রুহুল আমিন আটক হওয়ায় সুবিচারে আশাবাদী নুসরাতের পরিবার
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসার মেধাবী ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদ্রাসা কমিটির সহ-সভাপতি রুহুল আমিনকে আটক করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।আলোচিত এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হওয়ার পর থেকেই নানাভাবে অভিযোগের তীর ছিলো তার বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের এ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো স্বয়ং নুসরাতের পরিবারেরও। নুসরাতের পরিবার শুরু থেকেই বলে আসছিলো রুহুল আমিনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্দনেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
অবশেষে পিবিআই রুহুল আমিনকে আটক করায় খুশি নুসরাতের পরিবার, স্বজন ও গ্রামবাসীরা। এমন প্রভাবশালী নেতাকে আটক করায় এ হত্যাকাণ্ডের সুবিচারের আশাবাদী তারা।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে রুহুল আমিনকে আটক করার পর নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বোনের হত্যার সুবিচার পাবো বলে আমরা এখন আশাবাদী’।
প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন- তিনি প্রমাণ করেছেন অপরাধী যে দলেরই হোক না কেন, কোনো ছাড় নেই। অপরাধী যতো শক্তিশালী হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় আসতেই হবে। আশাবাদী নুসরাতের ছোট ভাই রায়হানও।
নুসরাতের বাবা মাওলানা একেএম মুসা মানিক বলেন, বুকের ভেতর দাউ দাউ করছে। আমি শুধু মেয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই।
নুসরাতের বাড়ি সোনাগাজী পৌরশহরের উত্তরচর চান্দিয়া এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, মূলহোতাদের ধরে ফেলেছে পুলিশ। এখন শুধু বিচারের আশা। আশা করা যায় এখন সুবিচার পাওয়া যাবে।
এদিকে, রুহুল আমিন গ্রেফতার হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেছেন সোনাগাজী স্থানীয় কয়েকজন জন প্রতিনিধি। তারা বলেন, সাবেক জামায়াত নেতা সিরাজ উদ-দৌলার মূল খুঁটির জোর ছিলো রুহুল আমিন। তার মদদেই সিরাজ উদ-দৌলা এবং তার সহযোগীরা নুসরাতকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। শুধু সিরাজের সঙ্গে মিলে উপকর্ম নয়। পুরো উপজেলার সব কিছুতেই প্রভাব বিস্তার করতো এ রুহুল আমিন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ফয়জুল কবির বলেন, কাগজে-কলমে আমিই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আমিতো রিজাইন করিনি। আমাকে বাদ দিয়ে কোনো চিঠিও দেওয়া হয়নি। সাবেক সংসদ সদস্য হাজি রহিম উল্লাহকে সিনিয়র সহ-সভাপতি করা হয়েছিল। এরপর তার এবং জেলা কমিটির লোকজনের দাপটে প্রথমে আমি সক্রিয় হতে পারিনি। পরে রুহুল আমিন কিভাবে সভাপতি হয়েছেন তা আমার জানা নেই।’
জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রহমান বিকম বলেন, ‘নুসরাত মৃত্যুর ঘটনায় আমরা শোকাহত। এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় এরইমধ্যে সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর মুকছুদ আলমকে বহিষ্কারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রুহুল আমিনের ব্যাপারেও অনেকে বলছেন। প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিরাজ উদ-দৌলার সঙ্গে রুহুল আমিনের ঘনিষ্ঠতার কথা সোনাগাজীর সবার মুখে মুখে। সিরাজই রুহুল আমিনকে কমিটিতে নেন। তবে নুসরাতের ঘটনা আলোচিত হতে থাকলে ভোল পাল্টিয়ে সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেন রুহুল আমিন।
নুসরাতের পরিবার বলছে, ২৭ মার্চে নুসরাতকে যৌন হয়রানির পর রুহুল আমিনের কথা বলেই সিরাজ উদ-দৌলা তাদের হুমকি দিয়েছিলো। সিরাজ গ্রেফতার হওয়ার পরে তার পক্ষে যারা মানববন্ধন করেছে তাদের ব্যাপারেও কোনো ব্যবস্থা নেননি রুহুল আমিন।
এদিকে, হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া শাহদাত হোসেন শামীম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর তিনি দৌড়ে নিচে নেমে উত্তর দিকের প্রাচীর টপকে বের হয়ে যান। বাইরে গিয়ে মোবাইল ফোনে বিষয়টি রুহুল আমিনকে জানান। প্রত্যুত্তরে রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি জানি। তোমরা চলে যাও।’
রোববার (১৪ এপ্রিল) ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দি দেন গ্রেফতার নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম।
এরপর শুক্রবার অভিযান চালিয়ে রুহুল আমিনকে আটক করে পিবিআই। পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের স্পেশাল পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন বলেন, আমরা রুহুল আমিনকে আটক করেছি এবং তাকে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করছি।
গত ৬ এপ্রিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় মুখোশধারীরা। এর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে তারা চাপ দেয়। ২৭ মার্চ সিরাজের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা হয়েছিল।
দগ্ধ নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে মারা যান নুসরাত।
এ ঘটনায় সোমবার (৮ এপ্রিল) রাতে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ আটজনের নামোল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন অগ্নিদগ্ধ রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।
শ্লীলতাহানির মামলায় আগে থেকেই কারাবন্দি অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা। হত্যা মামলা হওয়ার পর এখন পর্যন্ত এজহারের ৮জন গ্রেফতারসহ মোট ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে। সিরাজ উদদৌলার ‘ঘনিষ্ঠ’ নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, শরীফ ও হাফেজ আবদুল কাদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এই চারজনের স্বীকারোক্তিতেই নুসরাত হত্যার ঘটনায় রুহুল আমিনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে।
বাকি আসামিদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সিরাজ উদদৌলাকে ৭ দিন, আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলমকে ৫ দিন, জাবেদ হোসেন ৭ দিন, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, আবছার উদ্দিন, আরিফুল ইসলাম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, শামীম ও যোবায়ের হোসেনকে ৫ দিন করে রিমান্ড দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক হয়েছে নুসরাতের সহপাঠী মো. শামীম ও জান্নাতুল আফরোজ মনিকে।
এরই মধ্যে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করতে থানায় যাওয়ার পর নুসরাতের ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়ায় ১৫ এপ্রিল সোনাগাজী থানার ওই সময়ের (নুসরাত হত্যার পর প্রত্যাহার) ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করা হয়েছে। এ মামলাও তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
এনামুল-সম্রাটসহ ৪ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ
ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও অবৈধ অর্থ লেনদেনের অভিযোগে সংসদবিস্তারিত পড়ুন
‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। এই আয়নায় সমাজেরবিস্তারিত পড়ুন