জামায়াতের ‘আচমকা-ই’ ফ্যাক্টর
সংসদ নির্বাচন : সাতক্ষীরার ৪টি আসনে ‘সম্ভাব্য প্রার্থী’ হিসেবে মানুষের মুখে যারা
বাকী এখনো প্রায় দেড় বছর। তবে এখন থেকেই আগামি ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন সাতক্ষীরার ৪টি সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা। আবার অনেকের নাম উঠে আসছে সাধারণ মানুষের মুখে মুখে।
জামায়াতে ইসলামী বাদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ অন্য দলগুলোর নেতৃবৃন্দ প্রকাশ্যেই তৎপরতা চালাচ্ছেন। তবে এ জেলায় ‘নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিলকৃত’ জামায়াতের শক্তিশালী রাজনৈতিক অবস্থান আছে, প্রকাশ্য না হলেও অপ্রকাশ্য। মিত্র দল বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি না হলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে পারেন জামায়াত নেতারা। সাতক্ষীরার চারটি আসনের জয়-পরাজয়েই জামায়াতের প্রভাব থাকতে পারে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াত ঘরনার ব্যক্তিরা অনেকে শাসকদলীয় নেতৃবৃন্দের ছত্রছায়ায়ও চলে গেছে। আবার বিএনপি’র সাথে এ জেলাতে তাদের ‘খুব বেশি বনিবনা না হওয়ায়’ জোটগত প্রার্থীতার বিষয়টিও স্পষ্ট নয়।
৪ দলীয় জোট সরকারের সময় ও পরবর্তীতে বিএনপির ঘাড়ে চেপে জামায়াত তাদের কার্যসিদ্ধ করলেও জামায়াতের কারণে-ই বিএনপির-ই বেশি ক্ষতি হয়েছে। ২০১৩-১৪ সালে আন্দোলনের সময় থেকে এ পর্যন্ত তান্ডব-নাশকতার সিংহভাগ জামাত-শিবির করছে আর বিএনপি মরছে -এমনটাই উঠে এসেছে সাধারণ মানুষের মুখে। তাছাড়া নতুন প্রজন্মের ভোটারদের মাঝে জামায়াতের ধর্মান্ধতা ও ধর্মকে মূল হাতিয়ার হিসেবে রাজনীতি, দূর্ধর্ষ জঙ্গিদের মতো ‘নিরবে ব্রেনওয়াশ’ করার কর্মকান্ডকে ‘নেতিবাচক’ হিসেবে অনেকটা গণ্য। এতো কিছুর পরেও গ্রাম্যঞ্চলের ধর্মভিরু অতি সাধারণ মানুষের মাঝে জামায়াতের ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বেশ জনপ্রিয় থাকায় সাতক্ষীরা জেলায় আগামি সংসদ নির্বাচনে জামায়াত ‘আচমকা’ ফ্যাক্টর হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
২০০১ সালের নির্বাচনে জেলার তিনটি আসনে জামায়াত প্রার্থীরা বিজয়ী হন। অবশ্য ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জামায়াত কোনো আসনে জিততে পারেনি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনবিরোধী আন্দোলনে জামায়াত সাতক্ষীরার চারটি আসনে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। জামায়াত দৃশ্যত অনেকটা কোনঠাসা হলেও কার্যত তারা পর্দার অন্তরালে থেকে ‘জঙ্গি সংগঠনের মতো’ আচমকা-আচমকা এবং নিরবে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন, বিশেষ করে গ্রাম্যঞ্চলের সাধারণ মানুষের মাঝে।
প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মী সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালানোর পাশাপাশি দলীয় কোন্দল মেটাতে ব্যস্ত। চারটি আসনে (সংসদীয় ১০৫, ১০৬, ১০৭ ও ১০৮) এ এখনই ব্যানার, পোস্টার, প্যানাসহ নানা ধরনের শুভেচ্ছাবার্তা সংবলিত প্রচারণা লক্ষ্য করা গেছে।
স্থানীয় সূত্রের ভাষ্যমতে আগামি ১১তম সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরার ৭টি উপজেলার ৪টি সংসদীয় আসনের প্রচারণায় থাকা এবং সাধারণ মানুষের মুখেমুখে থাকা সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তুলে ধরা হলো।
সাতক্ষীরা-১ (তালা ও কলারোয়া) : ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ভারত সীমান্ত লাগোয়া এ আসনে লড়াই হতে পারে সেয়ানে সেয়ানে। আ.লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪দলীয় জোট অটুট থাকলে বর্তমান এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য এড. মুস্তফা লুত্ফুল্লাহ আবারও ‘নৌকা’র মনোনয়ন পেতে পারেন। আর ‘বারবার রং পাল্টানো’ জাতীয় পার্টিকে নিয়ে মহাজোট হলে এই আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখ্ত। এদিকে, মনোনয়ন প্রত্যাশায় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ, যুগ্ম.সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ কামাল শুভ্র, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় সহ.সভাপতি সরদার মুজিব, জেলা মহিলা আ.লীগের যুগ্ম সম্পাদক সেজুতি পারভিন, আ.লীগের তালা উপজেলা সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ও তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার, কলারোয়া উপজেলা সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন, কলারোয়া উপজেলা আ.লীগ নেতা সহকারী অধ্যাপক মনিরুজ্জামান (মন্ময় মনির), কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগের নির্বাহী সদস্য সরদার আমজাদ হোসেন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ.সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সৈনিকলীগের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক কামরুল ইসলাম, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা কামরুজ্জামান সোহাগ। নিজেকে গুটিয়ে রাখলেও সাধারণ মানুষের মুখে ভাসছে আ.লীগের সাবেক সাংসদ ও সাবেক কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান বিএম নজরুল ইসলামের নামও।
এ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে প্রায় নিশ্চিত দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক, জেলার সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব। তবে বিকল্প হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে কলারোয়া পৌর মেয়র গাজী আক্তারুল ইসলাম ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ.সভাপতি আতিকুজ্জামান রিপনের।
জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ইজ্জত উল্লাহ নির্বাচন করতে পারেন। তবে বিএনপির সাথে জোট না হলে ইজ্জত উল্লাহ কিংবা তাদের ঘরনার যেকোন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।
এছাড়া তালা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এসএম নজরুল ইসলাম, জাসদের কেন্দ্রীয় সহ.সভাপতি শেখ ওবায়েদুস সুলতান বাবলু দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে থাকতে পারেন।
এর বাইরে কয়েকজন সাবেক আমলাদেরও নামও শোনা যাচ্ছে মানুষের মুখে।
তবে ‘সব দল নির্বাচনে অংশ নিলে’ এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ‘হাই ভোল্টেজে’ যাদের নাম ‘এখন পর্যন্ত প্রায় চূড়ান্ত হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে তারা হলেন- আ.লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমান এমপি এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, বিএনপির সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব, জামায়াতের ইজ্জত উল্লাহ ও জাতীয়পার্টির সৈয়দ দিদার বখত।
সাতক্ষীরা-২ (সদর): একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইদউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, সদর উপজেলা সভাপতি এসএম শওকত হোসেন, সাবেক সচিব সাফি আহমেদ ও ভোরের পাতা পত্রিকার সম্পাদক ড.এরতেজা হাসান জজ।
এ ছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- দলটির জেলা সভাপতি রহমত উল্লাহ পলাশ, বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ তারিকুল হাসান, জেলা বিএনপির সহ.সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র এমএ জলিল ও কামরুল ইসলাম ফারুক।
এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নের দৌড়ে আছেন- দলটির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি আবদুল জব্বার ও জেলা সভাপতি শেখ আজহার হোসেন।
বাম দল ন্যাপের জেলা সম্পাদক কাজী সাঈদও নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এ আসনে নির্বাচন করতে পারেন জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আবদুল খালেক।
সাতক্ষীরা-৩ (দেবহাটা, আশাশুনি ও কালীগঞ্জের একাংশ) : দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলা এবং কালীগঞ্জ উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত এ আসন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক এমপি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনও নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের জন্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক সাবেক এমপি মুনসুর আহমেদ, আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
বিএনপি থেকে মাঠে রয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শহিদুল আলম।
এ ছাড়া জাতীয় পার্টির হয়ে কাজ করছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি স ম সালাউদ্দিন।
এ আসনে জামায়াত নেতা হাফেজ রবিউল আলম নির্বাচন করতে পারেন।
সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর ও কালিগঞ্জের একাংশ) : সুন্দরবন ঘেঁষা শ্যামনগর উপজেলা ও কালীগঞ্জ উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত এ আসন থেকে বর্তমান এমপি শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম জগলুল হায়দারের মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত বলে ধরে নিচ্ছেন অনেকে। এ ছাড়াও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শফিউল আজম লেলিন ও শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল হক দোলনও তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট ইফতেখার আলী ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মাস্টার।
এ ছাড়া জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ছাত্তার মড়ল ও বহিষ্কৃত নেতা এইচএম গোলাম রেজা। জামায়াত থেকে প্রার্থী হতে পারেন গাজী নজরুল ইসলাম।
সাতক্ষীরা জেলার ৮টি পুলিশ থানা, ২টি পৌরসভা ও ৭টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ ৪টি সংসদীয় আসনে আগামি সংসদ নির্বাচনে এর বাইরেও অনেক নতুন মুখ প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে বলে স্থানীয় ভাষ্যে উঠে এসেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও রাজনৈতিক দলগুলো নিজস্বভাবে নির্বাচন ও প্রার্থীতার বিষয়ে জরিপ চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। সব ঠিকঠাক থাকলে জনগণের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির যোগসূত্র ঘটবে আগামি নির্বাচনে- এমনটাই মনে করছেন সচেতন মহল।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
ট্রাম্পের হয়ে প্রচারণা চালানো মোদি’র তা ভারতের পররাষ্ট্রনীতির পরিপন্থী
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ডবিস্তারিত পড়ুন
ছাত্রদলের কাউন্সিল: ৮ভোটে হেরে গেলেন কেশবপুরের সেই শ্রাবণ
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিলে সভাপতি পদে মাত্র ৮ ভোটে হেরে গেছেনবিস্তারিত পড়ুন
ছাত্রদলের নতুন সভাপতি খোকন, সম্পাদক শ্যামল
কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নতুন নেতৃত্ব পেল বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল।বিস্তারিত পড়ুন