খেজুর গাছ ভাটায় পুড়েছে, নলেন পাটালির সাধ নিতে পারছে না অনেকেই
এই নিজাম বাড়ি আছিস নাকি ? নলেন পাটালি আছে নাকি ? মেয়েটা দু’বছর খেজুর পাটালির সাধ নিতে পারেনি। অন্তত কেজি খানেক খেজুর গুড় দে, মেয়েটার জন্য পাঠায় ! নিজাম গাছি চোখ মুছতে মুছতে ঘরের বাইরে এলেও গুড় দিতে পারেনি গ্রামের মোড়লের হাতে।
কারন একটায় খেজুর গাছের বড়ই অভাব। খেজুর গাছ মাঠ থেকে প্রায় সাবাড় হয়ে গেছে। যা পুড়েছে ইটের ভাটায়। বাকি কিছুটা থাকলেও তা রসের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়ে ওঠেনা।
অবহেলায় বড় হওয়া খেজুর গাছ নলেন গুড়ের জোগান দাতা। ইট ভাটার আগুন জ্বালাতে প্রয়োজন হয় খেজুর গাছের। তাই খেজুর রস জোগানোর মত গাছ আর থাকছে না। ফলে খেজুর গাছ ভাটায় পোড়ার ফলে নলেন পাটালির সাধ নিতে পারছে না কেউ।
মাত্র কয়েক বছর আগেও শার্শার দক্ষিন বুরুজ বাগান গ্রামের মাঠে হাজারে হাজারে খেজুর গাছ ছিল। রাস্তা প্রসস্ত ও জমির আইল সঙ্কুচিত হওয়ার কারনে এখানকার মাঠ থেকে সে সব গাছ প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অবশ্য কাশিয়াডাঙ্গ, জিরেনগাছা, মাটিপুকুর, খোড়া তলা, মম্বন্ধকাঠি, খাজুরা গ্রামের বেশ কিছু এলাকায় এখনো খেজুর গাছের দেখা মেলে। এখনো এ এলাকাই নলেন গুড়ের গ্রান কেন্দ্র বলে ধারনা করা হয়। এখান থেকেও প্রায় ৫৫ভাগ খেজুর গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। গুড় প্রস্ততকারক নিজাম বলেন “এলাকার মানুষকে খেজুর গাছ কাটতে দেখেন, কিন্ত কাউকে একটা গাছ লাগাতে দেখেন না”।
যশোর জেলার শার্শা উপজেলার কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, এক দিকে খেজুর গাছের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে, অন্য দিকে রস সংগ্রহের পেশাতেও লোকজন আগ্রহ দেখাচ্ছে কম। এখন আর যশোরের শার্শা থেকে দেশের কোথাও খেজুর গুড় রপ্তানী হচ্ছে না। নিজেদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান মাটিপুকুর গ্রামের গাছি শামছুর রহমান। তিনি আরো বলেন, বাপ-দাদার আমলে শত শত খেজুর গাছ ছিল আগান বাগানে। গুড়-পাটালি তৈরী করে বাজারে বিক্রি করেছি। এখন সেখান থেকে বাগান ছাফ করে চাষাবাদ করা হচ্ছে। এখন পোলা পানেরা কাজ করে না। ভোর বেলা খেজুর গাছে উঠে রস পাড়ার কথা ওরা ভাবতেই পারে না।
এক সময় শুধু নিজের জন্য ৮০/৯০টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতেন বুরুজ বাগান গ্রামের ছাম ছদ্দিন মোড়ল। কিন্ত এখন ৩০টিতে পৌচেছে। তিনি বলেন, গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা খুব একটা সহজ নয়। তাই আমাদের বংশধররা এ কাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
বুরুজ বাগান গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গাছ থাকলে তো রস সংগ্রহ করব। গাছের অভাবে ৫বছর ধরে রস সংগ্রহ করা বন্ধ করে দিয়েছি। এখন অন্যের ক্ষেতে কাজ করে সংসার চালাই।
এদিকে সরকারি বৃক্ষরোপন কর্মসুচিতে খেজুর গাছের চারা বিতরন করলেও রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে বড় হবার আগেই সে গুলি মারা যায়।
আলহাজ এরশাদ আলী মোড়ল বলেন, খেজুর রস ও গুড়ের চাহিদা ব্যাপক রয়েছে। ভাটা গুলিতে খেজুর গাছ পোড়ানো বন্ধ করতে হবে। খেজুর গাছ লাগিয়ে গুড় ও পাটালির চাহিদা মেটানো সম্ভব। গেজুর গাছ না লাগালে অদুর ভবিষ্যতে গুড় ও রস পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। জমির আইলে ফাকা করে খেুজুর গাছ লাগালে ক্ষতির চেয়ে লাভটাই বেশি হবে বলে আমি মনে করি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
বেনাপোলে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর বৈঠক বর্জন করলো সাংবাদিকরা
বেনাপোল স্থলবন্দর আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের দ্বিতীয়তলায় নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও স্থলবিস্তারিত পড়ুন
ঝিকরগাছায় বাস চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী শিশুসহ দু’জন নিহত
যশোরে বাস চাপায় এক শিশু ও এক মোটসাইকেল আরোহীর মৃত্যুবিস্তারিত পড়ুন