তালায় শালতা নদী নিয়ে পরিকল্পনা সভা ও স্মারকলিপি প্রদান
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় তালা মোবারকপুরস্থ উত্তরণ আইডিআরটি’তে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জলাবদ্ধতা মোকাবেলায় শালতা অববাহিকার জনগণের সমস্যা সমাধানে করণীয় ও প্রস্তাবনা শীর্ষক এক পরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বে-সরকারী সংস্থা উত্তরণ ও পানি কমিটির আয়োজনে উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন খলিলনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সরদার ইমান আলি। সভায় শালতা নদী রক্ষার দিক নির্দেশনা মূলক স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন উত্তরণ পরিচালক শহিদুল ইসলাম। অধ্যাপক হাসেম আলী ফকিরের সঞ্চালনায় সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন উত্তরণ কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সানা। এ সময় শালতা নদী সংশ্লিষ্ট তালা, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা উপজেলার নেতৃবৃন্দ,পানি কমিটির নেতৃবৃন্দ, উত্তরণ কর্মকর্তাব্রন্দ ও স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় ১৬ ও ১৭নং পোল্ডারভুক্ত শালতা অববাহিকার জলাবদ্ধতা ও পরিবেশ সমস্যা মোকাবেলায় জনগণের পরিকল্পনা নিয়ে আগামী ২৩ অক্টোবর হাজরাকাটি বাজার, ২৫ অক্টোবর শেখেরহাট বাজার, ২৮ অক্টোবর খলিলনগর বাজার, ৩০ অক্টোবর তালতলা স্লুইস গেট, ৪ নভেম্বর সুন্দরবুনিয়া বাজার এবং ৫ নভেম্বর হেতাইলবুনিয়া বাজারে জনসভা অনুষ্ঠিত হবার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
এরপূর্বে সকাল ১০ টায় শালতা নদী খননের দাবীতে পানি কমিটির পক্ষ থেকে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ফরিদ হোসেনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এ সময় কেন্দ্রীয় পানি কমিটি নেতা অধ্যাপক হাসেম আলী ফকির, তালা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার আলাউদ্দীন জোয়ার্দ্দার,তালা উপজেলা পানি কমিটির সভাপতি মোঃ ময়নুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান, খলিলনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সরদার ইমান আলি, অধ্যাপক রেজাউল করিম, মোঃ শহিদুল্লাহ, উত্তরণ কর্মকর্তা মোঃ শহিদুল ইসলাম, দিলীপ কুমার সানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শালতা অববাহিকার জলাবদ্ধতা ও পরিবেশ সমস্যা মোকাবেলায় জনগণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত
১৬ ও ১৭নং পোল্ডারভুক্ত শালতা অববাহিকার জলাবদ্ধতা ও পরিবেশ সমস্যা মোকাবেলায় জনগণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) সকালে তালা প্রেসক্লাবে
বে-সরকারী সংস্থা উত্তরণ ও পানি কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তালা উপজেলা পানি কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ময়নুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিগত ৩০-৩৫ বৎসর যাবৎ যশোর-খুলনা-সাতক্ষীরা অঞ্চলে জলাবদ্ধতা সমস্যা অব্যাহত আছে। নদীবক্ষে অতিমাত্রায় পলি জমে এ অঞ্চলের প্রাণদায়িনী নদীগুলো একের পর এক মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে। সমস্যা সমাধানকল্পে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নদী খাল খনন, স্লুুইজগেট সংস্কার, উপকূলীয় বাঁধ মেরামত এবং বিলের মধ্যে জোয়ারাধার বা টিআরএম বাস্তবায়ন। কিন্তু এটি অতীব দুঃখজনক বিষয় যে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য এলাকাতে এ ধরণের কর্মকান্ড বাস্তবায়িত হলেও ১৬ ও ১৭ পোল্ডারভুক্ত শালতা অববাহিকায় এখনও পর্যন্ত অনুরূপ ধরণের কোন পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি।
সরকারি রেকর্ডপত্রে শালতা নদীটিকে পশ্চিম শালতা নামে অভিহিত করা হয়। এ অববাহিকা ১৬ ও ১৭ নং পোল্ডারের আওতাভুক্ত। গোলাপদহ স্লুুইজ গেট থেকে লাঙ্গলমোড়ার ত্রিমোহিনী পর্যন্ত নদীটির দৈর্ঘ্য ১৮ কিমি। অববাহিকার প্রশাসনিক এলাকা হলো-খুলনা জেলাধীন ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরখালী, শোভনা, আটলিয়া ও মাগুরাঘোনা ইউনিয়ন, পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ও হরিঢালী ইউনিয়ন এবং সাতক্ষীরা জেলাধীন তালা উপজেলার তালা সদর, তেঁতুলিয়া ও খলিলনগর ইউনিয়ন। মোট গ্রাম সংখ্যা ৯১টি, জনসংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ এবং এলাকার পরিমাণ ১৪০০০ হেক্টর।
‘উপকূলীয় বাঁধ প্রকল্পের’ আওতায় ১৯৬৭ সালে শালতা ও হাড়িয়া নদীর পশ্চিম পাশে নির্মাণ করা হয় ১৬নং পোল্ডার, ১৯৭১ সালে শালতা নদীর পূর্ব পাশে ১৭/১ পোল্ডার এবং আমতলী ও ঘ্যাংরাইল নদীর পশ্চিম পাশে ১৯৭২ সালে নির্মাণ করা হয় ১৭/২ নং পোল্ডার। এ পোল্ডারগুলো নির্মিত হওয়ার পর বিশেষ করে ঘ্যাংরাইল নদীতে বাঁধ দেওয়ার দরুণ নদীবক্ষে দ্রুত পলি জমে শালতা ও তার সাথে যুক্ত নদীগুলোর অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। ১৭/১ ও ১৭/২ পোল্ডার বিভাজনকারী আমতলী নদী এবং এর নিম্নে বয়ারসিং থেকে বাদুরগাছা মহাশ্মশান পর্যন্ত ঘ্যাংরাইল নদী প্রায় মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। এ দুটি নদীর সাথে শালতা নদীর এখন আর কোন সংযোগ নাই। ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘের শালতা নদীর উপরের অংশ বাটুলতলা স্লুইজগেট থেকে গোলাপদহ স্লুইজগেট পর্যন্ত ৮/৯ কিমি নদী এখন ছোট নালায় পরিণত হয়েছে। অমাবশ্যা পূর্ণিমার শেষ জোয়ার ছাড়া এ অংশে জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে পারে না। নিম্নে শেষ ভাটিতে নদীর গভীরতা মাত্র ২/৩ ফুটে এসে পৌঁছেছে। তালতলার নিম্নে পাইকগাছামুখী হাড়িয়া নদীও শালতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। লাঙ্গলমোড়া ত্রিমোহিনী থেকে শালতা ও ঘ্যাংরাইলের সাথে যুক্ত গুয়াচাপা নদীও মৃত্যুর প্রহর গুনছে। এসব নদী ভরাট হওয়ার সাথে সাথে তা দখলে নেওয়া এবং চলাচলের জন্য নদীর উপর সাঁকো চার নির্মাণ করা প্রভৃতি কারণে নদীর অপমৃত্যু ত্বরান্বিত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, গত শতাব্দীর ৯০ দশক থেকে শালতা অববাহিকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বিগত এক দশক যাবৎ বিশেষ করে অববাহিকার উপরের অংশে জলাবদ্ধতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রতি বৎসর বর্ষা মৌসুমে নীচু বসতি এলাকা প্লাবিত হয়, ভেসে যায় ঘেরভেড়ী, দেখা দেয় বিভিন্ন রোগ ব্যাধির প্রাদুর্ভাব বিশেষ করে কর্মসংস্থান হ্রাস সহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনে নেমে আসে অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্ট এবং চরম ভোগান্তি এমতাবস্থায় বিগত এক দশক যাবৎ অব্যাহত আছে বাস্তচ্যুতির ঘটনা। নদী খাল ভরাট হওয়ার দরুণ একদিকে জলাবদ্ধতার দরুণ কৃষি কাজ যেমন করা যাচ্ছে না, অন্যদিকে মৎস্যঘের ভেসে যাচ্ছে এবং মৎস্যচাষের জন্য নদী থেকে প্রয়োজনীয় জোয়ারের পানি উঠানো সম্ভব হচ্ছে না। মৎস্য ঘেরগুলো অজ্ঞাত রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে এবং চাষাবাদ ব্যয়বহুল হওয়ায় এ খাত এখন ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার কবলে পতিত হয়েছে। তাছাড়া নোনা পানির চিংড়ী চাষাবাদের দরুণ এলাকার গাছপালা, ঘরবাড়ী ও মাটির উর্বরতা শক্তির উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া, গবাদি পশু পালনে সংকট সৃষ্টি, কর্মসংস্থান হ্রাস এবং বিভিন্ন ধরণের সামাজিক ও প্রতিবেশগত সমস্যা লেগেই আছে। সার্বিকভাবে বলা চলে নদ-নদীর নাব্যতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পাওয়ার কারণে মানুষের জীবন জীবিকা, বসবাস এবং পরিবেশগত ভারসাম্য অতিমাত্রায় হুমকীর মুখে পড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এলাকার সমস্যা সমাধানে নদী খনন, নদী সংযোগের মাধ্যমে আন্তঃনদীর নেটওয়ার্ক সৃষ্টি, জোয়ারাধার বা টিআরএম বাস্তবায়ন, অভ্যন্তরীণ খাল উদ্ধার ও খনন, স্লুইজ গেট সংস্কার ও সুষ্ঠু পরিচালনা, মিষ্টিপানির মৎস্য চাষাবাদকে উৎসাহিত করা, পানি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন, উজান সংযোগ ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা প্রণয়ণের দাবী জানানো হয়।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। এই আয়নায় সমাজেরবিস্তারিত পড়ুন
তালায় ইউএনও’র প্রেরণায় গার্লস হাইস্কুলে ডেইলি স্টার কর্নার চালু
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও’র অনুপ্রেরণায় শহীদ আলী আহম্মেদ বালিকাবিস্তারিত পড়ুন