নৌকায় ভেসে ৪৮ দেশে এক পরিবার!
চার দেওয়ালের বাসাকে তাদের খাঁচার মতো লাগে। মুক্ত আকাশ আর নীল সমুদ্রের হাতছানির মাঝেই তাই জীবনের মানে খুঁজে চলেছেন তারা। নৌকায় ভেসে চলেছেন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। উদ্দেশ্যহীন; শুধু মনের শান্তি ও প্রাণের টানে।
এই তারা হলেন জেমি ও বেহান গিফোর্ড এবং তাদের তিন সন্তান, নৌকায় ভেসে বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়ানোর সূত্রে যারা গিফোর্ড পরিবার নামে ইতোমধ্যে পরিচিতি পেয়েছেন পৃথিবীজুড়ে।
তাদের আপাতত কোনও বাড়িঘর নেই। ছিল একটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তবে সেই বাড়ি এখন অতীত। আপাতত সমুদ্রেই তাদের ঘর-সংসার। নিজেদের ছোট্ট নৌকা ভাসিয়ে সমুদ্রের বুকে তারা পাড়ি দিয়েছেন কোনও এক অজানা-অচেনাকে ছুঁতে।গত ১০ বছর ধরে সমুদ্রে ঘুরছেন জেমি ও বেহান। ২০০৮ সালের ২১ আগস্ট নিজেদের বাড়ি ও চাকরি ছেড়ে তিন সন্তানের হাত ধরে তারা পাড়ি দেন সমুদ্রে। এখনও অবধি পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি দেশ চষে ফেলেছেন। ক্যারিবিয়ান সাগর থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূল ছুঁয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নানা জায়গায় ভেসে চলেছে তাদের নৌকা।
জেমির হিসাব বলছে, অন্তত ৪৮টি দেশ দেখে ফেলেছেন তারা। গত বছর অক্টোবরে শেষ এসেছিলেন নিজেদের জন্মভিটে ওয়াশিংটনে। সেখানেই সাংবাদিকরা জেঁকে ধরেন তাদের। মিডিয়ার সামনে এত বছরের অজ্ঞাতবাসের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেন জেমি ও বেহান।সেইলিংটটেম ডটকম (SailingTotem.com) নামে একটি ব্লগ লেখেন জেমি ও বেহান। এই ব্লগেই আছে তাদের অ্যাডভেঞ্চারের নানা গল্প। সমুদ্রে দিন-রাত, নতুন দেশ ও নতুন মানুষদের সঙ্গে কাটানো প্রতিটা সময় তারা নিয়ম করে লিখে রাখেন ব্লগে।
কিন্তু হঠাৎ এমন ভবঘুরের জীবন কাটানোর নেশা চেপে বসল কেন এই পরিবারের? কিসের টানে ছুটে চলেছেন তারা? জেমি জানিয়েছেন, তারা দুই জনেই একটি বেসরকারি সংস্থার উচ্চপদে ছিলেন। ঈর্ষণীয় মাইনে। তবে পরিবারকে দেওয়ার মতো সময় ছিল বড় কম। তাদের তিন ছেলেমেয়ে নিয়াল, মেইরেন ও সিওভানের বয়স তখন অনেক কম। দিনরাত কাজ, অফিস প্রজেক্টের চক্করে সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটানো তো দূরের কথা, তাদের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত হতো না।ব্লগে বেহান লিখেছেন, ‘ছেলেমেয়েরা কখন যে বড় হয়ে উঠছিল, বুঝতেই পারছিলাম না। পুরো পরিবারটাই ছিল ছন্নছাড়া। ভালোবাসার বাঁধনকে আরও মজবুত করতেই তাই সব ছেড়ে একসঙ্গে বেরিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। পুরো পরিবার এখন এক ছাদের তলায়, একজোট হয়ে জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত নতুন করে উপভোগ করছি।’
২০০২ সালে প্রথম সমুদ্র ভ্রমণের পরিকল্পনা হয়। জেমি ছিলেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, বোট তৈরি করাই ছিল তার কাজ। সেই থেকেই এই সমুদ্রে পাড়ির ভাবনা। তবে সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে উঠতে বেশ কয়েকবছর লেগে গেছে বলেই জানিয়েছেন জেমি। শেষে মনস্থির করে ২০০৮ সালে তল্পিতল্পা গুটিয়ে ভেসে তারা পড়েন সমুদ্রে। বেহানের মুখে যেন তৃপ্তির হাসি। এখনও অবধি প্রায় ৫৮,০০০ মাইল পাড়ি দিয়েছেন তারা। খরচ হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকার কাছাকাছি। তবে প্রতি মাসের খরচ বেশ মেপেঝেপেই করতে ভালোবাসেন জেমি ও বেহান।
তিনটি সোলার প্যানেল রয়েছে বোটে। আর রয়েছে একটি উইন্ড টারবাইন। বিদ্যুৎ ও আনুষঙ্গিক কাজ তাতেই মিটে যায়। গৃহস্থালীর উপকরণও খুবই সামান্য। ওয়াশিং মেশিন বলতে পাঁচ গ্যালনের একটি বাকেট। ওয়াটার পিউরিফায়ার বানিয়ে নিয়েছেন নিজেরাই। সেটাও চলে সৌরশক্তিতেই। যেসব দেশে গিয়ে বোট থামে, সেখানকার খাবার ও পোশাক বোঝাই করে নেন বোটে। তাতেই চলে যায় আরও কিছু মাস। ফের নতুন দেশে পাড়ি। এ ভাবেই কেটে গেছে প্রায় ১০ বছর।নিয়াল, মেইরেন ও সিওভান এখন বয়ঃসন্ধির গোড়ায়। তবে তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দিতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করছেন না জেমি ও বেহান। বোটেই বানিয়ে ফেলেছেন একটা ছোটখাটো লাইব্রেরি। তাতে দেশ-বিদেশের বই ঠাসা। জেমির ভাষায়, তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে চলছে ‘বোটস্কুল’। নিয়মিত পরীক্ষাও দিতে হয় তাদের।
বছরের পর বছর জলে ভেসে থাকা তো চাট্টিখানি কথা নয়। এত খরচ যোগান কীভাবে? এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে জেমি বলেছিলেন, চাকরি ছাড়লেও বোটে বসেই ফ্রিল্যান্স করেন তারা। ‘ভয়েজ উইথ কিডস’ নামে একটি বইও লিখেছেন বেহান। সেখান থেকেও বেশ কিছু টাকা হাতে এসেছে। তা ছাড়া পুরনো বাড়ির ভাড়া থেকেও অনেকটা খরচ উঠে আসে।
গড়পড়তা চার দেওয়ালের জীবনে ফেরার আপাতত কোনও ইচ্ছা নেই, এমনটাই জানিয়েছেন বেহান। বরং বাইরে থেকে পৃথিবীকে দেখতে চান। বলেছেন, ‘পরিবারের সঙ্গে আমরা খুব খুশি। কোনও চিন্তা, অবসাদ নেই। প্রতিযোগিতার বেড়াজাল নেই। শুধু আছে মন খোলা আনন্দ ও অ্যাডভেঞ্চারের চমক। এটাই আমাদের জীবন।’
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
এবার অভিনয়ে পরিচালক শিমুল সরকার
নজরুল ইসলাম তোফা:: পরিচালক শিমুল সরকার। সময়ের তরুণ জনপ্রিয় একজনবিস্তারিত পড়ুন
সালমানকে উৎসর্গ করে গাইলেন টুটুল
জনপ্রিয় রেডিও উপস্থাপক জহিরুল ইসলাম টুটুল শ্রোতা মহলে আরজে টুটুলবিস্তারিত পড়ুন
সন্তানকে নিয়ে নিউইয়র্কের পথে পথে তাহসান-মিথিলা
সন্তানকে নিয়ে নিউ ইয়র্কের পথে পথে তাহসান-মিথিলা। বিচ্ছেদ হলেও তাহসান-মিথিলাবিস্তারিত পড়ুন