আশুরার রোজার ইতিহাস
রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোজার ফরজ বিধান রহিত হয়ে তা নফল হয়।
প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা:) যখন হিজরত করে মদিনায় গেলেন তখন তিনি দেখলেন, ইহুদিরা এই দিনে রোজা পালন করছে, রাসূল (সা:) কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বলল, এই দিনে আমাদের নবী হজরত মুসা (আ:) জালেম ফিরাউনের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। তাই আমাদের নবী মুসা (আ:) আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ের জন্য এ দিন রোজা পালন করতেন। এ জন্য আমাদের নবীর অনুসরণ করে আমরা এই দিনে রোজা পালন করি। তখন রাসূল (সা:) বললেন ‘আমরাই বেশি হকদার মুসা (আ:) এর সঙ্গে সুসম্পর্কের’। তারপর তিনি সাহাবাদেরকেও এ দিনের রোজা রাখার নির্দেশ দেন।
হাদিসের আলোকে আশুরার রোজা:
হজরত আয়েশা (রা:) বলেন, ‘জাহেল যুগে এই দিন কুরাইশরা রোজা পালন করতেন। রাসূল (সা:) এদিন রোজা নিজে রেখেছেন এবং সাহাবীদের রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোজাকে ইচ্ছাধীন করে দিয়েছেন।’ (বুখারী ১৮৯৮, তিরমিজী ৭৫৩)
হজরত আয়শা (রা.) আরো বলেন, ‘রাসূল (সা.)-কে আমি দেখিনি কোনো দিনের রোজাকে অন্য দিনের তুলনায় এতটা গুরুত্ব দিতে, আশুরার দিন আর রমজান ব্যতীত’।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।’ (সহীহ বুখারী ১/২১৮)
অন্য হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহ তায়ালা অতীতের এক বছরের (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।’ (সহীহ মুসলিম ১/৩৬৭; জামে তিরমিযী ১/১৫৮)
আশুরার রোজার নিয়ম:
আশুরার রোজা সম্পর্কে এক হাদিসে এসেছে যে, ‘তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং ইহুদিদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে আশুরার আগে বা পরে আরো একদিন রোজা রাখ।’ (মুসনাদে আহমদ ১/২৪১)
ইবনে আব্বাস (রা.) একবার বললেন, হে আল্লাহর নবী! এ দিনটিকে ইহুদিরা সমীহ পূর্বক রোজা রাখে। আমাদের রোজাও তাদের সদৃশ হয়ে যায়। রাসূল (সা.) বললেন, যদি আমি আগামী বছর জীবিত থাকি, তবে নবম তারিখটিকেও দশমের সঙ্গে মিলিয়ে রোজা রাখব, ইনশাআল্লাহ’! পরের বৎসরটি আর আসেনি রাসূল (সা.) এর জীবনে।
আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ইহুদিরা আশুরার একদিন রোজা রাখত। তাদের সঙ্গে সাদৃশ্য না হয় সে দিকে খেয়াল রেখে আশুরার পূর্বের দিন ৯ তারিখ বা পরের দিন ১১ তারিখ অতিরিক্ত একটি রোজা রাখা উত্তম।
ওলামায়ে কেরাম এই ক্ষেত্রে চারটি ধারা বলেছেন। কেউ কেউ বলেছেন সর্বোত্তম হলো নয় এবং দশ তারিখ রোজা রাখা। দ্বিতীয় ধাপে বলেছেন ১০ এবং ১১। তৃতীয় ধাপে বলেছেন ৯, ১০, ১১ এই তিনদিন একাধারে এবং চতুর্থ ধাপে বলেছেন সমস্যা থাকলে শুধু ১০ তারিখ রোজা রাখতে। কারণ রাসূল (সা.) ৯ এবং ১০ তারিখ রোজা রাখার আকাঙ্খা ব্যক্ত করেছেন। এজন্য অনেকেই বলছেন যে ৯, ১০ তারিখে রোজা রাখাই উত্তম। কেউ যদি নয় তারিখ রাখতে ব্যর্থ হন, সে ১০, ১১ রাখবেন বা শুধু ১০ তারিখেও মহররমের রোজা রাখতে পারবেন।
আশুরার রোজা ও ইহুদি সম্প্রদায়:
মুসলিম শরিফে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত- ‘মহানবী (সা.) যখন আশুরার দিনে রোজা রাখেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দেন, তখন সাহাবিরা অবাক হয়ে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইহুদি-নাসারারা তো এই দিনটিকে বড়দিন মনে করে। (আমরা যদি এই দিনে রোজা রাখি, তাহলে তো তাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য হবে। তাদের প্রশ্নের উত্তরে রাসূল (সা.) বললেন, ‘তারা যেহেতু এদিন একটি রোজা পালন করে) আগামী বছর ইনশাআল্লাহ আমরা এই ১০ তারিখের সঙ্গে ৯ তারিখ মিলিয়ে দুই দিন রোজা পালন করবো। (মুসলিম: ১১৩৪)
মহররম মাসে রোজা রাখার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর মাস মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ।’ (মুসলিম: ২/৩৬৮; জামে তিরমিজি: ১/১৫৭)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি রাসূল (সা.)-কে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি, অন্য সময় তা দেখিনি। (বুখারি: ১/২১৮)
হজরত আলী (রা.)-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল, রমজানের পর আর কোন মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এই প্রশ্ন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট জনৈক সাহাবি করেছিলেন, তখন আমি তার কাছে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসূল (সা.) বললেন, ‘রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তবে মহররম মাসে রাখো। কারণ, এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তায়ালা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।’ (জামে তিরমিজি: ১/১৫৭)
আশুরার রোজা সম্পর্কে এক হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা আশুরার রোজা রাখো এবং ইহুদিদের সাদৃশ্য ত্যাগ করো; আশুরার আগে বা পরে আরো একদিন রোজা রাখো।’ (মুসনাদে আহমদ: ১/২৪১)
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
এনামুল-সম্রাটসহ ৪ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ
ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও অবৈধ অর্থ লেনদেনের অভিযোগে সংসদবিস্তারিত পড়ুন
‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। এই আয়নায় সমাজেরবিস্তারিত পড়ুন