তালায় কৃষকদের নজর কেড়েছে শাহীনুর সুলতানার ভার্মি কম্পোষ্ট প্রকল্প
সাতক্ষীরা তালায় রাসায়নিক সারের ব্যবহার ছেড়ে ভার্মি কম্পোষ্ট (কেঁচো সার) সারের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। রাসায়নিক সারের ক্ষতিকারক দিক বিবেচনায় কৃষকদের মধ্যে সচেতনতার ইতিবাচক দৃষ্টিকোন থেকে উপজেলার তৃণমূলে কৃষকরা এখন ব্যাপকভাবে শুরু করেছেন ভার্মি কম্পোষ্টের ব্যবহার। আর ব্যবহারের উপর নির্ভর করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বানিজ্যিক ভিত্তিতেও শুরু হয়েছে ভার্মির উৎপাদন। সুফলও পাচ্ছেন ভার্মির সাথে সংশ্লিষ্টরা, এমনটাই জানিয়েছেন কৃষকদের পাশাপাশি স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
খাদ্য ছাড়া জীবন অচল। আর পৃথিবীর সকল জীবের খাদ্যের যোগান মেটায় প্রত্যক্ষও পরোক্ষ ভাবে মাটি থেকেই। গঠন অনুসারে পানি,বায়ু,অজৈব/খনিজ ও জৈব এ ৪ টি উপাদানে মাটি গঠিত। আমরা মাটিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগের মাধ্যমে কিছুটা হলেও অজৈব ঘাটতি পূরণ করে থাকি। তবে মাটিতে জৈব উপাদান না দেওয়ায় এর ঘাটতি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় মাটি প্রাণহীন হয়ে পড়বে বলে কৃষি তথ্য আমাদের নিয়মিত জানান দিচ্ছে।
ইতোমধ্যে রাসায়নিক সারের কূফল যেমন ফসলের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি,জমির প্রাকৃতিক গুণাগুণ নষ্ট,মাটির স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করে এর পরিবেশ দূষিত,ফসলের ভাইরাস ও ছত্রাক জণিত নতুন রোগ-জীবাণুর আক্রমণ ও শত্রু পোকার বংশ বিস্তার,উৎপাদিত ফসলে খাদ্য পুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়,মাটির অনু ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা লোপ পায় সহ নানা কূফল তুলে ধরে ভার্মি কম্পোষ্টের উৎপাদকরা লিফলেটও বিতরণ করছেন কৃষকদের মধ্যে।
২০০৯ সালে (এপিজিক) জাতের রেড ওয়ান (অস্ট্রেলিয়া) ও ব্লাব নাইট (অফ্রিকা) এই দু’জাতের কেঁচো বেশ কয়েকবার সংকরায়ন করার পর আবিষ্কার হয় নতুন প্রজাতির বি.এস ওয়ান। এতে চুড়ান্ত সফলতাও আসে। এই কেঁচোকে নির্দিষ্ঠ পরিবেশে গ্যসমুক্ত গোবর খাওয়ালে মল আকারে এক ধরনের সার উৎপন্ন হয়। এই জাতের কেঁচো শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে রস নিঃসরণ করে। এ রস উদ্ভিদেও প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ এবং সারের সাথে মিশে যায়। ফলে উৎপাদিত সারের মান বহুগুণে বেড়ে যায়। আর এই মান সম্পন্ন সারই কম্পোষ্ট বা কেঁচো সার।
কেঁচো সারের উপকারীতা সম্পর্কে জানাযায়,মাটির জৈব শক্তি বৃদ্ধি পায় ও পিএইচ মান সঠিক মাত্রায় থাকে। মাটির প্রকৃত গুণাগুন রক্ষা করে,মাটির পানির ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ফলে ফসলে পানি সেচ কম লাগে,তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে,মাটিকে ঝুরঝুরে করে ও বায়ু চলাচল বৃদ্ধি করে,উদ্ভিদেও শেকড়ের মাধ্যমে শোষণ ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে,বীজের অঙ্করোধগম শক্তি বৃদ্ধি করে ও গাছকে সুস্থ-সবল রাখে,প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে এতে কৃষকের চাষ খরচ অনেক কম হয়,ফসলের ফলন বৃদ্ধি ও পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করে।
কৃষি তথ্যানুযায়ী জানা যায়,মাছ চাষের জন্য পুকুর বা ঘেরে কেঁচো সার প্রয়োগ করলে রাসায়নিক সার ও অন্য খাবার সামান্য ব্যবহারেই কম খরচে অতি দ্রুত বৃদ্ধি ও সু-স্বাদু মাছ উৎপাদন করে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। কারণ হিসেবে জানা যায়,এ সার পানিতে জু-প্লাংকটন ও ফাইটোপ্লাংকটন তৈরীতে সহায়তা করে। ফলে মাটির গাদকে খাদ্যে পরিণত করে। তাছাড়া ভার্মি কম্পোষ্ট কেঁচো সার নিজেও একটা খাবার।
কম্পোষ্টের ব্যবহার বিধি সম্পর্কে এর অন্যতম উদ্যোক্তা ও উৎপাদক মোড়ল আব্দুল মালেক জানান, ২০১২ সালে চাকুরী থেকে অবসরের পর নিজ উদ্যোগে প্রথমে বাড়ীতেই শুরু করেন,কম্পোষ্ট উৎপাদন। প্রথমত নিজের জমিতে প্রয়োগ শুরুর পর সফলতা পাওয়ায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে কৃষক সচেতনতার পাশাপাশি এর ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ শুরু করেন। এরপর তার কন্যা শাহিনুর সুলতানা (শীলা) তালার বে-সরকারী সাহায্য অর্থায়নে শুরু করেন বানিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন কার্যক্রম। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। শুধু সামনের দিকেই এগিয়ে চলা। প্রথমত ১৮ টি বেড় বা নান্দা দিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও এখন ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ১৩০ টি বেড বা নান্দায় উৎপাদিত হচ্ছে ভার্মিষ্ট বা কেঁচো কম্পোষ্ট সার।
তালা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শুভ্রাংশু শেখর দাশ জানান, মাটির ভৌত এবং জৈব গুনাবলি উন্নতি করনের জন্য কম্পোষ্ট সারের গুরুত্ব অপরিসীম। উপজেলায় কৃষি দপ্তারের আওতায় স্থাপিত ভার্মি কম্পোষ্ট প্রদর্শনী সমুহের মাধ্যমে উপকৃত হয়ে স্থানীয় কৃষকরা নিজ উদ্যোগে ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদনে আগ্রহী হয়েছে। ভার্মিষ্ট বা কেঁচো কম্পোষ্ট উপজেলায় বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সরকারের পাশাপাশি এনজিও ভিত্তিক বা বানিজ্যিকভাবেও কৃষক সচেতনতায় এর প্রদর্শণী ও সুফলতা সম্পর্কে জানান দেওয়া হচ্ছে। এরফলে রাসায়নিক সারের ব্যবহারও কমেছে বহুলাংশে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। এই আয়নায় সমাজেরবিস্তারিত পড়ুন
তালায় ইউএনও’র প্রেরণায় গার্লস হাইস্কুলে ডেইলি স্টার কর্নার চালু
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও’র অনুপ্রেরণায় শহীদ আলী আহম্মেদ বালিকাবিস্তারিত পড়ুন