শার্শায় বিএনপির তৃপ্তি, আ.লীগের আফিল! লড়াই হবে জমজমাট
যশোর-১ শার্শা আসনের জন্য আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মন থেকে এখনো দুঃশ্চিন্তা দুর হয়নি। দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে সমর্থকরাও। বড় এ দুটি জোট থেকে কে মনোনয়ন পাবেন তা নিশ্চিত নয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এদিকে যেকোনো সময় দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে।দু দলেই বিশেষ করে আওয়ামীলীগ ও বিএনিপর নিতিনির্ধারকরা প্রতিটি আসনের প্রার্থী নিয়ে চুল চেরা বিশ্লেষণ করছেন। তারা ভেবে চিন্তেই প্রার্থী চুড়ান্ত করবেন।
শার্শা আসনটি দুদলই ধরে রাখতে চাচ্ছে।তাই হেভওয়েট প্রার্থী দেবে দু দল থেকে।নির্বাচনের আগে থেকেই মাঠে তৎপর ছিলো আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এদিকে মাঠে ছিলোনা জামাত বিএনপি। তাদের সেই শুন্যতা পুরন করতে বিবেচনা করেই প্রর্থী নির্বাচন করবে বিএনপি জোট।
শার্শার আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বর্তমান সাংসদ শেখ আফিল উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন, পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশনের সাবেক মহাপরিচালক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মাবুদ, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল মান্নান মিন্নু, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মুজিবুদ্দৌলাহ সরদার কনক, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এর অ্যাডভোকেট ড. এ কে এম আখতারুল কবীর ও শাহাজান গোলদার। তবে এতো লোক মনোনয়ন জমা দিলেও আফিল ও মাবুদের মধ্য চলছে মনোনয়নের লড়াই। আওয়মীলীগের মধ্য আভ্যান্তরীন কোন্দল রয়েছে।
বর্তমান সংসদ সদস্য ও বেনাপোল পৌর মেয়র এই দুইজন দলীয় কোন্দলে দু’মেরুতে অবস্থান নিয়েছেন। যদিও মনোনয়ন পাবেননা মেয়র। দ্বন্দ্বের এই টানা পোড়নে কেউ কারো মুখ দেখতে পর্যন্ত চায় না। এই অবস্থায় আওয়ামী ঘরানার বহু কর্মী-সমর্থকরা মনে করছে আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি হয়তে নৌকার হাল ধরবে। সেই হিসেবে মাঠে নামেন সাবেক এডিশনাল আইজিপি ও ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্টের সাবেক মহা-পরিচালক মো. আব্দুল মাবুদ। কিন্তু দলীয় নিতী নির্ধারকরা তার ওপর ভরসা রাখতে পাছেননা। আওয়ামীলীগ কোনমতেই এই আসনটি হাতছাড়া করবেনা তাই তারা আফিলকেই বেছে নেবে।
অপরদিকে বিএনপির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মহসিন কবির, শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব খায়রুজ্জামান মধু, সাধারণ সম্পাদক ও শার্শা সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হাসান জহির, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুরুজ্জামান লিটন।
মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে দলে নেয়ায় মনোনয়ন ঠেকাতে মরিয়া একটি পক্ষ। আবার জামায়াতের অস্তিত্ব নিয়েও রয়েছে বিএনপিতে ভয়। তবে চার প্রার্থী আতঙ্কে আছেন বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে নিয়ে। তাকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া ও প্রার্থী হিসেবে নাম আসায় শার্শা বিএনপির রাজনীতিতে বেশ ঝড় উঠেছে। তারা চাচ্ছে তৃপ্তিকে বাদ দিয়ে এ আসনে জামায়াতের শূরা সদস্য মাওলানা আজীজুর রহমানকে প্রার্থী করে তাকে সমর্থন দিতে।
এদিকে, জামায়াত ঐক্যফ্রন্টে যোগ না দিলেও বিএনপি-জামায়াত কয়েকটি আসনে জোটগত নির্বাচন করবে। সে রকম একটি তালিকা দিয়েছে বিএনপিকে। সেক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান কি হবে তা নিয়েও তৃণমূলে নানা প্রশ্ন ঘুরছে। কারণ ইতোপূর্বে এখানে জোটগতভাবে জামায়াত বিজয়ী হয়েছে। তবে এবার জামায়াতের নিজের ব্যানারে ভোট করার সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় জামায়াত বিএনপির ঘাড়ে ভর করে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়ন চেয়েছেন এ আসনে।
সাধারণ ভোটারদের ধারণা সর্বশেষ জোটগত নির্বাচনে এ আসনে প্রার্থী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য যশোর জেলার সাবেক আমীর মাওলানা আজিজুর রহমান। তিনি সামান্য ভোটে পরাজিত হন। ফলে বিএনপির জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে আজিজুর রহমানকে ভাবছেন তৃণমূলের অনেকে।
জাতীয় পাটির মনোনয়ন পেতে জাতীয় পার্টির যশোর জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ও শার্শা উপজেলা সভাপতি ডা. মো. আক্তারুজ্জামান একমাত্র কান্ডারি হিসাবে ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগের সাথে জোট হবে জাতীয় পার্টির। সে ক্ষেত্রে এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকছে না।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর শূরা সদস্য মাওলানা আজীজুর রহমান। জামায়াত ইসলামী একাদশ জাতীয় সংসদে যে ক‘টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা বিএনপিকে জানিয়েছে তার মধ্যে যশোর ১ আসনটি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিএনপি জামায়াতকে এ আসনটি ছেড়ে দেবে কিনা তা নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় কমিটির ওপর। তবে এবারের নির্বাচন বিএনপির বাচা মরার লড়াই। সে ক্ষেত্রে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে বিএনপির হয়ে তৃপ্তির আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
যশোরের শার্শা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে যশোর ১ আসন গঠিত। এই নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫৩ হাজার ৪৮১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ২৬ হাজার ১৮১ জন। আর নারী ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজার ৩০০ জন। এ আসনে নারী ভোটার বেশি। সব দলের জন্য এই আসনটি মর্যাদার। বিগত ১০টি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৫ বার, বিএনপি ৩ বার, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত একবার করে বিজয়ী হয়েছেন।
মাঠ পর্যায়ের তথ্য ও বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত ভোটের হিসাব-নিকাশে দেখা যায় একক রাজনৈতিক দল হিসেবে এই আসনে আওয়ামী লীগের রিজার্ভ ভোটের সংখ্যা ৪০-৪৫ শতাংশ। বিএনপির একক ভোটের সংখ্যা ৩৫-৪০ শতাংশ। বিএনপি জোটের শরীক জামায়াতে ইসলামীর একক ভোটের সংখ্যা ১৫-২০ শতাংশ। এক্ষেত্রে জোটগত হিসাবে আওয়ামী লীগের তুলনায় বিএনপি-জামায়াত জোটের ভোটের সংখ্যা প্রায় ৬০ শতাংশ। যা কিনা আওয়ামী লীগ জোটের চেয়ে ১০-১৫ শতাংশ বেশী। অপরদিকে এই আসনে ২-৩ শতাংশ ভোট পেয়ে থাকে জাতীয় পার্টি। বাকী অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই। সেই হিসেবে বিএনপি জামায়াতের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের যোগ্য প্রার্থী না দিলে এ আসনটি হারাবে আওয়ামী লীগ। তাই সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আওয়ামীলীগের নৌকার মাঝি হয়ে আসছেন শেখ আফিল উদ্দীন।অন্যদিকে বিএনপি তার অস্তিত্ব ধরে রাখতে মরন কামড় দিতে মাঠে নামাবেন মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে। নির্বাচনি বিশ্লেষকদের অভিমত শার্শায় এই দুইজনই নামছে ভোটযুদ্ধে। আর নামলে লড়াইটা হবে জমজমাট।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
ট্রাম্পের হয়ে প্রচারণা চালানো মোদি’র তা ভারতের পররাষ্ট্রনীতির পরিপন্থী
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ডবিস্তারিত পড়ুন
ছাত্রদলের কাউন্সিল: ৮ভোটে হেরে গেলেন কেশবপুরের সেই শ্রাবণ
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিলে সভাপতি পদে মাত্র ৮ ভোটে হেরে গেছেনবিস্তারিত পড়ুন
ছাত্রদলের নতুন সভাপতি খোকন, সম্পাদক শ্যামল
কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নতুন নেতৃত্ব পেল বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল।বিস্তারিত পড়ুন