মামলার পর স্ত্রীকে তালাক
তালায় যৌতুকলোভী স্বামী-শ্বশুরের নির্যাতনে গৃহবধূকে হত্যা প্রচেষ্টা!
সাতক্ষীরা তালায় যৌতুকলোভী স্বামী,শ্বশুর ও শাশুড়ীর নির্মম নির্যাতনের শিকার গৃহবধু আছমা খাতুন(২৮) প্রাণে বেঁচে গেলেও সংসার টিকছেনা তার। ৪ বছরের একমাত্র শিশু কন্যাকে নিয়ে তার ঠাঁই হয়েছে পিত্রালয়ে। সর্বশেষ বাধ্য হয়ে অসহায় আছমা স্বামী শাহিনুর রহমান,শ্বশুর গোলাম মোস্তফা ও শ্বাশুড়ি খাদিজা বেগমের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে বাধ্য হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে তালা উপজেলার নেহালপুর গ্রামে।
শিকার আছমা জানান- স্বামী শাহিনুর ও তার পিতা-মাতা মিলে যৌতুকের দাবিতে গত ২৩ জুলাই সকাল সাড়ে সাত টার দিকে বসত ঘরে ফেলে বেধড়ক মারপিট ও একপর্যায়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে টান দিয়ে হত্যা প্রচেষ্টা করে। এসময় আছমা জ্ঞান হারালে ঘুমন্ত ৪ বছরের মেয়েকেসহ তারা ঘরে রেখে বাইওে থেকে তালা দিয়ে বাইওে চলে যায়। এক পর্যায়ে শিশুটি ঘুম থেকে উঠে মাকে ডাকাডাকির একপর্যায়ে আছমা জ্ঞান ফিরে পেলে ঘরের জানালা খুলে পথচারীদের ডেকে তাদের মোবাইল দিয়ে তার পিত্রালয়ে তার অবস্থার বর্ণনা দিয়ে খবর দেয়। এরপর তার পিতা-মাতাসহ স্বজনরা এসে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে। এসময় তারা তাকে নির্যাতনের কারণ জানতে চাইলে শাহিনুর ফের ১ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য জানান দেয়। অন্যথায় তারা তার মেয়েকে তালাকপূর্বক পুনরায় বিয়ে করবে বলে হুমকি দিয়ে মেয়েকে তার পিতার সাথে পাঠিয়ে দেয়। এসময় আছমাকে উদ্ধার করে তার স্বজনরা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। ঘটনার পর এনিয়ে থানায় মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ তাদেরকে আদালতে মামলার পরামর্শ দিলে গত ২৯ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সাতক্ষীরায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০(সংশোধনী ০৩)এর ১১(গ)/৩০ ধারায় একটি মামলা করেন। যার নং- পি-৩৬১/১৮।
প্রসঙ্গত,প্রায় ৬ বছর পূর্বে তালার খেশরা ইউনিয়নের শুভংকরকাটি গ্রামের আবুল হোসেনের মেয়ে আছমার সাথে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক ৬০ হাজার ১ টাকা দেন মোহরে বিয়ে হয় একই উপজেলার নেহালপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে শাহিনুর রহমানের সাথে। বিয়ের সময় শাহিনুরকে আছমার পিতা মোটর সাইকেলসহ প্রায় সাড়ে ৩ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার বিভিন্ন উপঢৌকন প্রদান করেন। বিয়ের কিছু দিন পর শাহিনুর তার পিতা-মাতার পরামর্শে আছমার মাধ্যমে তার পিতার কাছে বিকাশ ব্যবসার জন্য আরো দেড় লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করে। মেয়ের সুখের জন্য অসহায় আবুল হোসেন বহু কষ্টে আরো দেড় লক্ষ টাকা দেয় শাহিনুরকে। তবে তাদের যৌতুকের লোভ পিছু ছাড়েনি একদিনের জন্যও। দাম্পত্য জীবনে তাদের একটি কন্যা সন্তান শামিমা যার বর্তমান বয়স(৪) জন্ম হলে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। তাদেও দাবি পিত্রালয় থেকে ফের আরো ১ লক্ষ টাকা আনতে হবে। তবে আছমার পিতা আবুল হোসেনের পক্ষে পুনরায় ১ লক্ষ টাকা দেয়া কোন ভাবেই সম্ভব না হওয়ায় শাহিনুর ও তার পিতা-মাতা প্রায়ই তাকে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করতে থাকে। একপর্যায়ে গত ২৩ জুলাইয়ের ঘটনাটি ঘটে।
ঘটনার শিকার আছমা আরো জানান- ঐদিন শাহিনুর গং তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বে-ধড়ক মারপিট শুরু করে। একপর্যায়ে তারা তাকে ঘরে নিয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে দু’পাশ থেকে টান দিয়ে হত্যা চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে সে সংগা হারিয়ে ফেললে মৃত্যু নিশ্চিৎ ভেবে তারা তাকে ঘরের বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে চলে যায়। এরপর সর্বশেষ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়।
এদিকে সাতক্ষীরা আদালতের মামলায় আদালত বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তালা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের নিকট দায়িত্ব দেন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর যার তদন্ত দিনে শাহিনুর গং যথাসময়ে ঐ অফিসে হাজির হলেও আছমাকে বিষয়টি সমাজসেবা থেকে জানানো হয়নি।
সূত্র জানায়- গত ১৬ সেপ্টেম্বর সমাজ সেবা অফিস থেকে ডাকবিভাগের মাধ্যমে শাহিনুরসহ অন্যান্য আসামীদের নামে নোটিশ পাঠানো হয়। তবে এক অজ্ঞাত কারণে মামলার বাদি আছমাকে বিষয়টি জানানো হয়নি। আছমা তার এক লিখিত অভিযোগে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে,গত ২৬ সেপ্টেম্বর লোকমুখে সমাজসেবা অফিসে বসাবসির খবর পেয়ে হত ২৭ সেপ্টেম্বর ঐ অফিসে গিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হন। তবে তাকে না জানানোর কারণ জানতে চাইলে সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম তাকে জানান, তার স্বামী তাকে তালাক দিয়েছে প্রতিবেদনে বিষয়টি আদালতকে জানানো হবে। আছমাসহ তার পরিবারের দাবি, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ঐ কর্মকর্তা আসামীদের পক্ষ নিয়েছে।
এব্যাপারে সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন- কেউ নোটিশ না পেলে তার কিছুই করার নেই। এছাড়া আছমার স্বামী তাকে তালাক দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। এই আয়নায় সমাজেরবিস্তারিত পড়ুন
তালায় ইউএনও’র প্রেরণায় গার্লস হাইস্কুলে ডেইলি স্টার কর্নার চালু
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও’র অনুপ্রেরণায় শহীদ আলী আহম্মেদ বালিকাবিস্তারিত পড়ুন