তাদের খবর রাখেন না কেউ
তালায় পানির জন্য তাদের পাড়ি দিতে হয় ২ কিলোমিটার পথ
কপোতাক্ষ নদী এবং নদী তীরের ২০ লাখ মানুষের কথা ভেবে ৩৪টি পরিবার ছেড়ে দিয়েছেন নিজেদের বসতবাড়ি। নদী তীরের সবাই সুখে-শান্তিতে খাকবে এ চিন্তা চেতনা থেকেই মহৎ এ মানুষগুলি নিজেদের বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে দিয়েছেন টিআরএম প্রযুক্তি বাস্তবায়নের জন্য। কিন্তু তাদের খবর রাখেন না কেউ। এ ৩৪টি পরিবার এখন এক খ- খাস জমিতে (নদী ভরাট হওয়া জায়গায়) কোন প্রকার বন্দোবস্ত ছড়াই মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কপতাক্ষ নদী পাড়ের বালিয়া গ্রামে ছিলো এ পরিবারগুলির বসবাস। টিআরএম প্রযুক্তি বাস্তবায়নে খনন করা সংযোগ খালে চলে গেছে তাদের ভিটামাটি। এখন তারা পাশের গ্রাম জালালপুরের একটি সরকারি জমিতে বসবাস করেন। সে জমিতেও তাদের কোনপ্রকার বন্দবস্ত দেওয়া হয়নি। ৩৪ পরিবারের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এ স্থানটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আজিজ সুশিল পল্লী’। তালা-কলারোয়ার সাংসদ অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এবং বেসরকারি সংস্থা ‘উত্তরণ’ এখানে প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি করে ছোট ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। সে ঘরে ৩ থেকে ৭ সদস্য বিশিষ্ঠ পরিবারগুলো অতি কষ্টে বসবাস করেন।
‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আজিজ সুশিল পল্লী’তে এ একটি মাত্র ঘর ছাড়া এ পরিবারগুলির আর কিছু নেই। এখানে না আছে বিদ্যুৎ, না আছে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা, না আছে সুপেয় পানির ব্যবস্থা। সুপেয় পানির জন্য তো এখানকার বাসিন্দাদের পাড়ি দিতে হয় দুই কিলোমিটার পথ। সেখানে নতুন বাজার নামক স্থান থেকে তারা প্রতি লিটার ১ টাকা দরে পানি কিনে আনেন।
‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আজিজ সুশিল পল্লী’র গৃহবধু আসমা বেগম, ময়না বেগম, সেলিনা বেগমসহ কয়েকজন বলেন, এখানে খুব কষ্ট করে বসবাস করছি। আমাদের এখানে ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা নেই। বিদুৎ নেই, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নেই, পানি নেই। গোসল করতে আমরা আধা কিলোমিটার দূরে অন্যের পুকুরে যায়। যাদের পুকুরে গোসল করতে যায় তারা আমাদের আড় চোখে দেখে, রাগ করে।
গৃহবধু আসমা বেগম আরো বলেন, আমাদের এখানে খাওয়ার পানির হাহাকার। দুই কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে নতুন বাজার থেকে ১ টাকা প্রতি লিটার দরে পানি কিনে নিয়ে আসি। আমাদের সন্তানদের লেখাপড়ার সুযোগও কম। তারা স্কুলে গেলে সবাই ‘গুচ্ছগ্রামের লোক’ বলে ভিন্ন চোখে দেখে।
আরেক গৃহবধু নার্গিস বেগম বলেন, আমাদের টয়লেট নির্মাণের জন্য ৩টি করে রিং এবং একটি করে স্লাব দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু টয়লেটের চারপাশ এবং উপরে চাল দেওয়ার জন্য কিছু দেওয়া হয়নি। তারপরও আমরা কোনরকমে টয়লেট নির্মাণ করলেও একটু বর্ষা হলেই তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায়। আমরা বড় বাড়ি, গাড়ি চাইনা। আমাদের বেচে থাকার মতো সুযোগ-সুবিধা দিলেই আমরা খুশি।
এ ব্যাপারে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ^াস বলেন, আজিজ-সুশিল পল্লীটি কপোতাক্ষ নদীর ভরাট হওয়া একটি জায়াগায় গড়ে উঠেছে। নদীর জায়গাতো বন্দোবস্ত দেওয়া যায়না। বন্দোবস্ত দিতে হলে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হয়। কিন্তু নদীর জায়গার শ্রেণি পরিবর্তনের কোন নিয়ম নেই।
তাদের এ দুর্ভোগের ব্যাপারে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া আফরিন বলেন, যখন আজিজ-সুশিল পল্লী গড়ে তোলা হয়েছিলো তখন তাদের জন্য স্যানিটেশন এবং গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে হয়তো সেগুলি নষ্ট হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে কেউ আমাদের কাছে কোন অভিযোগ করেনি। তবে আমরা শীঘ্রই ওখানে পরিদর্শনে যাবো এবং তাদের সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা করবো।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। এই আয়নায় সমাজেরবিস্তারিত পড়ুন
তালায় ইউএনও’র প্রেরণায় গার্লস হাইস্কুলে ডেইলি স্টার কর্নার চালু
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও’র অনুপ্রেরণায় শহীদ আলী আহম্মেদ বালিকাবিস্তারিত পড়ুন