আশাশুনিতে সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখল নিয়ে ঘর নির্মাণের চেষ্টা
জোরপূর্বক জমি দখল করে ঘর নির্মাণ করার চেষ্টা চালানোর ঘটনায় এক সপ্তাহ ধরে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার পাইথালী গ্রামের একটি সংখ্যালঘু পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।। গত ৭ মার্চ এ ঘটনা ঘটার পর প্রতিকার না পেয়ে জবরদখলকারিদের হুমকিতে প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে ওই পরিবারের সদস্যরা। পাইথলী গ্রামের তুষার দাস জানান, পৈতৃক সূত্রে তারা উপজেলার গোয়ালডাঙা গ্রামে বাসিন্দা হলেও বাবা রঞ্জু দাসসহ অন্যরা বিভন্ন স্থানে বসবাস শুরু করেন। বাবা বিয়ের পর পাইথালীতে শ্বশুর তারাপদ দাসের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। সেখানেই তাদের চার বোন ও তার জন্ম হয়। নয় বছর আগে সন্তোষ দাসের মৃত্যুর পর মামী ও মামাত ভাই বোনেরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চুচুড়ায় চলে যায়। এরপর থেকে মামার পাঁচ শতক জমিতে ঘরবাড়ি বেঁধে বাবা, মা, স্ত্রী ও দু’ মেয়েকে নিয়ে ভালই ছিলেন তিনি। বসত ঘর ভেঙে যাওয়ায় এক মাস আগে তিনি নতুন ঘর নির্মাণ করার জন্য মাটির ভিত তৈরি করে বাঁশের চাল তৈরি করেন। তুষার দাস আরো জানান, ১৯৭৩ সালে ছোট দাদু কালা চাঁদ দাসের কাছ থেকে কেনা জমিতে সুলতান সরদারের ছেলে সাজউদ্দিন ঘর বাঁধবেন বলে এলাকার কয়েকজনকে জানান। একপর্যায়ে গত ৭ মার্চ সকালে তার বাড়ির সামনে উঠান ও রাস্তা দখল করে সাজউদ্দিন, ছয়রুদ্দিন, ময়রুদ্দিন ও কোমরউদ্দিনসহ তাদের বাড়ির লোকজন দা, শাবল ও কুড়াল নিয়ে তার নবনির্মিত ঘরের সামনে উঠান ও রাস্তা দখল করে ঘর নির্মাণ শুরু করে। বাধা দেওয়ায় তাকেসহ তার মা গীতা রানী, স্ত্রী খুকুমনি ও মেয়ে অন্তরাকে ধাকা মেরে ফেলে দেওয়া হয়। ফেলে দেওয়া হয় দেড় বছরের মেয়ে অনন্যাকে। বিষয়টি নিয়ে বুধহাটা ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলীকে জানালে তিনি বিজন দে ও স্থানীয় ইউপি সদস্যকে বিষয়টি দেখার জন্য বলে দেন। তাতে কোন লাভ না হওয়ায় তিনি থানাকে অবহিত করেন। উপপরিদর্শক প্রদীপ সানা ঘটনাস্থলে এসে নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখে শুক্রবার সকালে থানায় আসার জন্য উভয়পক্ষকে বলে যান। এরপর বিজন দে ও ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান ওই জমি মাপ জরিপ করে লম্বা লম্বি করে ভাগ করে দিলে তাদের যাতায়াতের পথ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। গত শুক্রবার তারা থানায় গেলেও প্রতিপক্ষ সাজউদ্দিনরা না যাওয়ায় মঙ্গলবার সকালে আবারো সময় দেওয়া হয়। মঙ্গলবার তারা থানায় যেয়ে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বললে সাজউদ্দিনের লোকজন তাকে ধমক দেয়। একপর্যায়ে আগামি শনিবার উপপরিদর্শক প্রদীপ সানা ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা চালাবেন বলে উভয়পক্ষকে জানিয়ে দেন। তুষার আরো অভিযোগ করে বলেন, ঘর বাঁধতে বাধা দেওয়ার পরপরই পুলিশ চলে যাওয়ার পর সাজউদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যরা তাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এক সময়ে সেখানে ২৫ ঘর হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করলেও বর্তমানে তারা এক ঘর বসবাস করেন। ফলে তারা আতঙ্কিত ও প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। পাইথালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী তার মেয়ে অন্তরা ভয়ে স্কুলে যেতে চাইছে না। সরেজমিনে মঙ্গলবার সকালে পাইথালী গ্রামে গেলে আকবর আলী, আসাফুর রহমান, জেবুন্নেছা, রিজিয়া ও ছবিরন্নেছা জানান, ১৯৭৩ সালে শরিকের জমি কিনে সাজউদ্দিনরা সেখানে পাকা বাড়ি করে বসবাস করছেন। দাদুর জমিতে বাস করছেন তুষার। অথচ ৪৫ বছর পর সাজউদ্দিনের জমি নিয়ে হুঁশ হয়েছে। ইচ্ছে করলেই তো আর জোর করে ঘর বেঁধে একটি সংখ্যালঘু পরিবারকে অবরুদ্ধ করে ফেলা যাবে না। শান্তিপূর্ণ বসবাসের সুবিধার্থে তারা তুষারকে সব ধরণের সহযোগিতার জন্য প্রশাসনকে বলবেন। আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক প্রদীপ সানা জানান, বিষয়টি নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা চলছে। শনিবার সকালে তিনি ঘটনাস্থলে যেয়ে এলাকায় বসবাসরত সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে কাগজপত্র অনুযায়ি মীমাংসার উদ্যোগ নেবেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। এই আয়নায় সমাজেরবিস্তারিত পড়ুন
আশাশুনিতে পূর্বের বিয়ের তথ্য গোপন করে আবারো অন্যত্র বিয়ে দেয়ার অভিযোগ!
সাতক্ষীরার আশাশুনিতে পূর্ববর্তী বিয়ের তথ্য গোপন করে অধিক লাভ ওবিস্তারিত পড়ুন