ঝিকরগাছার পাঁচপোতায় সেতু নির্মাণের সপ্তাহখানেক পর ফাটল!!
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার ৮নং নির্বাসখোলা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বেড়ারুপানি গ্রামের বেতনা নদীর উপর নতুন সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ব্রীজটির নির্মাণে এলাকার প্রায় দশ-বার হাজার মানুষ স্বাধীনতার পর তথা দীর্ঘদিনের স্বপ্নের সেতুর স্বপ্ন পুরণের আশায় বুক বেঁধেছে। এলাকার মানুষের সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে যেতে বসেছে। গত সপ্তাহে সেতুটির স্ল্যাব ঢালাই দেওয়ার পরের দিন সকালে বাঁশের রেলিং খুলতেই ভয়াবহ মাঝ বরাবর ফাটল দেখা দেয়। স্ল্যাবের মধ্যের রড পর্যন্ত বের হয়ে পড়েছে। সেতুটি নির্মাণের সপ্তাহ খানেকের মধ্যে এই ফাটল ধরায় যে কোন মুহুর্তে ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করছে সাধারণ মানুষ।
ঝিকরগাছা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) অফিস সূত্রে জানা যায়, সেতু নির্মাণের জন্য জন-প্রতিনিধি বা স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে আবেদনের পর সেতু নির্মাণের জন্য যাচাই-বাছাই করা হয়। যাচাই-বাছাই শেষে প্রকল্পের বিপরীতে সেতুটির নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় ঝিকরগাছা উপজেলার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স শিমুলী এন্টারপ্রাইজ। যার প্রোপাইটর হলেন জাহিদুর রহমান জাহিদ। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গ্রামীণ রাস্তায় কমবেশী ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু/কালভার্ট নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প-২০১৮/১৯ আওতায় মির্জাপুর-পাঁচপোতা রাস্তার বাজারের নিকট বেতনা নদীর উপর ৪০ফুট দৈর্ঘ্যরে ও ২০ফুট চওড়া সেতু। উপজেলার নির্বাসখোলা ইউনিয়নের বেড়ারুপানিতে নির্মাণাধীন সেতুটির প্রকল্পিত ব্যয় ৩০লাখ ৭৭হাজার ৬শত ৫৬টাকা ১০ পয়সা। গত ২০১৮ সনের ৮ই অক্টোবর যার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কীত স্থায়ী কমিটির সদস্য ৮৬, যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড: মনিরুল ইসলাম মনির।
সরেজমিনে নির্মাণাধীন সেতুটি পর্যবেক্ষণে গেলে স্থানীয়রা বলেন, ৫ সেফটি পাথর ও ৭ সেফটি বালি ও ১বস্তা সিমেন্টের মিশ্রণে রাত্রে ঢালাই দিয়েছে। এই সেতুর সমস্ত ঢালাইয়ের কাজ চুরি করে রাতের অন্ধকারে করা হয়েছে। কাজ সব ২ নাম্বারী হয়েছে। কোন প্রকার কুষ্টিয়ার বালী, ভাল মানের খোয়া ও পরিমানমত রড ছাড়ায় চলছে কাজ। যেসব ভিটবালি ঢালাইয়ে চলেনা সেইসব ভিটবালি দিয়ে ঢালাই দেওয়া হয়েছে। বেতনায় পানি আসার আগেই সেতুটি ঠিক করে দিতে হবে। সেতুটির আমরা ভাল চাই এবং আমরা যেন ভালভাবে চলাচল করতে পারি। আমাদের জোর দাবি ব্রীজটি ভেঙ্গে যেন আবার নতুন করে হয়। আগামী ২ মাসের মধ্যে এগুলো ঠিক করতে হবে, না হলে পানিতে ভরে যাবে। ১৬মিলি ও ১২মিলি রড দিয়ে স্ল্যাব ঢালাই দিয়েছে এবং কিউরিং মোটেও করেনি।
শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এই সেতুর জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সাধনা করে আসছি। বর্তমান সরকার এলাকার জনগনের চলাচলের সুবিধার্থে সেতুটি নির্মানের অনুমতি দেয়। কিন্তু নির্মানে সঠিক মাত্রায় খোয়া-বালি-রড না দেওয়ায় এলাকার লোকজন অভিযোগ দিয়েছে। ১০ কড়াই খোয়া, ১০ কড়াই বালি ও ১ কড়াই সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই দিয়েছে। এলাকার লোকজন এই বিষয়টা নিয়ে কয়েকবার নির্মান কাজে প্রদান করে। কিন্তু ঠিকাদার বলেছে সেতু টিকলে হলেতো। সেন্টারিং এর তক্তা খুলে নিলেই ব্রীজটি ঝুলে গেছে। এর ফলে মাঝখানে ফাটল দেখা দিয়েছে। আমাদের দাবি ব্রীজটি নতুন করে তৈরী করে দিতে হবে। আমাদের ৫ গ্রামের লোকজন এই পথে চলাচল করি।
ঝিকরগাছা উপজেলার ৮নং নির্বাসখোলা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বেড়ারুপানি গ্রামের ইউপি সদস্য শেখ আয়নাল হোসেন বলেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) বায়েজিদ সাহেব সেতু নির্মাণের শুরু থেকে বতর্মান পর্যন্ত পুরোটাই তদারকি করেছেন এবং এই কাজের বর্তমান অবস্থার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনিও সমান ভাবে দায়ী। সেতু নির্মাণের আগে এখানে বাঁশের সাঁকো ছিল, প্রয়োজনে আমাদের আবারও বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে পার হতে হবে। আমরা এলাকার লোকজনের একটা গণস্বাক্ষর ইতিমধ্যেই শুরু করেছি। জনস্বার্থে ঝুঁকিপূর্ণ এই প্রাণঘাতী সেতু ভেঙে পুণরায় নতুন করে পাইলিং ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এবং মজবুত করে সেতুটি নির্মাণের জন্য দেশরতœ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের যশোর জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদের বহুদিনের প্রাণের দাবিটির প্রতি নজর দেন। পাশাপাশি সেতু নির্মাণের নামে যারা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা করতে চেয়েছে সে বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিনীত প্রার্থনা করছি।
এ ব্যাপারে ঝিকরগাছা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবু আব্দুল্লাহ বায়েজিদ’র নিকট মুঠোফোনে সেতুটি নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ফোনে সব কথা বলাত সম্ভব না। সরাসরি সাক্ষাতে আসেন বসে কথা বলবো। এখন আমি ব্যস্ত এবং বাহিরে আছি বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।এর পর থেকে তিনি আর ফোনটি রিসিভ করেননি।
সেতুর মধ্য বরাবর আড়াআড়ি ফাটল দেখে ভয়াবহ বিপদের আশঙ্কা করেছে এলাকার সর্বশ্রেনীর মানুষ। সেতুটি নির্মাণের শুরু থেকেই বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্ণীতি ও নানান কারসাজির মধ্য দিয়ে চলতে থাকায় তা পুণ:নির্মাণের জন্য জোর দাবি জানান এলাকাবাসী।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
বেনাপোলে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর বৈঠক বর্জন করলো সাংবাদিকরা
বেনাপোল স্থলবন্দর আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের দ্বিতীয়তলায় নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও স্থলবিস্তারিত পড়ুন
ঝিকরগাছায় বাস চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী শিশুসহ দু’জন নিহত
যশোরে বাস চাপায় এক শিশু ও এক মোটসাইকেল আরোহীর মৃত্যুবিস্তারিত পড়ুন