রাজপরিবারের ব্যতিক্রমী কিছু বিয়ে
ব্রিটেনের রাজপরিবারের যেসব বিয়ে হয়েছে এ পর্যন্ত তার সবগুলোই যে যথার্থ বা পারফেক্ট দম্পতি ছিল এমনটা বলা যায় না। নানা কারণে বেশ কয়েকটি বিয়ে ইতিহাসে ব্যতিক্রমী বিয়ে হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছে।
রাজপরিবারের বিয়ের যে লম্বা তালিকা রয়েছে তার সর্বশেষ নাম যোগ হতে যাচ্ছে প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মার্কেলের। তবে লম্বা এই তালিকায় রয়েছে বিয়েকে কেন্দ্র করে শিরশ্ছেদের মত ঘটনা। রয়েছে শিশু কনের গল্প, কোটি কোটি দর্শক টিভির সামনে বসে বিয়ে দেখা ইত্যাদি নানা ঘটনা।
দ্যা হোয়াইট ওয়েডিং:
কুইন ভিক্টোরিয়া শুধু ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের সুপরিচিত শাসকদের একজন ছিলেন না, তিনি লক্ষ লক্ষ মানুষ যেভাবে বিয়ে করে সেটা পরিবর্তন করতেও সাহায্য করেছিলেন। তিনি ১৮৪০ সালে প্রিন্স আলবার্টকে বিয়ে করেন। বিয়ের অনুষ্ঠান স্বাভাবিকভাবেই জাঁকজমকপূর্ণ হয়েছিল। কিন্তু ব্যতিক্রমী ছিল কুইন ভিক্টোরিয়ার বিয়ের পোশাক। তিনি সাদা রঙের সিল্ক সাটিনের একটা পোশাক পরেন।
সেই সময়ে এটা ছিল খুব অস্বাভাবিক একটা বিষয়। সেই সময়কার বিয়েতে কনেরা সাধারণত পরতেন বিভিন্ন রঙের গাউন এবং তার ওপরে সোনা অথবা রুপার কাজ করা থাকতো। যদিও রানী ভিক্টোরিয়া প্রথম নারী ছিলেন না যিনি তাঁর বিয়েতে সাদা পোশাক পরেছিলেন কিন্তু তার বিয়ের খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়েছিল। এবং কনেদের মধ্যে সাদা রঙের গাউন পরা একটা ট্রেন্ড বা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছিল।
বিশ্বব্যাপী দর্শক যে বিয়ের:
প্রিন্স উইলিয়াম এবং ক্যাথরিন মিডলটনের বিয়ের অনুষ্ঠান এত মানুষ দেখেছিল যে এমনকি তাদের মেইড অব অনার এবং কনের বোন পিপ্পাও রীতিমত আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়ে যান।
কয়েকটি পত্রিকা এবং ওয়েবসাইটের খবরে বলা হয় দুই বিলিয়ন মানুষ বিশ্বব্যাপী ২০১১ সালের সেই বিয়ের অনুষ্ঠান দেখেছেন। কিন্তু একটা সরাসরি অনুষ্ঠান আসলেই কত মানুষ দেখছে তার সঠিক গণনা করা প্রায় অসম্ভব।
তাই এটা একটা ভুল খবর হতে পারে। ব্রিটিশ সরকারের কালচার, মিডিয়া এবং স্পোর্টস বিভাগ প্রথম ধারণা করেছিল কত দর্শক হতে পারে এই বিয়ের অনুষ্ঠান দেখার জন্য। পরে সেই সংখ্যাটাই বারবার খবরে বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করা হয়। তবে সংখ্যাটা যতই হোক না কেন সেটা অবশ্যই প্রিন্স চার্লস এবং লেডি ডায়ানার বিয়ের দর্শকের চেয়ে বেশি।
রোমান্টিকতার ছোয়া কম এমন বিয়ে:
এখনকার দিনে রাজ পরিবারের বিয়ে হচ্ছে একে অপরের প্রেমে পড়ে, অনেক দিন প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে তারপরে পরিণয়। কিন্তু একটা সময় ছিল যখন বিয়ে হত একটা রাজনীতির হিসাব-নিকাশ বা বন্ধুত্ব তৈরি করার মাধ্যম হিসেবে।
তেমনি এক বিয়ে ছিল কুইন প্রথম মেরি এবং স্পেনের দ্বিতীয় ফিলিপের মধ্যেকার বিয়েটা। দুই দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক প্রভাব বিস্তার এবং ইউরোপে রোমান ক্যাথলিজমকে আরো শক্তিশালী করা ছিল ১৫৫৪ সালের ঐ বিয়ের মূল উদ্দেশ্য।
বিয়ের চার বছর পর মেরি মারা যান, খবর আছে এক বছরের বেশি সময় ফিলিপের সাথে তার দেখা হয়নি। পরে ফিলিপ তার বোনকে পাঠানো একটা চিঠিতে লিখেছিলেন তার মৃত্যুতে আমি যৌক্তিকভাব অনুতপ্ত। তবে সেই চিঠিতে স্ত্রী বিয়োগের কষ্টের কথার চেয়ে ফ্রান্সের সাথে কূটনৈতিক সমঝোতার বিষয়েই বেশি কথা ছিল।
বহুবিবাহ:
ইংল্যান্ডের হেনরি অষ্টম ছিলেন সবচেয়ে বেশি বার বিয়ে করা রাজা। তিনি প্রথম বিয়ে করেন ১৫০৯ সালে। কনে ছিলেন তার মৃত ভাইয়ের স্ত্রী ক্যাথরিন অব অ্যারাগন। তিনি একটা কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার পর তাকে তালাক দেন হেনরি। এরপর বিয়ে করেন অ্যানি বোলিনকে, তিনিও একটা কন্যা সন্তান জন্ম দেন। এদিকে রাজা তখন একটা পুত্র সন্তানের জন্য পাগল প্রায়।
তিনি আবারো বিয়ে করলেন জেন সেইম্যুরকে। এই নারী একটা পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়ার কিছুকাল পরেই মারা যান। হেনরি এরপর বিয়ে করেন অ্যানি অব ক্লিভসকে। এই বিয়েটা ছিল জার্মান প্রোটেস্টান্টদের সমর্থন পাওয়ার আশায়। কিন্তু ছয় মাস পরেই তালাক দেন তাকে।
যখন তিনি ৫০ বছরের কাছাকাছি তখন বিয়ে করেন কিশোরী ক্যাথরিন হাওয়ার্ডকে। দুই বছর পর তাকে শিরশ্ছেদ করে হত্যা করেন। তার সর্বশেষ বিয়ে ছিল ক্যাথরিন মার এর সাথে। এই নারীর সাথে তিনি মৃত্যু অবধি ছিলেন। হেনরি মৃত্যুবরণ করনে ১৫৪৭ সালে।
নারীবাদী বিয়ে:
প্রিন্স চার্লস এর সাথে লেডি ডায়ানা স্পেনসারের বিয়ে নানা কারণে উল্লেখযোগ্য। ১৯৮১ সালের এই বিয়েতে ডায়ানা যে পোশাক পরেছিলেন সেইটি ছিল দৈর্ঘ্যে সবচেয়ে বেশি। বলা হয় এটা সবচেয়ে দামি পোশাকগুলোর মধ্যে একটি ছিল।
একই সাথে এই বিয়েকে প্রথম নারীবাদী বিয়ে হিসেবে দেখা হয়। কারণ কনে বিয়ের সময় তার স্বামীর ‘বাধ্য থাকবে’ এমন যে প্রতিজ্ঞা করতে হয় সেটা তিনি করেন নি।
ডায়ানা প্রিন্স চার্লসের থেকে ১৯৯২ সালে আলাদা হয়ে যান। পরে তিনি জনসম্মুখে প্রিন্স চার্লসকে নিয়ে সমালোচনা করেন। তিনি অন্য পুরুষের সাথে প্রেম করেছেন এটাও স্বীকার করেন। তারা ১৯৯৬ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ করেন। ১৯৯৭ সালে ডায়ানা এক গাড়ী দুর্ঘটনায় মারা যান।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
পাকিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১৯ জনের মৃত্যু
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে শক্তিশালী ৫ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাতে ১৯বিস্তারিত পড়ুন
২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় হিক্কা
ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিক্কা। এর ফলে ঝড়ের পাশাপাশি ভারীবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন