কুমিল্লার ১৫ ইউপি নির্বাচনে আজ ভোটগ্রহণ
আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লার চারটি উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ধানের শীষ প্রতীক ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা আতঙ্কে রয়েছেন।
তাঁদের ভাষ্য, অতীতের মতো এই নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে নির্বাচন চলাকালে যেকোনো সময় কেন্দ্র দখলের মাধ্যমে কেড়ে নিতে পারে নির্বাচনের কাঙ্ক্ষিত ফল। যদিও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি নির্বাচন কিছুটা হলেও সাহস দিচ্ছে ভয়ে থাকা ধানের শীষ প্রতীক ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীদের।
এদিকে, নির্বাচনকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নগুলোর ভোটারদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের শঙ্কা বিরাজ করছে। কারণ নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালানোর সময় ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে বিভিন্ন পদের প্রার্থীদের মধ্যে একাধিকবার হামলা, সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটেছে। ফলে ১৫টি ইউনিয়নের ১৪০টি কেন্দ্র নিয়ে প্রার্থীদের সঙ্গে ভোটারদের মাঝেও বাড়ছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। তবে চারটি উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের সবগুলো কেন্দ্রকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার কুমিল্লার জেলার চারটি উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে সাধারণ নির্বাচন ও চারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এসব ইউনিয়নগুলোতে রয়েছে একাধিক চেয়ারম্যান, মেম্বার ও নারী মেম্বার প্রার্থী। ১৫টি ইউনিয়নে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের বাইরে রয়েছেন একাধিক স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী।
জেলার লাকসাম উপজেলার তিনটি, নাঙ্গলকোট উপজেলার আটটি, লালমাই উপজেলার একটি ও দাউদকান্দি উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে মোট ৬৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়াই করছেন।
জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার আদ্রা উত্তর ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন একমাত্র নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুবা আক্তার। গতকাল বুধবার দুপুরে নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাহবুবা আক্তার বলেন, ‘ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার আমার প্রচার-প্রচারণায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুরো ইউনিয়নে এখনো সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ দেখছি না। কারণ আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তাজুল ইসলাম ইতিমধ্যে কেন্দ্র দখলের চেষ্টা শুরু করেছেন। তিনি বিভিন্ন এলাকা থেকে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের এনে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে মজুদ রেখেছেন কেন্দ্র দখলের জন্য। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে আমরা শঙ্কায় রয়েছি। ‘
তবে এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থীর এসব অভিযোগ মোটেও সত্য নয়। ‘ বৃহস্পতিবার সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে দাবি করেন তিনি।
একই উপজেলার আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়নে চশমা প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মাস্টার মো. সাইফুল্লাহ বলেন, ‘নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নির্বাচন চলাকালে যেকোনো সময় কেন্দ্র দখলে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে খবর পেয়েছি। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে আমি নিজেই শঙ্কিত। আর ভোটাররাতো তাদের ভোট দেওয়া নিয়ে আরো বেশি শঙ্কায় রয়েছে। তবে এইটুকু বলতে পারি যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে জনগণ আমাকে তাদের রায় দেবেন। ‘
লাকসামের মুদাফ্ফরগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নে ধানের শীষ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. শাহ আলম গতকাল দুপুরে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত থেকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ভরে রেখেছেন। এসব সন্ত্রাসীরা অস্ত্র, বোমাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এসেছে। আজ সকাল (গতকাল বুধবার) থেকে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে মহড়া দিচ্ছে ওই সন্ত্রাসীরা। আর এসব সন্ত্রাসী দিয়ে কেন্দ্র দখলের চক্রান্ত করছেন নৌকার প্রার্থী। ‘
বিষয়গুলো প্রশাসনকে বার বার জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। এর আগে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকেরা আমার ওপর এবং আমার আপন ভাইসহ নেতাকর্মীদের ওপর বেশ কয়েকবার সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। আমার গাড়ি ভাঙচুর করেছে। কিন্তু থানায় গেলে পুলিশ মামলা পর্যন্ত নেয়নি। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ দেখছি না। ‘
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ওই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. শাহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। কোনো বহিরাগত লোক বা সন্ত্রাসী আমি আনিনি। ‘
এদিকে, নির্বাচন প্রসঙ্গে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মো.শাহ আবিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, নাঙ্গলকোট ও লাকসামের কয়েকটি ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন কিছু সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা আমাদের নজরে এসেছে। সেই লক্ষ্যে আমরা সবগুলো ইউনিয়নকে এখন থেকে গুরুত্ব দিচ্ছি। নির্বাচনকে শঙ্কা মুক্ত রেখে ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে জেলার চারটি উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের নির্বাচনী মাঠে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ১২০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে।
এ ছাড়া নির্বাচনকে সুষ্ঠু এবং পুলিশকে সহযোগিতা করতে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ১৫ প্লাটুন বিজিবি, ১৫ প্লাটুন র্যাব, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আনসার ভিডিপির বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন থাকবে।
কুমিল্লা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম জানান, জেলার ১৫টি ইউনিয়নে সাধারণ নির্বাচন ও চারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া এ নির্বাচনের প্রতিটি কেন্দ্রকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে বলে জানান তিনি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
ট্রাম্পের হয়ে প্রচারণা চালানো মোদি’র তা ভারতের পররাষ্ট্রনীতির পরিপন্থী
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ডবিস্তারিত পড়ুন
ছাত্রদলের কাউন্সিল: ৮ভোটে হেরে গেলেন কেশবপুরের সেই শ্রাবণ
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিলে সভাপতি পদে মাত্র ৮ ভোটে হেরে গেছেনবিস্তারিত পড়ুন
ছাত্রদলের নতুন সভাপতি খোকন, সম্পাদক শ্যামল
কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নতুন নেতৃত্ব পেল বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল।বিস্তারিত পড়ুন