আশাশুনি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুল এক অন্যান্য দৃষ্টান্ত
আশাশুনির বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুল আশাশুনি বাসির আশার আলো জুগিয়েছে। সমাজের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছেলে-মেয়েদের অবস্থার দিক চিন্তা করে আশাশুনিতে প্রতিষ্ঠিত হয় আশাশুনি প্রতিবন্ধী স্কুল। স্বাভাবিকদের নিয়ে লেখাপড়া কিংবা চাহিদা মত শিক্ষা-প্রশিক্ষণের অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। অভিভাবকরাও তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে নানা ভাবে কাজ করে থাকেন। কিন্তু প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়া শেখানো এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও মাতৃস্নেহে সেবাদানের মাধ্যমে আচরণ পরিবর্তন ও স্বাভাবিকীকরণের জন্য প্রযোজন হয় কোন একটা মাধ্যম।
সরকার যখন এই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষকে নিয়ে ভাবছেন। ঠিক তখন আশাশুনির মত অবহেলিত ও অনুন্নত এলাকায় প্রতিবন্ধী স্কুল প্রতিষ্ঠিত হওয়া আমাদের জন্য অনেক কিছু পাওয়ার মত। আশাশুনি সদরে ২০০৪ সালে একেবারেই সাধারণ ভাবে এবং কিছুটা অলক্ষে গড়ে ওঠে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুল। বে- সরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘সোপান’ কাজটি শুরু করে। ২/৫ জন প্রতিবন্ধী শিশুকে নিয়ে যাত্রা। আজকে সেই স্কুলটি মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমানে ভর্তিকৃত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৩৭ জন। যার মধ্যে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় হতে ৩৩ জন উপবৃত্তি পেয়ে থাকে। ছাত্রছাত্রীর ধরণ- শ্রবণ প্রতিবন্ধী, বাক, দৃষ্টি, শারিরীক, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। আশাশুনি সদর, শোভনালী, বুধহাটা, বড়দল ও চাম্পাফুল ইউনিয়ন থেকে শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে থাকে। শিক্ষক কর্মচারী ২৬ জন। ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল ড্রেস ও স্কুল ভ্যান রয়েছে। স্কুলে রয়েছে স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ। উপযোগি টয়লেট ব্যবস্থা। পাঠ্য পুস্তকের পাঠ দানের পাশাপাশি কারিগরি প্রশিক্ষণ, সেলাই, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, নৃত্য, সঙ্গীত, কবিতা আবৃত্তি, ইশারা শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। আচরণ পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য শিক্ষাকেও গুরুত্ব সহকারে প্রদান করা হয়ে থাকে।
সোদকনা গ্রামের অভিভাবক তাছলিমা আক্তার জানান, তার কন্য লিমার বয়স ৮ বছর। স্কুলে আসার পর সে এখন বাংলা, ইংরেজি, অংক লিখতে পড়তে শিখেছে। ইশারা শিক্ষাও শিখছে। কবিতা আবৃত্তি করতে পারে। অভ্যাসগত পরিবর্তনও হয়েছে। আমি নিয়মিত স্কুলে এসে থাকি। তার ব্যাপারে আমরা সন্তুষ্ট।
আরেকজন অভিভাবক কপ্পুর তরফদার জানান, তার পুতনী অর্পিতার বয়ন ৮/৯ বছর। অনেক কিছু শিখেছে। আগে ব্রাশ করতো না কিন্তু এখন সে নিয়মিত ব্রাশ করে। সকাল হলে স্কুলে আসার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠে। তার উন্নতিতে আমি সন্তুষ্ট।
শিক্ষক কাকলী বালা বাইন জানান, বাড়িতে জরিপ করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। ৫টি ভ্যান ব্যবহার করে প্রতিদির বাড়ি থেকে শিক্ষার্থীদের আনা নেওয়া করা হয়। ফ্রি ড্রেস, টিফিনের ব্যবস্থা, মাতৃ¯েœহে পড়ালেখার পাশাপাশি সকল প্রকার সেবা দেয়া হয়ে থাকে। প্রসাব-পায়খানার কাজও আমরা স্বযতেœ করিয়ে থাকি। সকল শিক্ষা পৃথক পৃথক কক্ষে পৃথক ও উপযুক্ত পরিবেশে করানো হয়ে থাকে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর আচরণ পরিবর্তন হয়েছে। পোষাক-পরিচ্ছদ, নোক কাটা, দাঁত ব্রাশ, স্কুল কক্ষ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, নিয়ম কানুন মেনে চলতে আগ্রহ সৃষ্টি করা হয়েছে। বাড়িতে তারা অনেকের দারা কষ্ট পেয়ে থাকতে পারে কিন্তু স্কুলে সেটি পাওয়া থেকে তারা সুরক্ষিত থাকে।
ভ্যান চালক হাফিজুল বলেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের ভ্যানে চড়িয়ে, সন্তান ও বন্ধুর মত ব্যবহার করে স্কুল আনা এবং নেওয়া করতে পেরে নিজেদেরকে ধন্য মনে করি।
স্কুলটি সরকারি নিবন্ধন ভুক্ত হয়েছে। নিবন্ধন নং ৫৩৭/২০০৪। বর্তমানে এলাকায় সাড়া জাগিয়ে দিয়েছে স্কুলটি। এবং স্কুলটিতে এখনো অনেক কিছুর ঘাটতি রয়েছে। সরকারি অনুমোদন পেলেও স্কুলটিকে সুন্দর ও যথাযথ ভাবে পরিচালনার জন্য থেরাপি সেন্টার, হুইল চেয়ার, ক্রেস্ট, প্রজেক্টর, আধুনিক সুযোগ সুবিধার জন্য আরও কক্ষ ও আধুনিক সরঞ্জামাদি সরবরাহ, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করা যেত। শিক্ষক-কর্মচারী, ভ্যান চালকরা সঠিক দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হলেও তারা সরকারি বেতন ভুক্ত না হওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এজন্য সরকারি-বেসরকারি সকল সহযোগিতা প্রয়োজন। একীভূত শিক্ষার আওতায় এনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কারিকুলাম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠু পরিচালনার সুযোগ দানে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ও সকলের সহযোগিতা দাবী করেছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, অভিভাবক এবং সচেতন সমাজের প্রতিনিধিরা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। এই আয়নায় সমাজেরবিস্তারিত পড়ুন
আশাশুনিতে পূর্বের বিয়ের তথ্য গোপন করে আবারো অন্যত্র বিয়ে দেয়ার অভিযোগ!
সাতক্ষীরার আশাশুনিতে পূর্ববর্তী বিয়ের তথ্য গোপন করে অধিক লাভ ওবিস্তারিত পড়ুন