প্রত্যেক জেলার একটি মাধ্যমিকে চালু হচ্ছে ‘একীভূত শিক্ষা’
দেশের প্রতিবন্ধী ও অটিজম শিশুদের জন্য চালু হচ্ছে ‘একীভূত শিক্ষা’ কার্যক্রম। প্রত্যেক জেলায় একটি করে বাছাই করা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই লেখাপড়া করবে প্রতিবন্ধী শিশুরা। প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে ক্লাস ও অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রম।
এই কার্যক্রম (একীভূত শিক্ষা) চালু করতে দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় বাছাই করছে সরকার। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় উচ্চমাত্রার প্রতিবন্ধীদের জন্য ‘বিশেষায়িত শিক্ষা’ কার্যক্রম সীমিত আকারে চালু রয়েছে। দেশব্যাপী এ বিশেষায়িত শিক্ষার জন্য প্রতিটি উপজেলায় একটি করে বিশেষায়িত প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলছে।
এছাড়া মৃদুমাত্রার প্রতিবন্ধী বা বিশেষায়িত শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষা অর্জন করা শিক্ষার্থীদের জন্য ‘একীভূত শিক্ষা’ চালু করা হচ্ছে। এর আগে দেশের আটটি মহানগরের আটটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ‘একীভূত শিক্ষা’ কার্যক্রম শুরুর পদক্ষেপ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এসব বিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতিবন্ধী শিশুরা শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়।
আর মাঝারি মাত্রার প্রতিবন্ধীদের জন্য ‘সমন্বিত শিক্ষা’র কোনও স্কুল চালু নেই। সমন্বিত শিক্ষার জন্য স্কুল চালু করতে হলে বিদ্যালয়ে আলাদাভাবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষক দরকার। অন্যদিকে সব ধরনের প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় জাতীয় পর্যায়ে ‘সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা’ চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে একটি নীতিমালা প্রস্তুত করেছে। এই নীতিমালার আওতায় সব ধরনের প্রতিবন্ধীদের জন্য সমন্বিতভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় লেখাপড়ার জন্য একটি করে বিশেষায়িত প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। বিশেষায়িত বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করা শিশুরা পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর ‘একীভূত’ শিক্ষার আওতায় লেখাপড়া করবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে জানা গেছে, ‘একীভূত শিক্ষা’র আওতায় নিতে প্রতিটি জেলায় একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় বাছাই করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় বাছাই করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে নির্দেশ দিয়েছে। গত ৪ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়, একীভূত শিক্ষার জন্য বিশেষায়িত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর কাছাকাছি একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় বাছাই করতে হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) সালমা জাহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যেসব শিশুরা বিশেষাতি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হবে তারা ‘একীভূত শিক্ষা’র আওতায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে লেখাপড়া করবে। অনেক শিক্ষার্থী আগে থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। বিদ্যালয় বাছাইয়ের পর একীভূত শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে চালু করা হলে আগে থেকে যারা লেখাপড়া করছে তাদের ওপর বিশেষ নজর রাখা হবে। বিদ্যালয়ের বিদ্যমান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রতিবন্ধী ও অটিজম শিশুদের লেখাপড়া করানো হবে। ইতোমধ্যে দেশের অনেক শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য শিক্ষকদেরও এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।’
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, সারাদেশে অটিস্টিক শিশুদের জন্য রয়েছে ৬২টি স্কুল। এর মধ্যে সুইড বাংলাদেশ পরিচালত ৫০টি, কল্যাণী ইনক্লুসিভ স্কুলের সাতটি এবং সেনাবাহিনীর ‘প্রয়াস’ নামের একটি। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে রাজধানীসহ সারাদেশেই অটিস্টিক শিশুদের স্কুল গড়ে উঠেছে।
২০১১ সালে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ক্যাম্পাসে সম্পূর্ণ অবৈতনিক একটি ‘স্পেশাল স্কুল ফর চিলড্রেন উইথ অটিজম’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে মিরপুর, লালবাগ, উত্তরা ও যাত্রাবাড়ী এবং ছয়টি বিভাগীয় শহরসহ গাইবান্ধা জেলায় একটি অর্থাৎ মোট ১১টি স্কুল চালু করা হয়েছে। এসব স্কুলে মোট ১৪৪ জন অটিজম বৈশিষ্টের শিশু বিনামূল্যে লেখাপড়া করছে। এসব স্কুল পর্যায়ক্রমে জেলা ও উপজেলায় সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, ফাউন্ডেশনের আওতায় পরিচালিত ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে একটি করে অটিজম ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে। ওইসব কেন্দ্রে অটিজম শিশু ও ব্যক্তিদের কাউন্সেলিংসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়া হয়।
এছাড়া বর্তমানে ৬৪ জেলায় একটি করে সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, সাতটি শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এবং পাঁচটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় রয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে’: লুৎফুল্লাহ এমপি
সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেছেন- ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবেও উন্নয়নবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ায় ‘মিনা দিবস’ উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য র্যালি ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা
শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে জনপ্রিয় কার্টুন ‘মিনা দিবস’ উপলক্ষ্যে কলারোয়ায় র্যালি,বিস্তারিত পড়ুন
‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই’ : জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপর গুরুত্বারোপ করে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফাবিস্তারিত পড়ুন