শ্যামনগরে কাঁকড়া চাষ নিয়ে বিবিসির প্রতিবেদন
কাঁকড়া ব্যবসা: সাতক্ষীরার শ্যামনগরে চিংড়ি চাষ বাদ দিয়ে কাঁকড়া ব্যবসায় ঝুঁকছে অনেকে। সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার দাতিনাখালি। বেড়ি বাঁধের এক পাশে জনবসতি, অপর পাশে নদী আর সুন্দরবন। এ এলাকা একটি চিংড়ি চাষের জন্য পরিচিত ছিল। এখন এলাকাটি প্রসিদ্ধ কাঁকড়া চাষের জন্য।
গত তিন-চার বছরের মধ্যে এখান পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। বাঁধের ভেতরে গড়ে উঠেছে বহু কাঁকড়া চাষের প্রকল্প।
বছর তিনেক আগে কাঁকড়া চাষ শুরু করেন দাতিনাখালির বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার। বাজার থেকে কাঁকড়া কিনে প্লাস্টিকের ছোট ছোট বাক্সে ভরে পুকুরে রেখে দেন তিনি। প্রতিটি বাক্সে এক একটি করে কাঁকড়া। এর মাধ্যমে তিনি কাঁকড়াগুলোকে নরম করেন। সেগুলো নরম করার পর আবারো বিক্রি করে দেন আব্দুস সাত্তার।
“বাজার থেকে শক্ত কাঁকড়া ক্রয় করি। একটার ওজন হয় ৫০ গ্রাম। তারপর বক্সে মধ্যে রেখে সেগুলোকে খাবার দিই। তেলাপিয়া মাছ ছোট ছোট করে খাদ্য হিসেবে বক্সে দেই। এটা ১৫ দিন আমাদের এখানে পাইলতে হয়,” বলছিলেন মি: সাত্তার।
তিনি জানালেন, প্রতিমাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকার কাঁকড়া বিক্রি করেন। সব খরচ বাদ দিয়ে ভালোই চলছে তাঁর ব্যবসা।
এ অঞ্চলের মানুষ যারা এক সময় বাগদা চিংড়ি চাষের সাথে জড়িত ছিলেন তারা এখন কাঁকড়ার ব্যবসায় ঝুঁকেছেন। তারা বলছেন, বাগদা চিংড়ি ঘেরে মাঝে মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। আর একবার ভাইরাস ছড়ালে পুরো ঘের উজাড় হয়ে যায়।
সায়েরা পারভীন গত তিন বছর ধরে কাঁকড়ার ব্যবসা করছেন। তার বর্ণনায় কাঁকড়া চাষে লাভ অতুলনীয়।
“শক্ত কাঁকড়া আমরা কিনে আনি আড়াইশ টাকা কেজি। বিক্রি করি ৫৬০ টাকা। এর মধ্যে খরচ আছে। পুকুরে মেডিসিন দিতে হয়, খাবার দিতে হয়। তারপরেও অর্ধেক-অর্ধেক লাভবান থাকা যায়,” বলছিলেন সায়েরা পারভীন।
কাঁকড়ার ব্যবসা করার জন্য সায়েরা খাতুন এবং আব্দুস সাত্তারের মতো অনেকেই বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। দ্রুত বিকাশমান এ ব্যবসায় দিতে আগ্রহী বেসরকারি সংস্থাগুলো। এদেরই একটি জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন।
প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা মো: আব্দুল আলী বলেন, কাঁকড়ার ব্যবসায় ঋণ দিলে সেটি আদায়ের হারও বেশ ভালো। যার অর্থ ব্যবসা ভালোই চলছে। আলী বলেন, ” এই কাঁকড়া গুলা থাইল্যান্ড, জাপান এবং চীনে যায়। নভেম্বর থেকে তিন মাস কাঁকড়ার ব্যাপক চাহিদা থাকে।”
স্থানীয় বাজরে প্রতিদিন যে পরিমাণ কাঁকড়া বেচাকেনা হয় সেটি একেবারে কম নয়। দাতিনাখালির একটি বাজারে এক কাঁকড়া ব্যবসায়ী অমল কুমার মণ্ডল বলছিলেন, তার দোকানে প্রতিদিন প্রায় ১০০ কেজির মতো কাঁকড়া ক্রয় বিক্রয় হয়। আর পুরো বাজারে এটি ৫০০ কেজির মতো কাঁকড়া ক্রয়-বিক্রয় হয়। তাছাড়া বাগদা চিংড়ির চেয়ে কাঁকড়ার ব্যবসায় দ্রুত নগদ টাকা লেনদেন হয়।
কাঁকড়া ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার বলেন, বাগদা চিংড়ির ব্যবসায় টাকার নিশ্চয়তা কম।
সাত্তার বলেন, “দেখা যেতো ফ্যাক্টরি-ওয়ালারা টাকা সেভাবে দেয়না। পাঁচ লাখ টাকার বাগদা চিংড়ি পাঠালে টাকা দেয় দিতো দুই লাখ। তিন লাখ বকেয়া। আর কাঁকড়ার ব্যবসায় এখন মাল দিলে এখনই টাকা।”
দাতিনাখালির স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই যেমন কাঁকড়ার ব্যবসার সাথে জড়িত, তেমনি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে কাঁকড়ার ব্যবসায় নাম লিখিয়েছেন ঢাকা-ভিত্তিক কিছু পরিচিত ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই ব্যবসায় বিনিয়োগ যত বেশি লাভও তত বেশি।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। এই আয়নায় সমাজেরবিস্তারিত পড়ুন
সাতক্ষীরা জেলা ব্যাপী গ্রেফতার ১৩, ইয়াবা-ফেন্সিডিল-গাঁজা উদ্ধার
সাতক্ষীরা জেলা ব্যাপী পুলিশের মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযানে মাদক মামলারবিস্তারিত পড়ুন