টানা বৃষ্টিতে দেবহাটার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার অশংঙ্কা, রাস্তাঘাট বেহাল দশায়
সাতক্ষীরার দেবহাটায় কয়দিনের টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে। বৃষ্টির পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে নিষ্কাশণ ব্যবস্থা না থাকায় প্লাবিত হওয়ার অশংঙ্কা বিরাজ করছে। বিভিন্ন শাখা খালগুলোতে পলি জমার পাশাপশি ব্যক্তি দখলের পরিণত হওয়ায় প্লাবিত হওয়ার অশংঙ্কা বিরাজমান। অন্যদিকে গ্রামগুলোর পানি নিষ্কাষণের স্থানগুলোতে ভেড়ি দিয়ে মৎস্য ঘের তৈরী করায় বিভিন্ন গ্রামের মানুষ পানি বন্ধী হতে বসেছে।
টানা বৃষ্টিতে দেবহাটার বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ব্যাপক জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া এলাকায় পানি নিষ্কাশণের ব্যবস্থা না থাকায় ফসলি জমিগুলোতে পানি জমে বর্ষা মৌসুমে ধানের বীজতলা পানিতে ডুবে যাওয়া সহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছে কৃষকরা। অপরদিকে মৎস্য ঘেরগুলো বর্তমানে পানি কানায় কানায়, যদি জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পায় তাহলে মৎস্য ঘের প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন মৎস্য ঘের মালিক সহ এলাকাবাসি। এছাড়া এই টানা বৃষ্টি সাথে সাথে নালা নরদামা ড্রেন এবং খালের নালাগুলো নেট-পাটার মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টির কারণে বদরতলা, সুবর্ণাবাদ, নাজিরেরঘের, টিকেট, হিরেরচক, শ্যামনগর, গোবরাখালী, হালদার বাড়ী, শসাডাঙ্গা, আন্দুলপোতা, পারুলিয়া, কুলিয়া, খেজুরবাড়িয়া, সখিপুর, চিনেডাঙ্গা, কোঁড়া, পাঁচপোতা, নারকেলী, দেবহাটা, বসন্তপুর, সুশিলগাতী, নওয়াপাড়া, নাংলাসহ আশপাশের এলাকাগুলোর খাল-বিলে এবং সড়কগুলো পানি জমে থাকায় জনভোগান্তির পাশাপাশি ব্যপক ক্ষয়-ক্ষতির অশংঙ্কা বিরাজ করছে।
এদিকে টানা বৃষ্টির কারণে সাধারণ মানুষ ঘর ছেড়ে কর্মস্থলে সঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারছেন না। এতে করে বিপাকে পড়ছেন সাধারণ খেটে খাওয়া দিনমুজুর পরিবারগুলো। কর্মস্থলে পৌঁছালেও কর্মহীন থাকতে হচ্ছে তাদের। অন্যদিকে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল-কলেজে পৌঁছাতে পারছেনা সঠিক সময়ে। অন্যদিকে টানা বৃষ্টির কারণে হাট-বাজার গুলোতে আসতে পারছে না ক্রেতা-বিক্রেতারা। ইতোমধ্যে উপজেলার ধানের মিল ও ইটের ভাটাগুলোর কর্মকান্ড সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বিরামহীন বর্ষায় আকাশ বন্যা হাজার হাজার মানুষ পানি বন্দীতে জনজীবন বিপন্ন ও অর্থনীতির বিপর্যয় বিরাজ করছে। বিরামহীন বর্ষা অবশেষে বন্যার রূপ নিয়েছে। যান চলাচল, কর্মচাঞ্চল্য সব এলাকা জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত হয়েছে। গত তিন-চার দিনের অবিরাম বৃষ্টিপাতের কারনে সড়কের বহু অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত না হলেও এক-দুদিনের মধ্যে প্লাবিত হবে বলে জানাগেছে। কোন কোন এলাকায় পানি নিষ্কাষণ ব্যবস্থা না থাকায় ঘরের মধ্যে পানি প্রবেশ করেছে। রান্না ঘরের চুলায় পানি উঠে রান্নাবান্নায় ব্যাঘাত ঘটছে। গরীব-অসহায় পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে।
দেবহাটা বিরামহীন বর্ষার কারন হেতু আকাশ বন্যার কবলে শত শত চিংড়ী ঘের এবং বিভিন্ন ধরনের সাদা প্রজাতির মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায়। ঘেরের ভেড়ি পানি ছুই ছুই ভাব। ডুবতে বাকি মাত্র সেন্টিমিটার। ডুবে গেলে কোটি কোটি টাকার চিংড়ীসহ বিভিন্ন মাছ পানিতে ভেসে যাবে বলে জানিয়েছেন ঈদগা বাজার সংলগ্ন জুইকুড়া বিলের মৎস্যঘের ব্যবসায়ী মহিদুল ইসলাম(মন্টু)। সেই সাথে উপজেলার হাজার হাজার মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তবে গত কয়েকদিনে সুর্যের আলো এক বারের জন্যেও উঁকি মারেনি। অঝোর ধারায় বর্ষাই কেবল তার আগমন এবং অবস্থান জানান দিয়ে গেছে। জনদূর্ভোগ, জনদূর্যোগ বৈরী আবহাওয়া এবং অতি বৃষ্টি একাকার হয়ে ভিন্ন প্রকৃতির অসহায় এক জীবন যাত্রার প্রতিকৃতি জনমানুষের সঙ্গী হয়। বিরামহীন বৃষ্টি জনজীবনকে কেবল দূর্ভোগে নেয়নি, জনজীবনে এক ধরনের উদ্বেগ, শঙ্কা আর আতঙ্ক ভর করে। কয়দিনে বিভিন্ন বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট খোলেনি। কিছু কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উন্মুক্ত থাকলেও ক্রেতা সাধারনের উপস্থিতি ছিল সামান্য। তবে কয়েকটি দোকানে রেইন কোট, ছাতা, নেট, পলিথিন বিক্রি ছিল বিশেষ লক্ষ্যনীয়। অবিরাম বর্ষায় আকাশ বন্যার প্রভাবে চাষাবাদে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় অধিকাংশ বীজতলা পানিতে ডুবে যেয়ে ক্ষতির পরিমান সীমাহীন হয়ে দাড়িয়েছে। অধিকাংশ বীজতলা পানিতে ভেসে গেছে। কাঁচাঘর বাড়ী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
এদিকে টানা বৃৃষ্টিতে মৎস্যঘেরর ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বদরুজ্জামানা কাছে জানতে চাইলে বলেন, উপজেলায় বাগদা ও গলদা চিংড়ির ৭৭৯৪টি ঘের আছে এবং ৩৭টি সরকারি খাল রয়েছে। তবে মৎস্য ঘের প্লাবিত যাতে না হয় সে জন্য সরকারি খালগুলোর দখল মুক্ত করা হবে। একই সাথে খালগুলো থেকে নেট-পাটা খুব দ্রুত অপসারণ করে উন্মুক্ত করা হবে।
বৃষ্টিতে কৃষির বিপর্যয়ের বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জসিমউদ্দীন জানান, লাগাতর বৃষ্টিতে কৃষির ক্ষয়-ক্ষতির নির্দিষ্ট কোন তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে বৃষ্টির ক্ষয়-ক্ষতিতে কৃষকরা সরকারি সহায়তার সুযোগ নেই কেননা এটি প্রকৃতির সৃষ্টি। তবে দুর্যোগে যাতে কৃষক ক্ষতির সম্মুখিন না হয় সে ব্যপারে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এক কথায় আকাশ বন্যার প্রভাবে জেলার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দীর পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি। অবিলম্বে পানি নিস্কাষণ না হলে প্লাবিত হয়ে জনভোগান্তির পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। এই আয়নায় সমাজেরবিস্তারিত পড়ুন
সাতক্ষীরা জেলা ব্যাপী গ্রেফতার ১৩, ইয়াবা-ফেন্সিডিল-গাঁজা উদ্ধার
সাতক্ষীরা জেলা ব্যাপী পুলিশের মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযানে মাদক মামলারবিস্তারিত পড়ুন