২৪ বছর পর মেয়েকে খুঁজে পেলেন বাবা!
তিন বছর বয়সে যে মেয়ে হারিয়ে ফেলেছিলেন তাকেই মঙ্গলবার বুকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন তিনি। বাবা-মেয়ের এই অপূর্ব মিলন নাড়া দিয়েছে চীনের গণমাধ্যমসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২৪ বছর আগে মেয়েকে হারানোর পর তার খোঁজে হন্যে হয়ে গিয়েছিলেন ওয়াং মিংকিং। কোনও একদিন পথে মেয়ের সাথে দেখা হয়ে যেতে পারে এই আশায় বেছে নিয়েছিলেন ট্যাক্সিচালকের পেশাও।
মিংকিং স্বপ্ন দেখতেন চেংডু শহরে গাড়ি চালাতে চালাতে হয়তো একদিন তিনি তার হারিয়ে যাওয়া মেয়েকেই যাত্রী হিসেবে তুলে নিয়েছেন।
এবছরের শুরুর দিকে মেয়ের সাথে তার যোগাযোগ হয়ে যায়। রাস্তায় গাড়ি চালানোর সূত্রে নয়, তাদের মধ্যে যোগাযোগ হয় ইন্টারনেটের কল্যাণে।
অনলাইনে বাবার একটি পোস্ট দেখে মেয়েটি নিজেই তার সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। মঙ্গলবার তারা আবার একত্রিত হয়েছেন। মিংকিং তার মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছেন, বাবা তোমাকে ভালোবাসি।
মিংকিং সংবাদ মাধ্যমে জানান, তিনি এবং তার স্ত্রী লিও দেংগিং রাস্তায় ফল বিক্রি করতেন। একদিন মেয়েকে সাথে নিয়ে স্বামী স্ত্রী রাস্তার পাশে একটি স্টল বসিয়ে ফল বিক্রি করছিলেন। একজন ক্রেতার কাছে ফল বিক্রি করা শেষে তিনি হঠাৎ দেখলেন যে তাদের মেয়ে কিফেং তাদের সাথে নেই।
মেয়ের খোঁজে তারা তাদের শহরে ও আশেপাশের এলাকায় বছরের পর বছর ঘুরে বেড়িয়েছেন। পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। পোস্ট দিয়েছেন অনলাইনে।
এই দম্পতি তাদের মেয়েকে খুঁজে পাবেন এই আশায় তারা কখনো চেংডু শহর ছেড়ে যাননি। তারা ভেবেছিলেন কিফেং যদি রাস্তা খুঁজে বাড়িতে ফিরে আসে। কিন্তু সে রকমটা হয়নি।
ওয়াং তার এই খোঁজ বাড়াতে ২০১৫ সালে যোগ দেন একটি ট্যাক্সি কোম্পানিতে। তার গাড়ির কাঁচে তিনি মেয়ের সন্ধান চেয়ে একটি বিজ্ঞাপন লাগিয়ে দিয়েছিলেন। যেখানে যেতেন সেখানেই তিনি কিছু কার্ড বিতরণ করতেন যেখানে কিফেং এর ব্যাপারে কিছু তথ্য লেখা ছিলো। যেসব যাত্রীকে তিনি তার গাড়িতে তুলতেন তাদের কাছেও তিনি এই কার্ড বিলি করতেন।
এই দম্পতির আরো একটি মেয়ে আছে। কিফেং-এর কোন ছবি ছিলো না এই পরিবারটির কাছে। সে কারণে বাবা লিফেলটে তার অন্য মেয়ের ছবি ব্যবহার করতেন। কারণ তাদের চেহারায় মিল ছিলো।
তার এই অভিনব কৌশল চীনা সংবাদ মাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, হয়তো একদিন আমার মেয়ে আমার গাড়িতেই উঠবে।
এর মধ্যে চীনা পুলিশ বেশ কয়েকজন নারীকে চিহ্নিত করে যারা কিফেং হতে পারে বলে তারা ধারণা করেছিলেন। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা গেছে সেরকম কিছু নয়। কিন্তু এই সন্ধানে বড় ধরনের অগ্রগতি ঘটে গত বছরের শেষ দিকে। পুলিশ বিভাগের একজন শিল্পী বাবা ওয়াংকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। বড় হয়ে যাওয়ার পর কিফেং দেখতে কেমন তার একটা ছবি এঁকে দেন তিনি। তারপর সেই ছবিটি ছড়িয়ে দেওয়া হয় অনলাইনে।
তখন চীনেরই হাজার মাইল দূরের একটি জায়গায় কাং ইং নামের এক নারী এই ছবিটি দেখতে পান। তার সাথে ছবিটির এতো মিল দেখতে পেয়ে তিনি চমকে যান।
এ বছরের শুরুর দিকে তিনি ওয়াং এর সাথে যোগাযোগ করেন। তার সাথে কথা বলে দেখতে পান ওয়াং এমন কিছু চিহ্নের কথা বলছেন যার সাথে মিলে যাচ্ছে। যেমন তার কপালের ছোট্ট একটি দাগ। আরো বলেন, তার মেয়ে যখন কাঁদতো তখনই তার বমি হতো।
তারপর খুব দ্রুত ডিএনএ পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এবার ফল হলো ইতিবাচক- ওয়াং শেষ পর্যন্ত ২৪ বছর আগে হারিয়ে ফেলা তার মেয়েকে খুঁজে পেলেন।
সোমবার তারা একটি ভয়েস ম্যাসেঞ্জার অ্যাপের মাধ্যমে কথা বলেন প্রথমবারের মতো। মঙ্গলবার তারা সত্যিকার অর্থেই মিলিত হলেন। উত্তরের ঝিলিন প্রদেশ থেকে বিমানে করে উড়ে এলেন চেংডুতে। সাথে ছিলো তার স্বামী, ছেলে ও কন্যাও।
পরে কাং ইং সাংবাদিকদের কান্না মেশানো কণ্ঠে বলেন, সবাই বলতো আমার কোন মা নেই। কিন্তু আছে।গত ২৪ বছর ধরে আমি কি ধরনের আশা, হতাশা আর কষ্টের মধ্যে দিয়ে গেছি সেটা আমি আপনাদের বলতে পারবো না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা একে অপরকে খুঁজে পেয়েছি।
চীনা সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে, কাং ইং তার বাবার বাড়ি থেকে মাত্র ১২ মাইল দূরের একটি শহরে বেড়ে উঠেছেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
পাকিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১৯ জনের মৃত্যু
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে শক্তিশালী ৫ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাতে ১৯বিস্তারিত পড়ুন
২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় হিক্কা
ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিক্কা। এর ফলে ঝড়ের পাশাপাশি ভারীবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন