এবার বাংলাদেশেও ভাঙল প্রচলিত নিয়ম, যাত্রী নিয়ে বিয়ে করতে বরের বাড়িতে কনে!
এবার বাংলাদেশেও ভাঙল প্রচলিত নিয়ম, যাত্রী নিয়ে বিয়ে করতে বরের বাড়িতে কনে!
বিয়ের অনুষ্ঠানে কনের বাড়িতে আগে যান বরযাত্রী। এটাই প্রচলিত নিয়ম। সম্প্রতি এই নিয়ম ভেঙে দিয়ে আলোচনায় আসেন ভারতের একজন তরুণী।
এবার ভারতে নয়, বাংলাদেশেও ঘটল এমন ঘটনা।
প্রচলিত নিয়ম ভেঙে বিয়ে করতে যাত্রী নিয়ে বরের বাড়িতে হাজির হলেন কনে!
শনিবার এমন ঘটনা ঘটেছে মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভার চৌগাছা গ্রামে।
বিষয়টি নিয়ে এলাকায় মুখরোচক গল্প শোনা গেলেও কেউ কেউ এ ঘটনাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
কনে চুয়াডাঙ্গার হাজরাহাটি গ্রামের কামরুজ্জামানের মেয়ে খাদিজা আক্তার খুশি কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজে স্নাতকের শিক্ষার্থী এবং বর গাংনী উপজেলার চৌগাছার কমরেড আব্দুল মাবুদের ছেলে তরিকুল ইসলাম জয় একজন ব্যবসায়ী।
বিয়ে করতে সাধারণত যাত্রী নিয়ে কনের বাড়িতে যান বর। এই প্রথাও ভেঙে দিলেন মেহেরপুরের ছেলে আর চুয়াডাঙ্গার তরুণী। বর পক্ষের লোকজন অনাড়ম্বর পরিবেশে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজন করেছেন কনে যাত্রীর জন্য। কনে যাত্রীকে বরণ করতে বরণ ডালা সাজিয়ে অপেক্ষমান বরপক্ষ। গাড়িতে করে লাল টুকটুকে বেনারশী আর বাহারি সাজে বধূ সেজে বরের বাড়িতে গিয়ে বিয়ে করলেন তরুণী। এই ব্যতিক্রমি ও আলোচিত বিয়ের ঘটনাটি ঘটে শনিবার মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চৌগাছা গ্রামে। সেখানে কনে পক্ষের শতাধিক যাত্রীর সঙ্গে বরপক্ষের তিন শতাধিক আমন্ত্রিত অতিথি ছিলো। এই বিয়ে দেখতে হাজির হয়েছিলেন সহস্রাধিক উৎসুক নারী-পুরুষ।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার দুপুরে ৭টি মাইক্রোবাস ও ৩০টি মোটরসাইকেল বহর নিয়ে কনে এসে নামেন বরের বাড়ির গেটের সামনে। বিয়ের বহর গেটের কাছে আসতেই অন্যরকম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বাড়ির গেটের সামনে মাইক্রোবাস থেকে নামলেন লাল বেনারসি শাড়ি পরা কনে। এসময় কনেকে ফুল ও মিষ্টি মুখ করিয়ে বরণ করে নেন বরপক্ষ।
এরপর শুরু হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা।
ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী একজন মাওলানা তাদের দু’জনকে কবুল পড়ান। প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিয়ের রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করান স্থানীয় কাজী। এরপর বর পক্ষের দাওয়াতী আত্মীয় স্বজন ও কনে যাত্রীদের ভুড়িভোজ করানো হয়।
বিকালে বর তরিকুল ইসলাম জয়কে নিয়ে কনে খাদিজা আক্তার খুশি চলে যান তার বাবার বাড়িতে। সেখানে কয়েকদিন কাটানোর পর কনেকে সঙ্গে নিয়ে বর ফিরে আসবেন নিজের বাড়িতে।
নিজের বিয়ের এমন আয়োজন সম্পর্কে কনে খাদিজা আক্তার খুশি বলেন, নারী-পুরুষের সমান অধিকার হিসেবে একজন মেয়ে একজন ছেলেকে বিয়ে করতে তার বাড়িতে যেতে পারেন, তা কখনও বাস্তবায়ন হয়নি। সেই বাধার বৃত্ত ভেঙে আমরা শুরু করেছি। আশা করছি আরও অনেকেই এখন এটি করবেন।
বিয়ের আয়োজন প্রসঙ্গে বরের বাবা কমরেড আব্দুল মাবুদ গণমাধ্যমকে বলেন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের অনেক কিছুই করার আছে। মুখে আমরা বললেও তা বাস্তবায়ন করছি কতটুকু? তাই আমি এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টি সামনে আনতে চেয়েছি।
বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরোর সদস্য আব্দুল মাবুদ ওই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, নারী পুরুষের যে বৈষম্য আমাদের সমাজে রয়েছে সেটা দূর হবে যদি এমনভাবে বিয়ে হয়। তাছাড়া বিয়ে বাড়িতে এতদিন যে কনে পক্ষের একটা বিশাল খরচ হয়ে আসত সেটা দূর হবে। আগেকার বিয়ের রীতি ভেঙে এখানে যে ব্যতিক্রমী বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে তাকে আমি সাধুবাদ জানাই।
বর-কনের স্বজনরা জানান- পাত্রী চুয়াডাঙ্গার কামারুজ্জামানের মেয়ে খাদিজা আক্তার খুশি। তিনি বাড়ির ছোট মেয়ে। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। সাজানো গাড়ি নিয়ে প্রথা ভেঙে অভিভাবকদের সম্মতিতে বরের বাড়িতে খুশি মনে বিয়ে করতে যান খুশি। একই গাড়িতে ছিলেন কনের বান্ধবী ও বোনেরা। আর কনে বসে ছিলেন গাড়ির সামনে। গাড়িতে বাজানো হচ্ছিলো বিয়ের গান।
শুধু বর-কনে নয়; বিয়ের এমন সিদ্ধান্তে সম্মতি ছিল উভয় পরিবারের।
এ বিষয়ে কনে খুশি বলেন- সনাতন পদ্ধতির বিলুপ্তি আর নারীদের সমতা প্রতিষ্ঠায় আমার ইচ্ছাতেই পরিবারের এমন সিদ্ধান্ত। যৌতুক প্রথা বিলুপ্ত আর নারী অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতেই এমন ব্যতিক্রম সিন্ধান্ত। তাছাড়া ইচ্ছে ছিলো বিয়ে করতে হলে ভিন্নধর্মী বিয়ে করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন তিনি।
যৌতুকহীন এই বিয়ে প্রসঙ্গ কনের পিতা কামরুজ্জামান বলেন- ছেলে-মেয়েদের সমঅধিকার বাস্তবায়নেই আমরা অভিভাবকেরা এমন সিদ্ধান্ত নিই। সিদ্ধান্ত অনুসারেই মেয়েকে ছেলের বাড়িতে এনে বিয়ের আয়োজন করি।
এই বিয়ের পাত্র চৌগাছা গ্রামের আবদুল মাবুদের ছেলে তরিকুল ইসলাম জয়। পাত্রের বাবা আবদুল মাবুদও অভিন্নসুরে জানান- ব্যতিক্রম সবসমই চমকের। প্রথা ভাঙ্গতেই এমন আয়োজন। আগামীতে যাতে মেয়েরাও ছেলেদের বাড়ি এসে বিয়ে করতে উৎসাহী হয় তার জন্য এমন বিয়ের একটি ইতিহাস গড়তে চেয়েছিলাম। সফল হতে পেরে ভালো লাগছে।
এই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর-২ গাংনী আসনের সাবেক এমপি মকবুল হোসেন, কথাসাহিত্যিক রফিকুর রশীদ, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য নুর আহমেদ বকুল প্রমুখ।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
এনামুল-সম্রাটসহ ৪ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ
ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও অবৈধ অর্থ লেনদেনের অভিযোগে সংসদবিস্তারিত পড়ুন
‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। এই আয়নায় সমাজেরবিস্তারিত পড়ুন