ১০, ২০ ও ৩০ তারিখ রোজা রাখলে পূর্ণ মাসের রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে।
শবেবরাতের রোজা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাস এলে বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিন (১৫ তারিখ) আসবে, তখন তোমরা রাতে ইবাদত করো এবং দিবসে রোজা রাখো। (বায়হাকি)।
আশুরার নফল রোজা:
আশুরা অর্থ দশম ও দশমী। ইসলামের ইতিহাসে আশুরা দ্বারা মহররম মাসের ১০ তারিখ বোঝানো হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার দিনে রোজা রাখতেন এবং সেদিন রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। (বুখারি)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের রোজার পর আশুরার রোজাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন। (বুখারি ও মুসলিম)।
হজরত জাবির ইবনে সামুরা (রাযি.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের আশুরার রোজা সম্পর্কে নির্দেশ দিতেন এবং উৎসাহিত করতেন। অতঃপর যখন রমজানের রোজা ফরজ হলো; তখন তিনি আমাদের (আশুরার রোজার বিষয়ে) হুকুমও দিতেন না, নিষেধও করতেন না। (মুসলিম)।
মুজতাহিদ ফকিহগণের মতে, আশুরা রোজার সঙ্গে ৯ তারিখ বা ১১ তারিখ আরো একটি রোজা রাখা সুন্নত।
আইয়ামে বিযের রোজার ফজিলত:
‘আইয়াম’ আরবি শব্দ, এর অর্থ হলো দিবসসমূহ, কাল, সময় ইত্যাদি। এটি বহুবচন, এর একবচন হলো ‘ইয়াওম’, অর্থ হলো দিন বা দিবস। ‘বিজ’ বা ‘বিদ’ অর্থ শ্বেতবরণ, শুভ্রবর্ণ, ঔজ্জ্বল্য, সফেদ, সাদা রং ইত্যাদি। ‘আইয়াম বেজ’ বা ‘আইয়াম বিজ’ (পরিবর্তিত উচ্চারণে আইয়ুম বেজ) অর্থ শুক্লপক্ষীয় দিবস, চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ। (বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান)। আইয়ামে বিজে রোজা রাখা সুন্নত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখো।’ (বুখারি ও মুসলিম)। হজরত কাতাদাহ (রা.) বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং তিনি বলেন, তা এক বছরের রোজার সমতুল্য।’ (আবু দাউদ ও নাসায়ি)। রমজান মাসে যেহেতু পূর্ণ এক মাস রোজা ফরজ; তাই রমজানে আইয়ামে বিজের রোজা নেই।
এই রোজাকে সওমে আদম বা আদম (আ.) এর রোজা বলা হয়। হজরত আদম (আ.) ও মা হাওয়া (আ.) দুনিয়ায় আসার পর প্রথম এই তিনটি রোজা পালন করেন; যার বদৌলতে তারা আগের মতো জান্নাতি রুপ–লাবণ্য ও ঔজ্জ্বল্য ফিরে পান এবং এই দিনগুলোতে চাঁদ পূর্ণ শশীতে পরিণত হয়, রাতভর পূর্ণিমার জ্যোত্স্নালোক বিকিরণ করে বলে এই নামকরণ করা হয়েছে।
শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল রোজা:
হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রাযি.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখল এবং শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা পালন করল; সে যেন পুরো এক বছর রোজা পালন করল।’ (মুসলিম)। এই রোজা একাধারে বা বিচ্ছিন্নভাবেও রাখা যায়।
জিলহজ মাসের প্রথম দশকের নফল রোজা:
হজরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের ইবাদত আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এর প্রতি দিনের রোজা এক বছরের রোজার সমান এবং প্রতি রাতের ইবাদত শবে কদরের ইবাদতের সমান।’ (তিরমিজি)। উল্লেখ্য যে জিলহজ মাসের ১ থেকে ৮ তারিখ সবাই রোজা পালন করতে পারবেন। ৯ তারিখে আরাফাতে অবস্থানকারীরা ছাড়া অন্যরা রোজা পালন করতে পারবেন। ১০ তারিখে অর্থাৎ কোরবানির ঈদের দিনে ভোর থেকে পশু জবাই করা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকলেই রোজা বলে গণ্য হবে এবং এই দিন কোরবানি করা পশুর মাংস দিয়ে প্রথম আহার করা মুস্তাহাব। এই দিন পূর্ণ দিবস রোজা রাখা বিধেয় নয়।
আরাফা দিবসের নফল রোজা:
জিলহজ মাসের ৯ তারিখ, হজের দিন; এই দিন হাজিরা মক্কা শরিফের আরাফা প্রান্তরে অবস্থান করা হজের ফরজত্রয়ের একটি; তাই এই দিনকে ইয়াওমুল আরাফা বা আরাফা দিবস বলা হয়। এই দিন হাজিরা ছাড়া অন্যদের জন্য রোজা পালন করা সুন্নত। হজরত কাতাদাহ (রাযি.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আরাফা দিবসের রোজা তার আগের এক বছর ও পরের এক বছরের গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়।’ (তিরমিজি)।
ইতিকাফের জন্য নফল রোজা:
পূর্ণ এক দিন নফল ইতিকাফ ও মানত বা কাজা ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য নফল রোজা রাখতে হয়। এতে ইতিকাফের পাশাপাশি রোজার আলাদা ফজিলত লাভ হয়।
সওমে দাহার বা বছরব্যাপী নফল রোজা:
বছরে নিষিদ্ধ পাঁচ দিন তথা রোজার ঈদের দিন, কোরবানির ঈদের দিন ও তার পরের তিন দিন এবং হাজিদের জন্য আরাফাতের দিন ছাড়া অন্য সব দিন নফল রোজা রাখা জায়েজ। সারা বছর রোজা পালন করাকে সওমে দাহার বলে।
সওমে দাউদ বা দাউদী নফল রোজা:
নফল রোজা পালনের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো উপলক্ষ না থাকলে হজরত দাউদ (আ.) এর পদ্ধতি অনুসরণ সর্বোত্তম; অর্থাৎ এক দিন পর এক দিন রোজা রাখা। (বুখারি)।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
এনামুল-সম্রাটসহ ৪ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ
ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও অবৈধ অর্থ লেনদেনের অভিযোগে সংসদবিস্তারিত পড়ুন
‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। এই আয়নায় সমাজেরবিস্তারিত পড়ুন