আবারো নাশকতার পরিকল্পনায় জামায়াত-শিবির!
ঢাকাসহ আশপাশের শহরে বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট সম্প্রতি তাদের অনুসন্ধান ও গোয়েন্দা রিপোর্টে এ ধরনের তথ্য পেয়েছে।
সিটিটিসি সূত্র দাবি করছে, স্বাধীনতাবিরোধী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্যরা এ হামলার পরিকল্পনা করছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায়, চলতি বছর তিনটি একে-২২ অস্ত্রসহ মোট ৭৫টি বোমা তৈরির ডেটনেটর উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলো দিয়ে ঢাকা বা এর আশপাশের জেলায় হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল জামায়াতের একটি গ্রুপ।
সম্প্রতি ওয়ারী থেকে একে-টুয়েন্টি টু (একে-২২) নামের একটি যুদ্ধাস্ত্রসহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানের নেতৃত্বদানকারী পুলিশের সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের (এসএজি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘একে-২২ একটি সেমি-অটোম্যাটিক অস্ত্র। এ অস্ত্র দিয়েই ২০১৬ সালে হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। বাংলাদেশের কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ অস্ত্র ব্যবহার করে না। এছাড়া আমরা এখন পর্যন্ত এ অস্ত্রের সঙ্গে কোনো জঙ্গি সংশ্লিষ্টতাও পাইনি। গ্রেফতার হওয়া একজনের নাম শহীদুল ইসলাম মজুমদার, আরেকজন সুরুজ মিয়া। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা জামায়াত-শিবিরের সদস্য।
সিটিটিসি ও একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, জামায়াত-শিবিরের দু’জন বড় নেতার এ অস্ত্রগুলো কেনার কথা ছিল। তারা হচ্ছেন- মো. হাসিব ও কাজী গোলাম কিবরিয়া। হাসিব কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার মো. লিলু মিয়ার ছেলে। আর কাজী গোলাম কিবরিয়া কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তারা অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাস্থলের আশপাশেই ছিলেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যান। এছাড়া ঘটনাস্থলে চট্টগ্রামের বেলাল উদ্দিন ও সাদেক আহমেদ নামে আরও দু’জন উপস্থিত ছিলেন। তারাও পালিয়ে যান।
সূত্র জানায়, অস্ত্রের মূল ক্রেতা ছিলেন জামায়াতের ক্যাডার হাসিব ও জামায়াত নেতা কিবরিয়া। তাদের হয়ে অস্ত্রগুলো নিতে এসেছিলেন সাদেক ও বাবুল।
পুলিশের অপরাধ ডাটাবেজের তথ্য অনুযায়ী, হাসিব ইসলামী ছাত্রশিবিরের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক সংসদ সদস্য (কুমিল্লা-১২) সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের বডিগার্ডও ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার অভিযোগে ২০১৩ সালে তাকে গ্রেফতার করেছিল র্যাব। এছাড়া ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত সরকারের আমলে চাঁদাবাজি ও লুটপাটের অভিযোগেও কারাগারে গিয়েছিলেন তিনি।
হাসিবের বিরুদ্ধে বোমা হামলা ও বোমা তৈরির সাতটি মামলা রয়েছে। এছাড়া একবার বোমা তৈরির সময় সেটি বিস্ফোরিত হয়ে তার হাতের পাঁচ আঙুল উড়ে যায়। বর্তমানে তিনি দু’জন বডিগার্ড নিয়ে চলাফেরা করেন।
গোয়েন্দা সংস্থার সন্দেহ, জামায়াত-শিবিরের সদস্যরা গোপনে সংগঠিত হয়ে এসব অস্ত্র দিয়ে নাশকতা চালাতে পারে। মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের শীর্ষ পাঁচ নেতার ফাঁসির প্রতিশোধ নিতে তাদের নীতিনির্ধারকরা এমন হামলার পরিকল্পনা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হোতারা প্রকাশ্যে মাঠে না নামলেও তাদের সিগন্যাল পেয়েই অস্ত্র সংগ্রহ করছে মাঠপর্যায়ের কর্মীরা।
একে-২২ অস্ত্রটি রাশিয়ার তৈরি। এর ওজন প্রায় সাড়ে চার কেজি। বাংলাদেশে এর দাম প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা।
এ বিষয়ে এডিসি জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এ ধরনের ভারী অস্ত্র বাংলাদেশের সাধারণ অপরাধীরা কখনও ব্যবহার করে না, এমনকি কোনো রাজনৈতিক দাঙায়ও এ অস্ত্র ব্যবহার হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। একমাত্র সরকারবিরোধী সহিংসতা ও জঙ্গি হামলায় এগুলোর ব্যবহার হয়েছে। এটি একটি সেমি অটোম্যাটিক অস্ত্র। যে কেউ এটি দিয়ে সিঙ্গেল শট অথবা ব্রাশ ফায়ার করতে পারে।’
উদ্ধার হওয়া অস্ত্রটির গায়ে ‘মেড ইন চায়না’ লেখা থাকলেও এটি সত্যি চায়নার কি-না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভারত কিংবা মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে এটি বাংলাদেশে আনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘যারা অস্ত্র ও বিস্ফোরক দেশে আনার চেষ্টা করছে, দেশে নাশকতার পরিকল্পনা করছে, তাদের বিষয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ব্যবসায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত আছে।’
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, শিবিরের সদস্যরা আফগানিস্তান ও দক্ষিণ এশীয়ার দেশগুলোর জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের জঙ্গিদের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা যাতে বড় নাশকতা না করতে পারে সেদিকে নজর দেয়া হচ্ছে।
অস্ত্রের ক্রেতা হাসিব সৈয়দ আব্দুলাহ মোহাম্মদ তাহেরের বডিগার্ড ছিলেন। ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে একটি যাত্রীবাহী বাস পোড়ানো এবং আটজন নিহতের ঘটনায় তাহেরের বিরুদ্ধে দুটি মামলায় হয়। সে বছরের মার্চে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। চলতি বছরের ২৯ জুন তাহের কারাগার থেকে মুক্ত হন। অস্ত্র সংগ্রহের ঘটনায় তার কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
সূত্র : জাগো নিউজ।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
ট্রাম্পের হয়ে প্রচারণা চালানো মোদি’র তা ভারতের পররাষ্ট্রনীতির পরিপন্থী
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ডবিস্তারিত পড়ুন
ছাত্রদলের কাউন্সিল: ৮ভোটে হেরে গেলেন কেশবপুরের সেই শ্রাবণ
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিলে সভাপতি পদে মাত্র ৮ ভোটে হেরে গেছেনবিস্তারিত পড়ুন
ছাত্রদলের নতুন সভাপতি খোকন, সম্পাদক শ্যামল
কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নতুন নেতৃত্ব পেল বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল।বিস্তারিত পড়ুন