শরীকদের মান ভাঙ্গাতে উদ্যোগ নিচ্ছে আ.লীগ
নির্বাচনের আগে জোট সরকারের প্রভাবশালী দুই মন্ত্রীর বাহাস জোটের ভেতরেও বাইরে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। যার ফলশ্রুতিতে জনমনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। পাশাপাশি ১৪ দলের শরীকদের মধ্যে মান-অভিমানের সৃষ্টি করে। এ অবস্থা নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমকে ইতিমধ্যেই জোটের সভা ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী নিজেই উপস্থিত থাকবেন। সেই সঙ্গে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশ দেন ১৪ দলের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করতে। সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত বুধবার (৮ নভেম্বর) কুষ্টিয়ার মিরপুরে এক জনসভায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ক্ষমতাসীন দলকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বক্তব্য দেন। আওয়ামী লীগ সরকারের শরিক জাসদের এই সভাপতি বলেন, ‘আপনি (আ.লীগ) আশি পয়সা। আর এরশাদ, দিলীপ বড়ুয়া, মেনন আর ইনু মিললে এক টাকা হয়। আমরা যদি না থাকি, তাহলে আশি পয়সা নিয়ে রাস্তায় ফ্যা-ফ্যা করে ঘুরবেন। এক হাজার বছরেও ক্ষমতার মুখ দেখবেন না।’
এর পরদিনই (৯ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তন এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছ থেকে। তিনি বলেন, ‘ইনু সাহেব অভিমান, ক্ষোভ থেকে বোমা ফাটিয়েছেন। কেন এ অভিমান? উনি নিজেও জানেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন করলে রেজাল্ট কী হবে? আগে করে তো টেস্ট করেছি। আমাদের দলের শরিক, তবে নির্বাচন এক সাথে করব। সরকারের সাথে নির্বাচন করে কিছু আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন।’
এ ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে ও সরকারি দলে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের ঐক্য নিয়েও অনেকে সংশয় প্রকাশ করেন। এ নিয়ে জোটের অভ্যন্তরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও মান-অভিমানেরও সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। আলোচনার এক পর্যায়ে উঠে ১৪ দলের শরিক জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রসঙ্গ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, ইনু, সাহেবের কী হয়েছে?
জবাবে মোহাম্মদ নাসিম প্রধানমন্ত্রীকে জানান, ‘আপনার সঙ্গে তিনি দেখা করতে পারেন না। ১৪ দলে তেমন পাত্তা পান না। সেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমন হওয়া ঠিক না। ১৪ দলের শরিকগুলো হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। এর মধ্যে কোনো ভাঙ্গন আমি দেখতে চাই না। দলের শরিকদের মধ্যে কথার লড়াই আর কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করতে হবে। আপনি কিছুদিনের মধ্যেই ১৪ দলের একটি সভা ডাকুন, যেখানে আমি অংশ নেব।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে জানান, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ১৪ দলের সভা ডাকা হবে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বলেন, ‘আর হ্যাঁ, ইনু সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চান, তিনি পাঙ্গাস খাবেন নাকি চিতল?’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিদায় নিতেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন প্রধানমন্ত্রী। ওবায়দুল কাদেরের কাছে নির্দেশ গেল ১৪ দলের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করতে হবে। সাধারণ সম্পাদক বার্তা পেলেন দলীয় সভাপতির।
এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফোনে যোগাযোগ করেছেন ইনুর সঙ্গে। ১৪ দলের বৈঠকের কথা জানালেন তাকে। পরক্ষণেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানতে চাইলেন, ‘ইনু ভাই, পাঙ্গাস খাবেন নাকি চিতল?’ সেসময় এ প্রসঙ্গে হাসানুল হক ইনু কোন মন্তব্য করেননি।
তবে পরে রবিবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক উদার। তার কাছে আমি ১৪ দলের নেতাদের মর্যাদা চাই। প্রধানমন্ত্রী ১৪ দলের শরীকদের সম্মান করেন, মর্যাদা দেন। কিন্তু ১৪ দলের অনেক নেতাই অন্য শরীকদের যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন। অনেক শরীকই তার যথাযোগ্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’
হাসানুল হক ইনু আরও বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচনের জোটকে এখন থেকেই তৎপর হতে হবে। টিম ওয়ার্কের মাধ্যমেই নিজেদের অপ্রতিরোধ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পাঙ্গাশ চিতল চাই না, শরীকদের সম্মান চাই।’
এদিকে রবিবার দুপুরে মাদারীপুরের শিবচরে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে কোনো টানাপোড়েন নেই। জাসদসহ মহাজোটের ঐক্য অটুট থাকবে।’
দুপুরে মাদারীপুরের শিবচরে বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনী এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি নূর-ই-আলম চৌধুরী এমপি ও জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার এমপি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে উন্নয়নের ধারা সৃষ্টি হয়েছে। শেখ হাসিনা জঙ্গি, সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দমন করেছেন। এ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে তার নেতৃত্বে মহাজোটের সরকার বারবার দরকার।’
১৪ দলের সমন্বয়ক নাসিম বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্য হয়েছে। জাসদসহ মহাজোটের ঐক্য অটুট থাকবে। জোটে কোনো ধরনের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয় নাই।’
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
ট্রাম্পের হয়ে প্রচারণা চালানো মোদি’র তা ভারতের পররাষ্ট্রনীতির পরিপন্থী
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ডবিস্তারিত পড়ুন
ছাত্রদলের কাউন্সিল: ৮ভোটে হেরে গেলেন কেশবপুরের সেই শ্রাবণ
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিলে সভাপতি পদে মাত্র ৮ ভোটে হেরে গেছেনবিস্তারিত পড়ুন
ছাত্রদলের নতুন সভাপতি খোকন, সম্পাদক শ্যামল
কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নতুন নেতৃত্ব পেল বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল।বিস্তারিত পড়ুন